১৯৪৯ সাল এর এপ্রিল এর একদিন, ডাঃ ইজেকিয়েল,একজন মহিলা ডাক্তার,যিনি ব্যাঙ্গালোর এ ক্যান্টনমেন্ট স্টেশন এর কাছের,একটি হাসপাতালে কর্মরত, একটি গর্ভবতী মহিলার কে করুনা হয়েছিল ,যাকে হাসপাতাল থেকে বের করে দেওয়া হয়েছিল কারণ সে তার নাম বা ঠিকানা প্রকাশ করতে অস্বীকার করেছিল বলে। ডাঃ ইজেকিয়েল শুধু জানতেন যে সেই মহিলা টি উত্তর ভারতেরএকজন বাসিন্দা এবং যদিও তার কাছে খুব বেশি টাকা ছিলো না তাও তাকে দেখে ধনী মনে হয়েছিল। নিজের ৩০ এর শুরু তে থাকা মহিলা টির দ্বারা ডাঃ ইজেকিয়েল এটো তাই মুগ্ধ হয়েছিল যে তার জন্য বেনসন টাউন এর কাছে একটি এলাকা তে ৫০ টাকা দিয়ে তার জন্য একটি ছোটো বাড়ি ভাড়া করেছিলেন, তার বিধানও কিনেছিলেন, তার জন্য একটি ধোবির ব্যবস্থা করেছিলেন, এবং পরীক্ষার জন্য তাকে দুবার ট্যাক্সিতে করে সিভিল সেন্টার স্টেশনের রোমান ক্যাথলিক হাসপাতালে নিয়ে গিয়েছিলেন।
সেই সম্ব্বাবব মা টি ব্যাঙ্গালোরে এক মাস কাটিয়েছেন নিজের চিঠির প্যাকেট থেকে চিঠিগুলো পুনরায় বারবার পড়ে যেগুলো তিনি সর্বদা নিজের সাথে রাখতেন, যখন তিনি ঘুমাতেন তখন সেগুলি তার বালিশের নীচে রাখতেন. একটি “মিথ্যা অ্যালার্মের” পরে, তাকে ৩০মে, ১৯৪৯ তারিখে ক্যাথলিক হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়, যেখানে তিনি সেই রাতে একটি মৃত শিশুর জন্ম দেন। তিনি নয় দিনের জন্য হাসপাতালে ছিলেন এরপর সুস্থ হয়ে ওঠার জন্য তিনি নিজের ভাড়া বাড়িতে ফিরে আসেন এবং এজিকিয়েল কে তার সমস্ত ৬০০ টাকার ঋণ পরিশোধের প্রতিশ্রুতি দিয়ে অবশেষে ১৯জুন তিনি দিল্লিতে ফেরার ফ্লাইট নেন।
তবে সে তার সাথে তার মূল্যবান চিঠিগুলো নিয়ে যেতে ভুলে গেছিলো। সেগুলি ছিল ভারতের প্রধানমন্ত্রী পন্ডিত জওহরলাল নেহেরুর তাকে লেখা কিছু অন্তরঙ্গ চিঠি। তিনি ছিলেন শ্রাদ্ধা মাতা, একটি তরুণ আকর্ষণীয় সন্ন্যাসিনী যার প্রতি নেহরু প্রমত্ত ছিলেন।
পাঞ্জাব এবং কলকাতা হাইকোর্টের একজন অবসরপ্রাপ্ত প্রধান বিচারপতি, দেবী সিং তেওয়াটিয়া, যিনি সন্ন্যাসিনের বন্ধু, সে নেহেরু-শ্রদ্ধা মাতার সম্পর্কের সম্পূর্ণ গল্পটি প্রকাশ করেছেন। যেটি এইভাবে যায়:
ইজিকিয়েলরা শ্রদ্ধা মাতার কাছ থেকে আর কখনও কিছু খবর শোনেননি এমনকি তারা তাকে যখন তার দেওয়া ঠিকানায়- সি/ও আসুতোষ লাহেরি, জিএসএমএস, নয়াদিল্লি, চিঠি পাঠিয়েছিল,চিঠি টি না খোলা অবস্থা টাতেই ফিরিয়ে দেওয়া হয়েছিল। ডঃ ইজেকিয়েলের স্বামী,ডঃ করম চাঁদ ওয়েডের কাছে সাহায্যের জন্য গিয়েছিলেন,যিনি একজন হিন্দি পণ্ডিত এবং তার একজন কাছের বন্ধু ছিলেন। ইজেকিয়েল জানতে চেয়েছিল যে,চিঠির প্যাকেটে তার কী এমন হদিস ছিল, যা সে এত ভালো করে রক্ষা করত কিন্তু চলে যাওয়ার সময় তার বালিশের নীচে ভুলে গিয়েছিল?
