সপ্তদশ লোকসভা নির্বাচনের আসর বেশ জমে উঠেছে। একদিকে বিজেপির নেতৃত্বে এনডিএ, অপর দিকে কংগ্রেসের নেতৃত্বে ইউপিএ জোট, সপা-বসপা জোট, তৃণমূল ইত্যাদি। এক দিকে নরেন্দ্র দামোদর দাস মোদী, অপর দিকে রাহুল গান্ধী, মমতা ব্যানার্জি, অখিলেশ, মায়াবতী, মেহবুবা, ওমর আব্দুল্লা, চন্দ্রবাবুরা। এ দিকে চৌকিদার, অপর দিকে কাকে ভোট দিতে হবে কেউ জানে না। কাকে ভোট দেব? আমি কিন্তু স্বার্থপর। যেখানে আমার স্বার্থ, সেখানে আমার ভোট।
পূর্বের কংগ্রেস সরকারের টানা দশ বছর যেমন পুতুল নাচ আর কেলেঙ্কারির রংমশাল ছড়িয়ে গেছে, তেমন মোদীজীর এই পাঁচ বছর বেশ রংদার আর দমদার হয়ে জমে উঠেছে। নোটবন্দি, জিএসটি, রাফাল, সার্জিক্যাল স্ট্রাইক, এখন আবার মহাকাশ প্রতিরক্ষা। বিরোধীরা হালে পানির অভাব অনেক আগেই টের পেয়েছে। তাই আয় ভাই এক সঙ্গে লড়ি করে এখনো কামড়া-কামড়িতেই পাগল। মোদীর পাঁচ বছরে চুরি নাই, কেলেঙ্কারি নাই, তার উপর মোদী ছাপ্পান্ন ইঞ্চি পার করে বাষট্টি ইঞ্চি ছাতি দেখিয়ে দিল দু-দুবার পাকিস্তানে ঢুকে জঙ্গি খতম করে। সারা পৃথিবী মোদীর পাশে দাঁড়িয়ে গেল! ভারতের মতো দেশের প্রধানমন্ত্রী এত ক্ষমতা ধরতে পারে তা তো এত বছর দেশ শাসন করেও কংগ্রেস ও তাদের চামচারা বুঝতে পারেনি! দশ বছর ধরে ঝুলিয়ে রাখা রাফাল পাঁচ বছরে কামাল করতে হাজির হব হব। অর্থনীতিতে এক লাফে বিশ্বে অষ্টম স্থান থেকে পঞ্চমে, রকেট ছুড়ে স্যাটালাইট ভেঙে মহাকাশ প্রতিরক্ষায় বিশ্বের চতুর্থ। হায় হায়! স্বাধীনতার দিন থেকে শুরু করে চৌদ্দ পুরুষ ধরে হাজার গরিবি হটাও স্লোগান দেবার পরও এমন দেশ বানাল কংগ্রেস যে মোদীজীকে এসে ন’ কোটি শৌচাগার বানিয়ে দিতে হলো বাড়ি বাড়ি, বিদ্যুৎ পৌঁছে দিতে হলো গ্রামে গ্রামে, মায়েদের দুর্দশা দূর করতে রান্নার গ্যাস দিতে হলো, এমনকী ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্টও করে দিতে হলো।
এসব অবশ্য দেশ-দশের বড়ো বড়ো কথা। আমি তো স্বার্থপর, আমার এসব নিয়ে কী কাজ? তাছাড়া, আদার ব্যাপারির জাহাজের খোঁজ নিয়েই বা কী লাভ? সঙ্গত প্রশ্ন। হ্যাঁ, আমি স্বার্থপর। আমার পেট, আমার বৌ-ছেলে-মেয়ে সহ গোটা সংসারের পেট আমাকেই দিন-রাত পরিশ্রম করে ভরাতে হয়। খাওয়া-পরা, পড়াশোনা, মাথা গোঁজা, রোগে ওষুধ আমাকেই জোগাতে হয়, কেউ করে দেয় না। আমি নিজের মতো সুখে শান্তিতে থাকতে চাই ব্যাস্। তবে আমি ও আমরা তো এই দেশেই বাস করি তাই ভোটের বাজারে দেশের হাল-চালটা একটু দেখে নিই।
