আজ ২৭ শে ফেব্রুয়ারী‚ গোধরা গণহত্যার বর্ষপূর্তি। আজ থেকে ঠিক ২১ বছর আগে গুজরাটের গোধরা রেলওয়ে স্টেশনের কাছে সবরমতি এক্সপ্রেসের ভিতরে অযোধ্যা থেকে ফিরে আসা ৫৯ জন করসেবককে আগুনে পুড়িয়ে হত্যা করা হয়।
এইসব করসেবকরা পূর্ণাহুতি মহাযজ্ঞ নামক একটি অনুষ্ঠানে অংশ নিতে গুজরাট থেকে অযোধ্যায় গিয়েছিলেন। সেখান থেকে ২৫ তারিখ তীর্থযাত্রী এবং করসেবক মিলিয়ে মোট ১৭০০ জন‚ আমেদাবাদের উদ্দেশ্যে রওনা দেয়। ২৭ শে ফেব্রুয়ারী ট্রেনটি গোধরা প্লাটফর্মে প্রায় ৪ ঘন্টা দেরীতে সকাল ৭ টা ৪৩ মিনিটে পৌঁছায়। ট্রেনটি প্ল্যাটফর্ম ছেড়ে যেতে শুরু করলে কেউ জরুরি ব্রেক টানে ফলে ট্রেনটি সিগন্যাল পয়েন্টের কাছে থেমে যায়। পরবর্তীতে চালকের থেকে জানা যায় যে‚ বেশ কয়েকবার চেন টানা হয়েছিল।
এরপর জানা বর্ণনা অনুযায়ী‚ প্রায় ২০০০ জন মিলে ট্রেনটাকে আক্রমণ করে‚ প্রথমে ট্রেনে পাথর ছোঁড়া হয় আর তারপরে চারটে বগিতে আগুন ধরিয়ে দেওয়া হয়। ফলে ২৭ জন নারী ও ১০ শিশুসহ ৫৯ জন পুড়ে মারা যায়।
গুজরাট পুলিশের অতিরিক্ত মহাপরিচালক জে মহাপাত্রের মতে, “ট্রেনটি গোধরায় আসার অনেক আগেই দুর্বৃত্তরা পেট্রোলে ভেজানো ন্যাকড়া ব্যবহারের জন্য প্রস্তুত করে রেখেছিল।”
এই ঘটনার তদন্তে নিযুক্ত নানাবতী-মেহতা কমিশন ২০০৮ সালে এই সিদ্ধান্তে উপনীত হয় যে, অগ্নিসংযোগটি ছিল এক হাজার শক্তিশালী মুসলিম জনতার দ্বারা সংঘটিত পূর্ব পরিকল্পিত অগ্নিসংযোগ।
২০১১ সালে ট্রায়াল কোর্ট ৩১ জন মুসলমানকে পুড়িয়ে মারার জন্য দোষী সাব্যস্ত করে, প্রমাণ হিসাবে নানাবতী-মেহতা কমিশনের রিপোর্টের উপর ব্যাপকভাবে নির্ভর করে। অক্টোবর 2017 সালে, গুজরাট হাইকোর্ট সেই নির্দেশ বহাল রাখে।
পরবর্তীতে পুলিশ মার্চের ১৭ তারিখ স্থানীয় টাউন কাউন্সিলর এবং একজন কংগ্রেস কর্মী হাজি বিলালকে গ্রেফতার করে। সন্ত্রাসবিরোধী স্কোয়াডের হাতে ধরা পড়ে সে।
গোধরা পৌরসভার সভাপতি মহম্মদ হোসেন কালোতাকেও মার্চ মাসে গ্রেফতার করা হয়। গ্রেফতারকৃত অন্যদের মধ্যে রয়েছেন কর্পোরেটর আব্দুল রাজাক ও সিরাজ আব্দুল জামেশা। বিলাল গ্যাং লিডারদের সাথেও সংযোগ রাখত এবং বেশ কয়েকবার পাকিস্তান থেকেও ঘুরে এসেছিল।
যাইহোক‚ ভারতের মাটিতে শান্তিপ্রিয় হিন্দুদের উপরে অত্যাচার কম হয়নি‚ গনহত্যা কম হয়নি। এক হিসাবে বলা যায় যে নিহত হিন্দুদের সংখ্যার বিচারে গোধরা অন্য অনেক হিন্দু গনহত্যার কাছে শিশু।
কিন্তু এর গুরুত্ব অন্য জায়গায়। গোধরা গনহত্যার পর সারা গুজরাটের মানুষ যেভাবে অন্যায়ের বিরুদ্ধে ফুঁসে উঠেছিল তা ভারতের ইতিহাসে প্রথমবার ঘটে। এর আগেও পালটা প্রত্যাঘাত হয়েছে‚ কলকাতায় ‘৪৬ এর গনহত্যার প্রত্যাঘাত হয়েছে। আরো বিভিন্ন জায়গায় হয়েছে। কিন্তু এইভাবে আপামর রাজ্যবাসীর গর্জে ওঠা এই প্রথমবার। গোধরার দধিচীরা নিজেদের প্রাণ দিয়ে সেদিন বজ্র তুলে দিয়েছিল গুজরাটবাসীর হাতে।
শেষ পর্যন্ত কবিগুরুর ভাষায় গোধরায় নিহতদের উদ্দেশ্যে বলতে হয়‚
উদয়ের পথে শুনি কার বাণী‚
ভয় নাই ওরে ভয় নাই।
নিঃশেষে প্রাণ, যে করিবে দান‚
ক্ষয় নাই তার ক্ষয় নাই।
©souvik dutta