গত বছরের শুরু থেকেই উত্তেজনা সৃষ্টি হয়েছে চিন সীমান্তে। তারপরে দুই দেশের সেনাকর্তারা আট দফায় আলোচনায় বসেছেন। তাতে বিশেষ লাভ হয়নি। গত বৃহস্পতিবার চিন জানাল, দুই দেশের কম্যান্ডাররা যাতে নবম বারের মতো আলোচনায় বসতে পারেন, সেজন্য কথাবার্তা চলছে। এই শীতেও লাদাখ সীমান্তে বিপুল সংখ্যক সেনা মোতায়েন রেখেছে ভারত ও চিন। চিনের প্রতিরক্ষা মন্ত্রকের মুখপাত্র কর্নেল তান কেফেই জানিয়েছেন, দুই দেশই যাতে সেনা সরিয়ে আনতে পারে, সেজন্য চেষ্টা হচ্ছে।
চিনের মুখপাত্রের মতে, লাদাখ সীমান্তে পরিস্থিতি স্থিতিশীল রয়েছে। চিন সেনাবাহিনী ও কূটনৈতিক স্তরে ভারতের সঙ্গে যোগাযোগ রেখে চলেছে। চিনের আশা, ভারতও ইতিপূর্বে কোর কম্যান্ডার স্তরের বৈঠকে যে সিদ্ধান্ত হয়েছে, তা মেনে চলবে।
গত ১৮ ডিসেম্বর ভারত ও চিনের মধ্যে বিদেশমন্ত্রক স্তরে বৈঠক হয়। দু’পক্ষই স্থির করে, সীমান্তে সেনা সরিয়ে আনা হবে। সেজন্য দুই দেশের সেনাবাহিনী স্তরে আলোচনা হবে শীঘ্র। লাদাখ সীমান্তে উত্তেজনার মধ্যেই চিনের প্রেসিডেন্ট শি জিনপিং গত ১৯ ডিসেম্বর সেনাবাহিনীর পশ্চিমাঞ্চলের জন্য নতুন সেনাকর্তা নিয়োগ করেন। তাঁর নাম ঝাং শুডোং। লাদাখে ভারত সীমান্তে মোতায়েন চিনা সৈনিকরা রয়েছে তাঁরই অধীনে।
গত ডিসেম্বরের মাঝামাঝি জানা যে, চিন সীমান্তে ১৫ দিন তীব্র যুদ্ধ চালানোর জন্য অস্ত্রশস্ত্র ও গোলাবারুদ জমা করছে ভারতীয় সেনা। এর আগে চিন ও পাকিস্তানের সঙ্গে দু’টি ফ্রন্টে যুদ্ধ চালানোর জন্য ১০ দিনের উপযোগী অস্ত্র ও গোলাবারুদ জড়ো করেছিল সেনাবাহিনী। একটি সূত্রে খবর, চিন সীমান্তে উত্তেজনার প্রেক্ষিতে ভারত সরকার ৫০ হাজার কোটি টাকার অস্ত্র ও যুদ্ধের অন্যান্য সরঞ্জাম কিনতে পারে।
বহু আগে সীমান্তে ৪০ দিন যুদ্ধ চালানোর উপযোগী অস্ত্রশস্ত্র ও গোলাবারুদ জমা করে রাখা হত। পরে যুদ্ধের চরিত্র বদলে যায়। তখন ১০ দিনের উপযোগী অস্ত্র ও গোলাবারুদ সঞ্চয় করে রাখা হতে থাকে। সেই সময় সেনাবাহিনী, নৌবাহিনী ও বিমান বাহিনীর প্রধানরা ১০০ কোটি টাকার অস্ত্র ও অন্যান্য সরঞ্জাম কিনতে পারতেন। কিন্তু উরিতে পাকিস্তানের হামলার পরে তৎকালীন প্রতিরক্ষামন্ত্রী মনোহর পরিকর তিন বাহিনীর প্রধানদের ৫০০ কোটি টাকার অস্ত্র ও সরঞ্জাম কেনার অধিকার দেন।
এর মধ্যে জানা যায়, উত্তর-পূর্ব ভারতের কয়েকটি জঙ্গি গোষ্ঠীকে সমর্থন করছে চিন। অক্টোবরের মাঝামাঝি চার মোস্ট ওয়ান্টেড জঙ্গি নেতা চিনের কুনমিং শহরে ছিলেন বলে জানা গিয়েছে। তাঁরা চিন থেকে অস্ত্রশস্ত্র আনতে গিয়েছিলেন।
গোয়েন্দা সূত্রে খবর, মায়ানমারের দু’টি জঙ্গি সংগঠন ইউনাইটেড ওয়া স্টেট আর্মি এবং আরাকান আর্মি উত্তরপূর্ব ভারতের জঙ্গিদের সাহায্য করছে। চলতি বছরেই তাদের সন্ত্রাসবাদী সংগঠন বলে ঘোষণা করা হয়েছে। তাদের মাধ্যমেই উত্তর পূর্ব ভারতের জঙ্গিদের অস্ত্রশস্ত্র পাঠাচ্ছে চিন। গত অক্টোবরে কুনমিং-এ যে জঙ্গি নেতারা গিয়েছিলেন, তাঁদের সঙ্গে চিনের সেনাবাহিনীর এক অবসরপ্রাপ্ত অফিসার দেখা করেন। কীভাবে জঙ্গিদের অস্ত্র সরবরাহের নেটওয়ার্ক তৈরি করা যাবে, তা নিয়ে আলোচনা হয়। সেই বৈঠকে কয়েকজন মিডলম্যানও উপস্থিত ছিল।
চিন থেকে অবশ্য জঙ্গিদের সাহায্য করার অভিযোগ অস্বীকার করা হয়েছে। চিনের বিদেশ মন্ত্রক বলেছে, তারা অন্য দেশের অভ্যন্তরীণ ব্যাপারে হস্তক্ষেপ করে না। তাছাড়া কোনও জঙ্গি গোষ্ঠীকে অস্ত্র সরবরাহের প্রশ্নই নেই।
ভারতের গোয়েন্দা অফিসাররা জানিয়েছেন, গত সেপ্টেম্বর মাস থেকে মায়ানমার সীমান্তে নাগা জঙ্গিদের তৎপরতা খুব বেড়ে গিয়েছে। গত ২৮ সেপ্টেম্বর জঙ্গিদের জন্য বিপুল পরিমাণ অস্ত্রশস্ত্র ও গোলাবারুদ আনা হচ্ছিল। বিএসএফ সেই প্রচেষ্টা ব্যর্থ করে দেয়।