কালীপূজোর সন্ধেতে বাজির তেমন দাপট না দেখে কিঞ্চিৎ স্বস্তি পেয়েছিলেন শহরবাসী। কিন্তু, রাত যত গড়িয়েছে শব্দদানব দাপিয়ে বেরিয়েছে অলি-গলি থেকে রাজপথে। রবিবার কালীপূজো থাকলেও তারপরের দিন দিওয়ালীতেও দেখা গিয়েছে একই ছবি। উৎসব শেষ হলেও শহরের বুকে বাজি আর লাউডস্পিকারের দাপট যেন কমছেই না। কালী প্রতিমা বিসর্জনকে কেন্দ্র করে কার্যত নজিরবিহীন দূষণের শিকার হল মহানগর। রংমশাল থেকে তুবড়ি কিংবা কানা ঝালাপালা করে দেওয়া শব্দের শেল। বিসর্জন উপলক্ষে বাদ যায়নি কিছুই। এর সঙ্গেই লাউডস্পিকার আর ডিজের দাপটে প্রাণ ওষ্ঠাগত হয়ে ওঠে শহরবাসীর।
দেদার বাজি ফাটানোর ফলে বাতাসে মিশেছে বিষ ধোঁয়া। বুধবার রাতে এক সময়ে বাতাসে দূষণের পরিমাণ গিয়ে দাঁড়ায় প্রতি ঘনমিটারে ৩০০ মিলিগ্রাম। এয়ার কোয়ালিটি অনুযায়ী এই মাত্রা অত্যন্ত বিপদজনক। ফলে শ্বাসকষ্টের রোগী,শিশু,বয়স্কদের প্রবল অসুবিধার মধ্যে পড়তে হয়।
রবীন্দ্র ভারতী বিশ্ববিদ্যালয়ে থাকা বাতাসের দূষণ পরিমাপক যন্ত্রে ধরা পড়েছে বুধবার রাত ১০টার সময় বাতাসে দূষণের পরিমাণ ছিল ৩০৯। এরপর রাত যত বেড়েছে দূষণের পরিমাণও বেড়েছে হু হু করে। রাত ১১টায় ৩১৫মিলিগ্রাম/প্রতি ঘনমিটারে। রাত ১২টায় তা গিয়ে ঠেকে ৩২২ মিলিগ্রাম/ প্রতি ঘনমিটারে। যাদবপুরে রাত ১টায় দূষণের মাত্রা গিয়ে ঠেকে ৩৮৪মিলিগ্রাম/ প্রতি ঘনমিটারে। ভয়াবহ এই দূষণের ছবি দেখা গেছে রবীন্দ্র সরোবর থেকে ভিক্টোরিয়া সর্বত্র।
এই প্রসঙ্গে পরিবেশকর্মী সুভাষ দত্ত বলেন, ‘শুধু বাজি যারা ফাটাচ্ছেন তাঁদের আটক করে লাভ হবে না। নিষিদ্ধ বাজির উৎপাদনই বন্ধ করা প্রয়োজন। শহরের নাগরিকদের সচেতনাতাও প্রয়োজন।’ শুধু বাজি নয় দূষণে তাল মিলিয়েছে বিশাল বিশাল লাউডস্পিকার আর ডিজের বিকট শব্দ। কলকাতা হাইকোর্ট ভাসানের সময় ডিজে নিষিদ্ধ করলেও সেই নিয়মকে কার্যত বুড়ো আঙুল দেখিয়েই বেজেছে ডিজে।
পুলিশ সূত্রে খবর সবথেকে বেশি বাজি ফেটেছে কসবা এবং রাজডাঙ্গা অঞ্চলে। প্রায় ২০০টি অভিযোগ জমা পড়েছে। গ্রেফতার করা হয়েছে ২৩৯ জনকে। এদের মধ্যে ৩৯ জনকে নিষিদ্ধ বাজি ফাটানোর জন্য গ্রেফতার করা হয়েছে। ৬৯ জনকে গ্রেফতার করা হয় নিষিদ্ধ লাউডস্পিকার এবং ডিজে বাজানোর জন্য। পশ্চিমবঙ্গ দূষণ নিয়ন্ত্রণ পর্ষদের তরফ থেকে জানানো হয় আগেরবারের তুলনায় এবারে অভিযোগ অনেক বেশি জমা পড়েছে। আরও বেশি মানুষ সচেতন হচ্ছেন। কিন্তু, কালীপূজো কাটলেও বিষ ধোঁওয়ায় মুখ ঢেকে আছে শহর। এর সমাধান কোথায় উত্তর হাতড়ে বেরাচ্ছে শহরবাসী।