বোধ হয় বকুনির ফল ।
কাল এ বি পি আনন্দ খবরটা সম্প্রচারিত করেছিল । সি আই ডি ধমক খেয়েছে হাইকোর্টের । সি আই ডির তদন্ত করা ৩৪০০ টি কেসের মধ্যে ১ টিতে চার্জশিট দিয়েছে । এখনো পর্যন্ত ২৭ হাজার ২৬৭ টি কেসে কোন চার্জশিট দিতেই পারেনি । হাইকোর্টের বক্তব্য সি আই ডি ভুল তথ্য দিয়ে আদালতকে বিভ্রান্ত করছে । এরপর কড়া পদক্ষেপ নেওয়া হবে । ইতিমধ্যেই আদালত বান্ধব নিয়োগ করেছে ডিভিশন বেঞ্চ । পরবর্তী শুনানি সম্ভবত ১০ তারিখ ।
এমন একটা খবর আনন্দবাজার পেলনা না চেপে গেল ? এক প্রাক্তন বন্ধু সাংবাদিক বললেন স্রেফ বকুনি । দিদিমণির বকুনি বার্তা বোধহয় ৬ প্রফুল্ল সরকার স্ট্রিটে মামা মারফত পৌঁছে গেছে । আনন্দবাজার চেপে গেছে এতবড় নিউজটা ।
বলছিলেন, আমরা কোন খবর মিস করলে টি ভি নিউজের দিকে চোখ রাখতাম কাজের মধ্যেও । মিস করলেই কভার করতাম যে কোন উপায় । এক্ষেত্রে খবরটা সন্ধ্যে বেলা এ বি পি আনন্দ সম্প্রচার করেছে । আনন্দবাজার অনেক সময় পেয়েছে । চাইলেই কভার করতে পারতো । করেনি ইচ্ছাকৃতভাবেই ।
বুঝলাম । কিন্তু ২৪ ঘণ্টা, নিউজ ১৮ করলনা কেন ? খবরটা পেয়েও । ফিরতি প্রশ্ন রাখলাম ।
উত্তরে হেসে ফেললেন প্রবীণ এই আনন্দবাজারের প্রাক্তনী । উত্তর দিলেন সংক্ষেপে – আসলে কে কত অনুগত তার লড়াই লড়ছে এরা । সেই অনুযায়ী বিজ্ঞাপন । আজ দেখনি প্রায় প্রত্যেকটা বাংলা সংবাদ মাধ্যমে বড় বড় বিজ্ঞাপন । একটি ” খেলা হবে” র, দ্বিতীয়টি “দুরাভাষে শিক্ষা”, তৃতীয়টি ,” স্বাস্থ্য ইঙ্গিত” সব হাসি মুখের বিজ্ঞাপন পাতা ভরে ।
খরচ কত এই প্রচারের ? জানতে চেয়েছিলাম নবান্নের তথ্য সংস্কৃতি দফতরের এক অনেক দিনের পরিচিত আধিকারিকের কাছে । অনেক ইতস্তত করে রাতে জানালেন আজকের বাজেট ২ কোটি ৩০ লক্ষ প্লাস । সব সংবাদ মাধ্যম মিলিয়ে ।
বুঝলেন কিছু ? একদিনে নবান্নের যদি এই ইনভেস্টমেন্ট হয় তারপরও বাংলা সংবাদমাধ্যম কথা বলবে ? তাদের বলা সম্ভব ?
আজ আরও একটা সাংঘাতিক খবর পেলাম অন্য সূত্রে । হাইকোর্টে শুভেন্দু অধিকারীর সহায়ক রাখাল বেরা জামিন পেয়েছেন । জামিন দিয়ে বিচারপতি রাজশেখর মন্থা রাজ্য পুলিশকে নির্দেশ দিয়েছেন রাখাল বেরার বিরুদ্ধে কোন ব্যবস্থা নিতে গেলে আদালতের অনুমতি নিতে হবে পুলিশকে । এখন থেকে আদালতের অনুমতি ছাড়া রাখালের বিরুদ্ধে কোন এফ আই আর পর্যন্ত করতে পারবে না পুলিশ ।
এমন সাংঘাতিক অবজারভেশন রাজ্য স্বরাষ্ট্র দফতরের ওপর আদালতের সপাটে চড় ছাড়া আর কিছু ? এ বি পি আনন্দ, ২৪ ঘণ্টা, নিউজ ১৮ কেউ এই সংবাদ প্রচারেই অনলনা । অথচ যেদিন রাখাল বেরা এরেস্ট হলেন সেদিন পাঁচ মিনিট অন্তর অন্তর রং চং করা নিউজ প্রেজেন্টাররা সেই সংবাদ সাংঘাতিক ভাবে উত্তেজিত হয়ে মিনিটে মিনিটে প্রচার করেছিলেন ।
কি বলবেন একে ? বাংলা সংবাদ মাধ্যমের দৈন্য ? শয়তানি ? দালালি ? নাকি শুধুই বিজ্ঞাপন আর নগদ পাওয়ার লোভ । জানিনা, জানতে আর ইচ্ছেও করেনা । একসময় খুব কাছ থেকে গৌর কিশোর ঘোষ, অরুণ বাগচী, সুমন চট্টোপাধ্যায় দের দেখেছি । আর আজ ?
আজ যাদের বেশ কিছুটা দূর থেকে দেখছি বা শুনছি এরা কারা ? নবান্নের উপরি আদায় করা কিছু মিডিয়া ব্রোকার ছাড়া আর কিছু কি ? আত্মীয়দের সরকারি চাকরি, স্বজনের ব্যবসা, দামী ফ্ল্যাট, গাড়ি, বৈভব, আমলা, আই এ এস, আই পি এস পোস্টিং করিয়ে নগদ আদায়, পুরসভার প্রধান ঠিক করিয়ে নিজের হিসেব বুঝে নেওয়া সব চরিত্রে এরা গুণান্বিত । অনেক ইতিহাস শুনি, জানি । এমনকি মন্ত্রী দফতর হারালে এরা সেই মন্ত্রীর হয়ে দৈত্য করেন, সংবাদ মাধ্যমের অফিসে এসে বসে থাকেন মন্ত্রী মহোদয় ।
এরা সাংবাদিক, এরা কাগজ চালান । চ্যানেলের এরা এক একজন মাথা, হেড । এঁরা ফোর্থ পিলার অফ ডেমোক্রেসি । লোকে দেখলেই প্রণাম ঠোকে ।
নবান্নের মালিক যখন জেলা কিম্বা দিল্লী সফরে যান এঁরা পেছন পেছন ঘুর ঘুর করেন । আগেকার দিনের চাপরাশিরাও জমিদারদের পেছনে ঠিক এভাবে ঘুরতো না । তারা খানিকটা হলেও লজ্জা পেত । কারণ তাঁদের লজ্জা বোধ কম বেশী ছিল । যেটা এঁদের একদমই নেই । এটা এদের একটা মস্ত সুবিধে ।
এঁরা সমাজে “PRESS” বলে খ্যাত !! এঁরা এক এক জন দেবাঞ্জন, সনাতন ।
সন্ময় বন্দ্যোপাধ্যায় ( ৯৮৩০৪২৬০৭৮)