২শে মার্চ, ১৯৪৮ সালে সরকারি বাড়ি, লখনউ থেকে পাঠানো প্রথম চিঠি টির হাতেরলেখা চিনতে ওয়াডের মাত্ৰ একটি ঝলকের প্রয়োজন ছিল। অন্যান্য চিঠিগুলোও নেহরুর শ্রদ্ধা কে সম্বোধন করা লেখা ছিল এবং চিঠিগুলো ছিল “ঘনিষ্ঠ প্রকৃতির”। ওয়েড, প্রধানমন্ত্রীর একজন প্রখর ভক্ত হিসেবে নেহরুর এই পরিণতির সম্পর্কে শঙ্কিত ছিলেন।
শ্রদ্ধা যে ৬০০ টাকা ধার করেছিল সেটি উনি এজিকিয়েল কে দিয়ে দেন এবং চিঠিগুলি নিজের কাছে রেখে দেন। চিঠিগুলি তিনি নিজে নেহেরুর কাছে ব্যক্তিগতভাবে পৌঁছে দিতে চেয়েছিলেন ,তাই তিনি নেহরুর ব্যাকিগত সহকারী এ. বিথাল পাইকে যাকে তিনি জানতেন চিঠি লিখেছিলেন, কিন্তু পাই এর উত্তর আশাজনক বা উৎসহজনক ছিল না. পাই লিখেছিলেন, যে তিনি বা প্রধানমন্ত্রী কেউই ঠিক মনে করেন না যে ওয়েডের চিঠিগুলি পৌঁছে দেওয়ার জন্য দিল্লিতে আসার ঝামেলা এবং খরচ করা উচিত। তিনি পরামর্শ দেন যে ওয়েড যেন বরং চিঠিগুলি নিবন্ধিত বীমা কভারের মাধ্যমে পাই এর ঘরের ঠিকানায় পাঠান. পাই ওয়েডের অপরাধমূলক চিঠি যা নেহরুর সুনামকে ক্ষতিগ্রস্ত করবে এরম সব দাবী কে প্রত্যাখ্যান করেছিলেন। “অবশ্যই এটা সম্ভব যে এক বা দুটি চিটের উপর বিভ্রান্তিকর এবং ভুল যুক্তিসঙ্গত কথা বা ব্যাখা লেখা আছে যা আপনি দেখেছেন”পাই লিখেছেন,” তবে প্রধানমন্ত্রী নিজে তাঁর বদনাম বা কোনো দূষিত ব্যবহার নিয়ে চিন্তিত নন। তবে আমি আপনার পাঠানো চিঠি গুলি দেখার জন্য অপেক্ষা করব।”
ওয়েড আবার পাইকে একটি চিঠি লিখেছিলেন, যেখানে তিনি একটি চিঠি থেকে একটি লেখা উদ্ধৃত করেন যেখানে নেহরু লিখেছেন যে তিনি রাত 10 টার পরে গভীর রাতে শ্শ্রদ্ধা মাতার সাথে দেখা করতে পারবেন। কিন্তু পাই এরপরেও নির্ভীক ছিলেন। “কারোর এই চিঠি গুলোর কোনও ভুল ব্ব্যাখা দেয়ার বা ভুল মানে বোঝার কোনো দরকার নেই,” তিনি লিখেছেন। ” কেউ কিন্তু আপনার লেখা সেই উদ্ধৃত কথা টির ভূল ব্যাখ্যা করবে বলে আমরা আপনার চিঠি কে গুরুত্ব দিচ্ছি না কিন্ত এই জন্য গুরুত্ব দিচ্ছি যে আপনি যা লিখেছেন তা এই মহিলা টিকে বাজে বা খারাপ ভাবে প্রকাশ করছে বলে”।
কিন্তু নাছোড়বান্দা ওয়েড দিল্লি তে যাওয়ার এবং নেহরুর কাছে ব্যক্তিগতভাবে কাগজপত্র গুলি পৌঁছে দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেন। নেহেরু তার সাথে দেখা করেন এবং তাকে প্যাকেট থেকে আরও একটি অনপকারী চিঠি রাখতে দেন। ওয়েডের যদি তাঁর সাথে আবার দেখার প্রয়োজন হয় তার জন্য এই চিঠি টি নিজেকে সনাক্ত করার জন্য