বাংলাদেশ সরকার বেশ কয়েকটি বিদেশি টেলিভিশন চ্যানেলের সম্প্রচার বন্ধ করতে চলছে। সরকারি নির্দেশিকার জেরে এই সিদ্ধান্ত নিয়েছে দেশের অপারেটররা। তাহলে কি কট্টর ইসলামের ও শরীয়তের দাবি করা ধর্মান্ধ ধর্মীয় নেতাদের অঙ্গুলিহেলনে এতো বড়ো সিদ্ধান্ত নিয়েছে?
এই ধারণা ধর্মনিরপেক্ষ পর্যবেক্ষকরা করতেই পারে। ক্রম বর্ধমান হিন্দু ও অন্যান্য ধর্মীয় সংখ্যালঘুদের উপর অত্যাচারের খবর প্রকাশের ক্ষেত্রে চূড়ান্ত বিধিনিষেধ তো আছেই, আবার এর মধ্যে ডিজিটাল আইনের আওতায় হিন্দু এক্টিভিস্টদেরকে মিথ্যে মামলায় ফাঁসিয়ে জেলে ঢোকানো খুব সাধারণ ব্যাপার ওই দেশে।
যুক্তি দেখানো হচ্ছে অনুষ্ঠানে বিজ্ঞাপন প্রচারের জেরে বাংলাদেশে (Bangladesh) বন্ধ বেশ কয়েকটি বিদেশি টেলিভিশন চ্যানেলের সম্প্রচার, কিন্তু আসল উদ্যেশ্য হয়তো নিরপেক্ষ বিদেশী মিডিয়াগুলোকে দেশছাড়া করা।
ইসলামের পবিত্র দিনে অর্থাৎ শুক্রবার থেকেই বিজ্ঞাপন-সহ অনুষ্ঠান প্রচার করে এমন বিদেশি চ্যানেলের সম্প্রচার বাংলাদেশে বন্ধ হয়ে গিয়েছে। সরকারের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী, যেসব বিদেশি চ্যানেলে অনুষ্ঠানের মাঝে বিজ্ঞাপন দেখায়, সেগুলি সম্প্রচার করা যাবে না। এদিকে, কেবল অপারেটরদের বক্তব্যও, বিজ্ঞাপন-সহ অনুষ্ঠান প্রচার করে, এমন বিদেশি চ্যানেলগুলি থেকে বিজ্ঞাপনের অংশটুকু কেটে বাদ দিয়ে সম্প্রচার করা সম্ভব নয়।
ফলে প্রযুক্তিগত বাধ্যবাধকতার জন্যই তাঁরা চ্যানেলগুলি দেখানোই বাদ দিয়ে দিয়েছেন। ফলে বহু দর্শক এবার বেশ কয়েকটি বিদেশি চ্যানেল দেখতে পাবেন না।
কেবল অপারেটরস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (কোয়াব) প্রতিষ্ঠাতা তথা সভাপতি এস এম আনোয়ার পারভেজ বলেন, “অনেকে মনে করছেন, কেবল অপারেটররা অন্য কোনও কারণে বিদেশি চ্যানেলগুলির সম্প্রচার বন্ধ রেখেছেন। কিন্তু বিষয়টি তা নয়। আমরা সরকারের নির্দেশ মেনে চলছি। ওই নির্দেশিকা মতে, বিজ্ঞাপন-সহ অনুষ্ঠান প্রচার করে, এমন বিদেশি চ্যানেল বাংলাদেশে দেখানো যাবে না। তাই সেসব চ্যানেল সম্প্রচার করা আমরা আপাতত বন্ধ রেখেছি।”
আনোয়ার পারভেজ আরও জানান, সরকার পরবর্তী সময়ে নতুন কোনও নির্দেশ দিলে বা পদক্ষেপ নিলে, তাঁরা সে অনুযায়ী ব্যবস্থা নেবেন।
উল্লেখ্য, বাংলাদেশের কেবল টেলিভিশন নেটওয়ার্ক পরিচালনা আইনের ১৯(১৩) ধারায় বলা হয়েছে, কেবল টিভি নেটওয়ার্কের মাধ্যমে বিদেশি কোনও চ্যানেলে বিজ্ঞাপন সম্প্রচার করা যাবে না। এই আইনের জেরে ২০১৯ সালে বাংলাদেশে জি নেটওয়ার্কের চ্যানেলগুলি প্রায় ২৪ ঘণ্টা বন্ধ ছিল। সেবার ভিন দেশের টিভি চ্যানেলে বাংলাদেশি বিজ্ঞাপন কেন সম্প্রচারিত হচ্ছে? তা জানতে চেয়ে তথ্য মন্ত্রণালয়ের তরফ থেকে নোটিস দেওয়া হয়েছিল। তারপরই ডিস্ট্রিবিউটর সংস্থা জাদু ভিশন লিমিটেডের পক্ষ থেকে বাংলাদেশে ওই চ্যানেলগুলির সম্প্রচার বন্ধ করে দেওয়া হয়েছিল।