শিরোনাম দেখে অবাক হবেননা পাঠক, আমরা আজ এমনি একটি গল্পের আলোকপাত করার চেষ্টা করছি।
বাড়ি ঘরের কিছু নাই, তা জেনেছিলাম আগেই। কিন্তু এমন ঘুঘু চড়ানো ভিটে দেখবো, তা ভাবিনি।
আমাদের দেখা বিগত সর্বশেষ প্রজন্মের Veteran Communist বরুণ রায়ের বাড়ি। বাংলাদেশের হাওড় অঞ্চল সুনামগঞ্জ জেলার জামালগঞ্জ থানার বেহেলি গ্রামে।
বরুণ রায় নামে পরিচিত। আসল নাম প্রসূনকান্তি রায়।
আশেপাশের বাড়িগুলো তাঁদেরই জ্ঞাতি গোষ্ঠি, খুড়তোতো জ্যাঠতুতো ভাইদের।
সেগুলো আছে এখনো, বসবাসও করছেন। এই ভিটেটাই শুধু ফাঁকা।
শুধু বরুণ রায়ের বাড়ি নয়, এটি ১৬৪৯ থেকে চলে আসা সুপ্রাচীন এক জমিদার পরিবারের বাড়ি।
পূর্বপুরুষ তিলকরাম সনদ পেয়েছিলেন দিল্লির সম্রাট শাহজাহানের কাছ থেকে। সে থেকে শুরু জমিদারীর।
কিন্তু স্মরণকাল পর্যন্ত এই পরিবারের আচরণ ছিলো নিতান্তই ‘অজমিদার’ সুলভ।
তাঁর পিতা করুণাসিন্ধু রায়ের আমল থেকেই প্রায় বিচ্ছিন্ন জমিদারী থেকে।
কৃষক নানকার আন্দোলনের মতো জমিদার বিরোধী আন্দোলনে জড়িয়ে যায় এই ঐতিহাসিক জমিদার বাড়ি।
এতে শত্রুতে পরিণত হয়েছিলো আশেপাশের সব জমিদারদের, শ্রীহট্ট প্রজাস্বত্ব আইন সংশোধনী বিল উত্থাপনের কারণে।
জমিদারী বিচ্ছিন্ন বেহেলির এই জমিদার করুণাসিন্ধু রায় ছিলেন আসাম গণপরিষদের সদস্য।
সে হিসাবে বিলটি তিনি উত্থাপন করেন ১৯৩৮ সালে।
করুণাসিন্ধু রায় মারা যান ১৯৪৯ সালে।
তাও স্বাভাবিক মৃত্যু বলা যায় না। আত্মগোপনে ছিলেন পুলিশের হাত এড়াতে। সেই অবস্থায় তিনি মারা যান বিনা চিকিৎসায়। পুত্র বরুণ রায়ও ছিলেন তখন কারাগারে।
করুণাসিন্ধু রায়ের পিতা কৈলাস চন্দ্র রায়। দলিলে কাগজে জমিদার হলেও পেশায় ছিলেন শিলং এডুকেশন বোর্ডের সরকারী কর্মকর্তা। সেই সূত্রে থাকতেনও শিলং এ।
শিলং-এ ১৯০১ সালে তাঁর বাড়িতে আতিথ্য নিয়েছিলেন স্বামী বিবেকানন্দ।
অবসরের পর থাকার জন্য শিলং ছেড়ে চলেও আসেন বেহেলীতে, মারাও যান হাওরের মাঝে, এখানকার এক হাওরে নৌকাডুবি-তে।
প্রসঙ্গত জানাই সুনামগঞ্জ বুলচান্দ হাই স্কুল থেকে মেট্রিক পরীক্ষা দেয়া আমার পিতাও সার্টিফিকেট পেয়েছিলেন শিলং এডুকেশন বোর্ডের।
যে বরুণ রায়ের কথা দিয়ে শুরু, তাঁরও পাকিস্তান আমলের দীর্ঘদিন কাটে কারাবাসে। স্বাধীন বাংলাদেশ আমলেও কারাবন্দী হন ১৯৮০ সালে।
১৯৮৬ সালে সাংসদ নির্বাচিত হন স্বাধীন বাংলাদেশে। কিন্তু এই পরিচিতি বিশেষ গুরুত্ব বহন করে না বরুণ রায়ের জন্য। সেই নির্বাচনে তিনি নির্বাচিত হন নৌকা প্রতীকে।
এই সেই সাংসদের, শত শত বছর ধরে চলে আসা জমিদারীর জমিদার পরিবারের পারিবারিক ভিটা।
লেখক: প্রকৌশলী তপন রায় জামালগঞ্জ এর কৃতি সন্তান।
©rising bengal