দিয়েছিলেন। নেহরু তাঁকে একটি নতুন ফোন নম্বরও দিয়েছিলেন যেটা দিয়ে তিনি তাঁর সাথে যোগাযোগ করতে পারেন এবং তাকে কিছু অ্যাসাইনমেন্টের প্রস্তাব ও দেন। কিন্তু ওয়েড এই প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করেছিলেন, এই বলে যে তিনি চিঠিগুলি রাখার এবং সেইগুলো ওনার কাছে পৌঁছে দেওয়ার দায়িত্ব ও কষ্ট করেছিলেন শুধুমাত্র নিজের দেশপ্রেমিক মনোভাবের জন্য এবং প্রধানমন্ত্রীর নাম বা সম্মান এর প্রতি শ্রদ্ধার জন্য।
১৯৪৮ সালে নেহেরুর সাথে শ্রদ্ধা মাতার প্রথম দেখা হয়েছিল যেটি ভারতের জন্য নেহরুর ধর্মনিরপেক্ষ পরিকল্পনাকে নস্যাৎ করার জন্য হিন্দু মহাসভার চক্রান্ত হতে পারে! হিন্দু মহাসভার প্রধান শ্যামা প্রসাদ মুখোপাধ্যায়, যিনি প্রথম শ্শ্রদ্ধা মাতাকে প্কলকাতায় বেদের উপর তার বক্তৃতা দিয়ে বিশাল সমাবেশগুলিকে মন্ত্রমুগ্ধ করতে দেখে, তাকে দিল্লিতে আসার আমন্ত্রণ জানিয়েছিলেন. দিল্লিতে তার সমানভাবে হৃদয়গ্রাহীর অভিষেক হয়েছিল যেখানে তিনি হিন্দু ভারত সম্পর্কে তাঁর দৃষ্টিভঙ্গি নিয়ে বেশ কয়েকটি সভায় বক্তৃতা দিয়েছিলেন। আকর্ষণীয় তরুণীদের প্রতি নেহরুর সংবেদনশীলতা সম্পর্কে সম্পূর্ণভাবে সচেতন , মুখার্জি প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে তার দেখা করানোর চেষ্টা করেছিলেন। প্রথমে, নেহেরু তাঁর গুরু ও গুরুমা দের প্রতি বিতৃষ্ণার জন্য তার সাথে দেখা করতে মানা করেছিলেন। কিন্তু মুখার্জি নিজের একজন বন্ধু জগৎ নারায়ণ লালকে নিয়োগ করেন তাকে প্রধানমন্ত্রীর বাড়িতে নিয়ে যাওয়ার জন্য। সেই সুন্দরী মহিলার দিকে এক নজর নেহরুকে মুগ্ধ করেছিল। সেই ১৫ মিনিটের ব্যক্তিগত সাক্ষাৎ যেটার উনি সম্মতি দিয়েছিলেন সেটা প্রায় দেড় ঘন্টা প্রসারিত করেছিলেন এবং এর সাথে আরও অনেক এরম সাক্ষাৎ অনুসরণ হয়েছিল সাধারণতভাবে গভীর রাতে।
১৯৪৯ সালের মার্চ নাগাদ, হিন্দু মহাসভার নেতারা তাদের চক্রান্তের সাফল্যের কথা ভেবে জয় করছিলেন। আউটলুক-এর গবেষণা থেকে জানা যায় যে গোয়েন্দা ব্যুরো (আইবি) মহাসভার আশুতোষ লাহিড়ীর কাছ থেকে একটি চিঠি আটক করে সেটি ভিডি সাভারকর, স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বল্লভভাই প্যাটেলের কাছে পাঠিয়েছিলেন। লাহিড়ী নেহেরুর সাথে শ্রদ্ধার “সক্রিয় যোগাযোগ” সম্পর্কে সবার সামনে চিৎকার করে বলেছিলেন। “আমি বিশ্বাস করি যে উচ্চ শক্তিগুলি ভারতের ভাগ্য পরিচালনা করছে। কে জানে এই নতুন যোগাযোগ, যদি এটি কার্যকর হয়, তাহলে বেশ নতুন উন্নয়ন হতে পারে,” তিনি লিখেছেন।
