অভিনন্দনের বিপদের মুখে ফেরার বার্তা পাঠিয়েছিলেন তরুণী স্কোয়াড্রন লিডার, পুরস্কৃত করবে বায়ুসেনা

 অভিনন্দন তখন ঢুকছেন পাক অধিকৃত কাশ্মীরের সীমানার ভিতরে। এই সময়ে পঞ্জাবের কন্ট্রোল রুমে বসে, তীক্ষ্ণ দৃষ্টিতে মনিটরে চোখ রেখে তিনি দেখছিলেন, মিগ নিয়ে কী ভাবে পাক যুদ্ধবিমান ধাওয়া করছেন অভিনন্দন বর্তমান। হঠাৎই অনেকটা ভিতরে ঢুকে গেল অভিনন্দনের মিগ! তিনি কন্ট্রোল রুম থেকে চেঁচিয়ে উঠলেন নির্দিষ্ট পরিভাষায়, ‘টার্ন কোল্ড! টার্ন কোল্ড!’ কিন্তু পাক রেডিও জ্যামার সক্রিয় থাকায়, মিগের ভিতরে কোনও আওয়াজই পৌঁছল না বায়ুসেনা পাইলট অভিনন্দনের কানে।

ফলে যা হওয়ার তা-ই হল। আজ থেকে ঠিক এক মাস আগে, ২৭ ফেব্রুয়ারি গুলি করে অভিনন্দনের যুদ্ধবিমান মিগ ২১ গুলি করে নামিয়েছিল পাক সেনারা। নিজেকে ইজেক্ট করে বিমানের বাইরে বার করলেও, পাকিস্তানের সীমানার ভিতরেই আছড়ে পড়েন তিনি। গ্রেফতার হন পাক সেনাবাহিনীর হাতে। দু’দিনের রুদ্ধশ্বাস ও অসমসাহসিক পর্ব পার করে ফিরে আসেন দেশে। অভিনন্দনকে অভিনন্দনে ভাসিয়ে দেয় গোটা দেশ।

কিন্তু সেই অভিনন্দন-জোয়ারের আড়ালে থেকে গিয়েছিলেন, কন্ট্রোল রুম থেকে ঠিক সময়ে গুরুত্বপূর্ণ বার্তা পাঠানোর কাজটি অত্যন্ত দক্ষতার সঙ্গে করা সেই তরুণী। কিন্তু আড়াল ভাঙল বায়ুসেনা বাহিনী নিজেই। জানাল, সেই তরুণী স্কোয়াড্রন লিডারকে বিশেষ পুরস্কারে সম্মানিত করতে চলেছে তারা।

২৭ ফেব্রুয়ারি, সকাল সাড়ে ন’টা। ভারতীয় বায়ুসেনার কন্ট্রোল রুমের অফিসাররা লক্ষ করলেন, একঝাঁক পাক যুদ্ধবিমান, অন্তত পক্ষে যার সংখ্যা ২৪, ধেয়ে আসছে ভারতের দিকে। সেই ২৪টির মধ্যে আবার ১১ টি এফ-১৬ ছিল বলেও খবর। ওই ঝাঁকের অর্ধেক বিমান নিয়ন্ত্রণরেখার পেরিয়ে ধেয়ে আসছিল। কয়েকটি সীমানা বরাবর চক্কর কাটছিল।

এমন সময় ভারতের সুখোই যুদ্ধবিমানগুলি রাজস্থান সেক্টরের উপরে ছিল, এবং দু’টি মিরাজ ২০০০ নিয়ন্ত্রণ রেখার ঠিক মাথায় ছিল। কন্ট্রোল রুমে বসে থাকা তরুণী বায়ুসেনা পাকিস্তানের যুদ্ধবিমানের চ্যালেঞ্জ নিয়ে চটজলদি নির্দেশ দেন অবন্তীপোরা ও শ্রীনগরের এয়ারবেস থেকে সুখোই ৩০ এবং মিগ ২১ দিয়ে পাক বায়ুসেনার বিমানকে ধাওয়া করার।

কিন্তু খানিক পরেই বিপদ বুঝে, মিগ নিয়ে এগিয়ে যাওয়া অভিনন্দনকে সতর্ক করেন ওই তরুণী অফিসার। ফিরতে বলেন। এ-ও বলেন, পাক বাহিনীর সঙ্গে লড়ার জন্য এফ-১৬ নিয়ে যেতে হবে। কারণ সুখোই ও মিগের চেয়ে এফ-১৬ বেশি শক্তিশালী।

সেই তরুণী বায়ুসেনাকেই ‘ডিসটিংগুইশড সার্ভিস মেডেল’-এ ভূষিত করতে চলেছে বায়ুসেনা বাহিনী। জানিয়েছে, কন্ট্রোল রুমের ভিতরে প্রবল চাপের মুখে একা সবটা কো-অর্ডিনেট করেছিলেন তিনি। ঠান্ডা মাথায় নির্দেশ দিয়েছিলেন অভিনন্দনকে। সে নির্দেশ না-পৌঁছনোর আলাদা কারণ রয়েছে। কিন্তু তাতে তরুণীর ক্ষিপ্রতা ও ত্রস্ততা কম হয়ে যায় না। তিনি অসাধারণ ভাবে পালন করেছেন তাঁর কর্তব্য।

যদিও ওই তরুণী অফিসারের নাম বা পরিচয় এখনও প্রকাশ করেনি বায়ুসেনা।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.