সজল বাবু আপনি বেরিয়ে আসুন । আপনার নামে এফ আই আর আছে । মুচিপাড়া ওসির ঘোষণায় সজল ঘোষ বেরিয়ে আসেননি । দরজা ভেঙে তাঁকে মুচিপাড়া থানার ওসির দলবল নিয়ে গেল থানায় । জঙ্গী পাকড়াওয়ের স্টাইলে । আজ সারা বিকেল টিভির পর্দায় এই রুদ্ধশ্বাস দৃশ্য লাইভ টেলিকাস্ট দেখেছে বাংলা ।
এই টানটান দৃশ্য দেখতে দেখতে আরেকটি দৃশ্য চোখে ভেসে উঠছিল । বাগনানের বাইনান । এক ৩৪ বছরের বাক শক্তি হারানো মধ্য যৌবনের রমণীকে সারা রাত ধরে গণ ধর্ষনের পর অভিযুক্ত কুতুবুদ্দিন এবং দেবাশিস রানাকে ধরে নিয়ে গিয়েও (ওপর তলার নির্দেশে ) ছেড়ে দেয় পুলিশ । তাদের মহা নিস্ক্রমনের সুযোগ দিতে । থানায় অভিযোগ জানাতে গেলে ধর্ষিতা নারীর সন্তানকে থানা বলেছিল প্রমাণ আনতে । আর তারপর গ্রামীণ এস পি সৌম্য রায় বাগনান থানার আই সির হয়ে সাফাই গেয়েছিলেন ইনিয়ে বিনিয়ে ।
দুটো ঘটনারই নায়ক পুলিশ । কলকাতায় সাদা পোষাকে, বাগনানে খাঁকি পোষাকে এরা কাজ করেন rather চৌকিদারী করেন । এঁরা একজনকে খুশী করলে পছন্দমত পোস্টিং পান । উপরি হিসেবে স্বাধীনতা দিবসে “সনমান”ও পান ।
ওপরের কাজগুলোর জন্য হাওড়া গ্রামীণের এস পি আর মুচিপাড়া থানার আই সির রেড রোডে সম্মানিত হওয়া উচিত । সরকার ভাবুক ।
এই একই ঘটনা ঘটল আজ খড়দহ থানাতেও । বিরোধী রাজনীতি করা এক যুব নেতা জয় সাহা থানায় গিয়েছিলেন অভিযোগ জানাতে । সোদপুর ট্রাফিক মোড়ের কাছে চা এর দোকানে চা খাচ্ছিলেন । এমন সময় তাঁকে ঘিরে ধরে পানিহাটির শাসক দলের কিছু ক্রিমিনাল । আচমকা তাঁর গাড়ি ভাঙচুর শুরু করে । দু রাউন্ড গুলিও ছোঁড়ে তাঁর গাড়ি লক্ষ করে । প্রাণ হাতে করে নিজেদের বাঁচাতে গাড়ি নিয়ে তাঁরা স্পিডে বেরিয়ে যান থানায় । অত স্পিডে গাড়ি চলছে দেখে এক সিভিক ভলেন্টিয়ার গাড়িটিকে থামাতে যায় । পারে না । তার হাতটা গাড়ির বনেটে লেগে বাউন্স ব্যাক করে । ভাঙেনি বা সাংঘাতিক কোন ইনজুরি হয়নি । থানায় পৌঁছে জয় সাহা তাঁর ওপর আক্রমণ নিয়ে এফ আই আর করতে গেলে পুলিশ উল্টে তাঁকে এবং তাঁর সঙ্গে থাকা দুজনকেই এরেস্ট করে । রাফ ড্রাইভিং এর জন্য তাঁকে চার ধরনের কেস দেয় । আজ রাতে জয় ও তাঁর দুই সহযোগী জেলে রয়েছেন গাড়ি জোরে চালানোর জন্য । আর যাঁরা গুলি চালালো, থান ইঁট ছুড়লো তাঁরা নিশ্চিন্তে বাড়িতে । থানার আই সির নাম সামসের আলী ।
এঁরও পুরস্কার পাওয়া উচিত ।
তিনটে উদাহরণ দিলাম । ৩০০০ উদাহরণ দেওয়া যায় । কলকাতা তবু খবরে আসে । গ্রাম বাংলা আড়ালেই থেকে যায় । উর্দি পরা এই বাহিনীও বুঝেছে তিনি কি চান । তারা সেই কাজই করে চলেছে । সঙ্গে পেয়েছে দোসর সংবাদ মাধ্যম আড়াল করার জন্য ।
একটা উদাহরণ দিয়ে শেষ করি । খড়দহর ঘটনাটিতে এ বি পি আনন্দ আজ বিকেলে ফ্ল্যাশ করল – ধৃত যুব নেতার গাড়িতে পুলিশ অস্ত্র পেয়েছে । রিপোর্ট করল সমীরণ পাল, উত্তর ২৪ পরগণার এ বি পি আনন্দের জেলা সংবাদদাতা ।
খোঁজ নিলাম আমি থানায় নিজের সোর্সে । পুলিশই বলল অস্ত্রটি লাইসেন্স প্রাপ্ত জয় সাহার সিকিউরিটির । সিকিউরিটির সঙ্গেই তা থাকে । বে আইনি কিছু নয় । তাহলে ?
টেলিফোনে পুলিশের খাওয়ানো খবর । সমীরণ সেটাই এ বি পি তে পাঠিয়েছে । এ বি পি সেটা ঘণ্টা দুয়েক ধরে চালিয়ে গেল । মানুষ জানলো না, বুঝল না । এ বি পি এই ভুল খবরের জন্য ক্ষমাও চাইল না ।
তিন পুলিশ, এক রিপোর্টারের কাহিনী আজ লিখলাম । বাকি গুলো লিখব । পর্বে পর্বে । কোথাও যাবেন না । ফিরে আসছি, বিজ্ঞাপনের বিরতির পর ।
সন্ময় বন্দ্যোপাধ্যায় ( ৯৮৩০৪২৬০৭৮)