৪ঠা মার্চ, ১৯৪৯ সাল-এ, প্যাটেল সেই চিঠিগুলোর ব্যাখ্যা দাবী করে সেগুলি নেহেরুর কাছে পাঠিয়েছিলেন। নেহরু সেদিনই তাঁর চিঠির উত্তর দিয়েছিলেন, তিনি পুরো বিষয়টিকে হালকাভাবে উড়িয়ে দিয়েছিলেন: “… এটা সম্পূর্ণভাবে সত্য যে প্রশ্নের মহিলাটি আমার সাথে দিল্লি এবং লখনউতে বেশ কয়েকবার দেখা করেছেন…(আমরা) সাধারণতভাবে দুটি বিষয় নিয়ে আলোচনা করেছি-হিন্দু কোড বিল এবং ভাষার প্রশ্ন নিয়ে,যেটা হচ্ছে হিন্দি। সে এসব বিষয়ে আমার মতামত প্রভাবিত করার চেষ্টা করেছিল এবং আমিও তাকে অন্যভাবে প্রভাবিত করার চেষ্টা করেছিলাম। আমি জানি না আমি এই বিষয়ে কতটা কী সাফল্য পেয়েছি, তবে সে একটুকুও সাফল্য পায়নি , যতদূর আমি চিন্তিত।”
শ্রদ্ধা ei বিষয়ে ভীষণ স্পষ্টবাদী ছিলেন। নেহরুর মৃত্যুর ১৫ বছর পর খুশবন্ত সিং-এর সাথে একটি সাক্ষাত্কারে, তিনি বলেছিলেন: “আওরঙ্গজেব রোডের বাড়িতে আমাদের যে প্রথম সাক্ষাৎ হয়েছিল সেটার সময় আমাদের দুজনেরই মনে হয়েছিল যে আমরা যেন একে ওপরকে আগের জন্ম থেকে চিনি। আমি দেখতে পাচ্ছিলাম পণ্ডিতজি আমার প্রতি আকৃষ্ট হয়েছেন। আমার যা কথা বলার ছিল তা শুনে তিনি মুগ্ধ হয়েছিলেন। এবং আমি অস্বীকার করবো না যে তিনি এর প্রতি আকৃষ্ট ছিলেন (তার মুখ এবং বৈশিষ্ট্যের দিকে ইঙ্গিত করে)। আমি তাঁর সাথে অনেকবার দেখা করেছি এবং অনেক ঘন্টা ধরে সাক্ষাৎ গুলি প্রসারিত হয়েছিল। আমার প্রতি তাঁর ক্রমশ আকর্ষণ অনুভব করেছিলাম। তিনি আমাকে আমার বিয়ে এবং আমার স্বামী সম্পর্কে অনেকবার জিজ্ঞাসা করেছিলেন। আমি বলতে পারি যে আমি যদি মুক্ত হতাম এবং এই সন্যাসিনির কোনো শপথ না নিতাম, তাহলে আমি একমাত্র হতাম আর অন্য কোনো নারী না যাদের নাম তাঁর সঙ্গে যুক্ত হয়েছিল (লেডি মাউন্টব্যাটেন, পদ্মজা নাইডু, মৃণালিনী সরব)যাকে উনি বিয়ে করতে চেয়েছিলেন। কিন্তু এটা আমার মধ্যে কখনই আসেনি। আমি তাঁকে খুব দৃঢ়ভাবে বলেছিলাম যে আমি একজন সন্ন্যাসিনী এবং একজন ব্রাহ্মণ হিসেবে তিনি হিন্দু ঐতিহ্যকে সম্মান করবেন এটাই আশা করা যায়”। শ্রদ্ধা অবশ্য অস্বীকার করেছিলেন যে সম্পর্কটি কখনও প্ল্যাটোনিকের বাইরে যায়নি , কিন্তু খুশবন্ত এই ব্যাপারে আস্বস্ত ছিলেন না ” তিনি যা যা বলেছেন তা থেকে এটা খুবই স্পষ্ট যে তাদের মধ্যে একটি সম্পর্ক ছিল”। তিনি আউটলুক কে বলেন।
১৯৭৬ সালে, বিচারপতি দেবী সিং তেওয়াতিয়া ডক্টর ওয়েডের কাছ থেকে একটি অ্যাপয়েন্টমেন্ট অনুরোধ এর চিঠি পান। তারা দেখা করেন। তখন নিজের ৮০-এর দশকে থাকা ওয়েড সেই একটি চিঠি দেখিয়েছিলেন যা নেহরু তাকে রাখতে দিয়েছিলেন। এটি একটি নিরীহ বা অনপকারী দুটি লাইন ছিল, কিন্তু ওয়েড তেওয়াতিয়াকে নেহরুর অবৈধ সন্তান সম্পর্কে যে গল্পটি বলেছিল তা চমকে দেওয়ার মতো ছিল।
ভাগ্যের পরিহাস এমনই যে তেওটিয়া শ্শ্রদ্ধা মাতাকে ১৯৫২ সাল থেকে চিনতো, যখন তিনি এবং সেই সন্ন্যাসিনী লন্ডনের সংসদ স্ট্রিটের ,৪৮ নম্বরের একই বোর্ডিং হাউসে থাকতেন এবং নেহরুর সাথে তার সম্পর্কের কথাও জানতেন। “তিনি একজন গোঁড়া হিন্দু এবং খুব ভালো বক্তা ছিলেন,” তেওয়াতিয়া বলেন। তার মুখটি বেশ সাদামাটা ছিল কিন্তু তার কণ্ঠস্বর, তেওয়াতিয়া মনে করে, জাদুকর ছিল, বিশেষ করে যখন তিনি মীরার ভজন গাইতেন। তরুণ সেই আইনের ছাত্র এবং সন্ন্যাসিনী প্রায়শই দেখা করতেন এবং ধর্মতাত্ত্বিক বিষয়গুলি নিয়ে অ্যানিমেটেড আলোচনা করতেন যেই বিষয়গুলি সম্পর্কে সন্ন্যাসিনী খুব ভালভাবে অবহিত ছিলেন, যা তিনি তার ঘরে পড়ে থাকা হিন্দি এবং ইংরেজি বইগুলি গ্রাস করে অর্জন করেছিলেন।
তেওয়াতিয়া জানতে পেরেছিলেন যে শ্শ্রদ্ধা সুলতানপুরে জন্মগ্রহণ করেছিলেন, অযোধ্যার কাছে একটি ছোট রাজ্যের রাণী যে তার বাবার বোন তার কাছে তাকে দত্তক এ দিয়ে দেওয়া হয়। ১৪ বছর বয়সে তার একটি দূরের দাদার সাথে তার বিয়ে দেওয়া হয়, যে আগ্রার একজন উকিল ছিল, তিনি তার বিয়ের দুই সপ্তাহের মধ্যেই পালিয়ে গিয়ে গান্ধীর আশ্রমে আশ্রয় নিয়েছিলেন। তিনি তারপরে হিমালয়ে পালিয়ে যান, এবং ২৬ বছর বয়সে একজন সম্পূর্ণ সন্ন্যাসিনী হিসেবে ও একজন শক্তিশালী বক্তা এবং জীবন্ত দেবী হিসাবে আবির্ভূত হন। শ্রদ্ধা তার রাজনৈতিক সংযোগের কথা কখনও গোপন করেননি, বিশেষ করে নেহরুর সাথে। তেওয়াতিয়া নিজে নেহেরুর একজন ভক্ত ছিলেন এবং তার এই ভ্রান্ত ধারণা থেকে মুক্ত করার জন্যই শ্রদ্ধা তাকে তার সাথে নেহরুর ঘনিষ্ঠতার কথা বলেছিলেন. “আমি তার সাথে হস্তরেখার অযৌক্তিকতা নিয়ে তর্ক করছিলাম যখন সে হঠাৎ বলেছিল, ‘আপনি কী মনে করেন পন্ডিতজি একজন যুক্তিবাদী? তিনি আমাকে একটি শিশুর মতো তাঁর হাত পড়ার জন্য তাঁর হাতের তালু বাড়িয়ে দিতেন’,” তিনি মনে করে বলেন।
শ্রদ্ধা তখনকার ভাইস প্রেসিডেন্ট সর্বপল্লী রাধাকৃষ্ণকেও চিনতেন। দুই বছর পরে যখন তিনি আবার ভারতে ফেরার জন্য প্প্রস্তুত হলেন, তখন তিনি তেওয়াতিয়াকে রাধাকৃষ্ণকে ফোন করতে বলেন। তিনি যে নম্বরটি তাকে দিয়েছিলেন সেটি ছিল লন্ডনের একটি হোটেলের, এবং রাধাকৃষ্ণন সঙ্গে সঙ্গে লাইনে আসেন যখন তিনি জানতে পারেন যে ফোনটি শ্রদ্ধার কাছ থেকে এসেছে। তেওয়াতিয়া বলেছেন, যে ভাইস-প্রেসিডেন্ট, শ্রদ্ধার ফোন করার এক সপ্তাহের মধ্যেই বাড়ি ফেরার জন্য তার ফ্লাইটের ব্যবস্থা করে দিয়েছিলেন।
প্রায় এক বছর পর ১৯৫৫ সালের আগস্ট মাসে হরিয়ানার ফরিদাবাদে তেওয়াতিয়ার সাথে তার আবার দেখা হয়।তার কুটিরটি কাঁটাতার দিয়ে ঘেরা ছিল যা বেশ কয়েকটি হিংস্র কুকুর রক্ষা করছিল। তার শিষ্যদের মধ্যে একজন তাকে প্রবেশ করার অনুমতি দিয়েছিল। তারা দুজনেই সেদিন বিকেলে দিল্লি যাচ্ছিলেন এবং শ্রদ্ধা তাকে তার নতুন প্যাকার্ড গাড়িতে লিফট দেওয়ার প্রস্তাবও দিয়েছিলেন. ড্রাইভারটি একজন সুদর্শন ফরাসি পুরুষ ছিল, তেওয়াতিয়া স্মরণ করে বলেন।বিদেশীদের প্রতি তার ঘ্রিনা ততক্ষণে অদৃশ্য হয়ে গেছে বলে মনে হয়েছিল. “এমনকি তিনি আমাকে জিজ্ঞাসা করেছিলেন যে আমি নিজের জন্য একজন বিদেশী স্ত্রী খুঁজে পেয়েছি কিনা এবং যখন আমি তাকে মনে করিয়ে দিয়েছিলাম যে তিনি ভারতীয়দের বিদেশীদের বিয়ে করার বিরুদ্ধে ছিলেন, তিনি বলেছিলেন: ‘ভারতীয়রা খুব খারাপ, বিদেশীরা তার থেকে অনেক ভালো’।”
সন্যাসিনির সাথে তেওয়াতিয়ার পরবর্তী সাক্ষাৎ হয়েছিল ১৯৬৬ সালে. “তিনি রাজস্থানের এক বাড়িতে ছিলেন এবং আমি তাকে দেখতে গিয়েছিলাম। সে বেশ বদলে গেছিল। তার অনেক ওজন কমেগেছিলো এবং তার দৃষ্টিভঙ্গি আরও প্রগতিশীল হয়ে গিয়েছিল। সে বামপন্থী হয়ে গেছিল। তিনি ইন্দিরা গান্ধী সম্পর্কে কিছু কথা বলেছিলেন যেটা আমি তখন বুঝতে পারিনি. সে আমাকে বলেছিল, ‘woh chudail mere peeche padi hui hai’ (ওই ডাইনি আমার রক্তের পিছনে পরে আছে)’। তেওয়াতিয়া তাকে এর কোনো কারণ জিজ্ঞেস করেনি। দশ বছর পর যখন ওয়েডের সাথে তার দেখা হয়, তখন সে কথাটির মানে বুঝতে পারে।
১৯৮৫ সালে আবারও তেওয়াটিয়ার শ্শ্রাদ্ধার সাথে দেখা হয়েছিল. ভাগ্নের বিয়ের বরাতের পার্টির জন্য জয়পুরে এসেছিলেন তিনি, এবং তার দিল্লী যাওয়ার ঠিক আগের রাতে শুনেছিলেন যে শ্রদ্ধা তার হোটেলের ঠিক পিছনে একটি পরিত্যক্ত দুর্গে বাস করছিলেন যেটি তার একজন শিষ্য তাকে উপহার হিসেবে দিয়েছিলেন। ডায়াবেটিসে আক্রান্ত হয়ে সে প্রায় চেনার বাইরেই বদলে গিয়েছিল. কিন্তু তিনি লন্ডনে তাদের প্রথম সাক্ষাতের মতোই মিশুকে এবং অতিথিপরায়ণ ছিলেন। ওটাই তাদের শেষ সাক্ষাৎ ছিল।
ভারতের প্রথম প্রধানমন্ত্রীর মৃত সন্তানের মা শ্শ্রদ্ধা মাতা ১৯৮৭ সালে প্রয়াত হন।