কিছুদিন আগেই এক আন্তর্জাতিক রিপোর্ট উঠে এসে বেশ আলোড়ন ফেলেছে পৃথিবীতে। ২০১৭ সালে মাত্র এক বছরে ইসলামিক জঙ্গিরা চুরাশি হাজার নিরীহ মানুষ খুন করেছে ইরাক, সিরিয়া, সোমালিয়া, পাকিস্তান, আফগানিস্তান, বাংলাদেশ এবং এই ভারত-সহ পৃথিবীর নানা দেশে। ওই নিরীহ মানুষগুলো কিন্তু আপনার আমার মতোই নিরীহ ছা-পোষা স্বার্থপর, তবু নিজের মতো সপরিবারে সুখে শান্তিতে আনন্দে বাঁচতে পারল না। এই ভারতে, আজ থেকে প্রায় ত্রিশ বছর আগে কাশ্মীরের হিন্দু পণ্ডিতদের উপর শুরু হলো ওই জঙ্গি ও বিচ্ছিন্নতাবাদীদের আক্রমণ। বাড়ি-ঘর পুড়িয়ে দেওয়া হলো, ধর্ষণ করা হলো, হত্যা করা হলো কম করে পাঁচশো নিরীহকে। বাকিরা সব ছেড়ে আজও জম্মু ও দিল্লিতে ছন্নছাড়া শরণার্থী। তৎকালীন কংগ্রেস সরকার নীরব দর্শক হয়ে থাকল, থেকেই গেল আর সাহস পেয়ে জঙ্গি কালচার শুরু হয়ে গেল ভারতে।
মাত্র ১০ বছর আগের ঘটনা; তারিখটা ২৬ নভেম্বর ২০০৮। দিল্লির মসনদে তখনও কংগ্রেস। ড. মনমোহন সিংহ প্রধানমন্ত্রী। সোনিয়া গান্ধী তখন দোর্দণ্ড প্রতাপ কংগ্রেস সভাপতি। পর্দার আড়ালে তিনিই সুপ্রিম প্রধানমন্ত্রী হয়ে দেশ চালিয়েছেন। সে অভিযোগ তখন বেশ শক্তিশালী। মুম্বইয়ে ঘটল ভয়ানক জঙ্গি হামলা। দশজন পাকিস্তানি লস্কর জঙ্গি সমুদ্র পথে ভারতে ঢুকে বিখ্যাত তাজ হোটেল, ওবেরয় হোটেল, হাসপাতাল ও শিবাজী টার্মিনাস জংশন স্টেশনে হত্যার তাণ্ডব শুরু করল। চার দিন ধরে চলল নারকীয় হত্যাকাণ্ড আর আতঙ্ক। আমার আপনার মতো ১৭৪ জন সাধারণ নিরীহ নারী পুরুষ শিশু যারা নিত্য কাজে ব্যস্ত ছিল—তারা খুন হলো, জখম হলো তিন শতাধিক।
সুখে শান্তিতে নিজের মতো থাকতে চেয়েছিল ২০০৬ সালে মুম্বই সিরিয়াল বোমা বিস্ফোরণে যারা মারা গেছে, তারাও। উরি, পাঠানকোট ইত্যাদি জঙ্গি হামলায় যে সেনারা মারা যাচ্ছে প্রতিনিয়ত তারা তো সুখে শান্তিতে থাকতে চাওয়া আমাদের মতো মানুষেরই ঘরের ছেলে। স্ত্রী-সন্তান ও বাবা-মাকে নিয়ে একটা সুখের সংসার গড়তেই তো চেয়েছিল তারা। কেন তারা অকালে অতর্কিত আঘাতে নিপ্রাণ ছিন্ন-ভিন্ন লাশ হয়ে আপনজনের ঘরে ফিরছে? আজ সারা ভারত সন্ত্রাসীদের আখড়া, বারুদের কারখানা আর গুদামে ছেয়ে গেছে। যে পথ ধরে আপনার একরত্তি বাচ্চাটা স্কুল বাসে বা মায়ের হাত ধরে বাড়ি ফিরছে আগামী কালকের জঙ্গি আঘাত সেখানে ঘটবে না তা কি আপনি বলতে পারেন? এগুলো উদাহরণ, ঘটনা অজস্র।
গত পঞ্চায়েত নির্বাচনে ক’জন নিজের ভোট দিতে পেরেছেন? বোমা, গুলি, অস্ত্রের তাণ্ডব, রাস্তা রক্তে লাল; প্রায় একশো আমার মতোই তাজা মানুষ ভোটের বলি হলো। সঙ্গে নারীর বস্ত্রহরণ, কেশাকর্ষণ, শ্লীলতাহানি। ত্রিশ শতাংশ আসনে কাউকে প্রতিযোগিতাই করতে দেওয়া হলো না। ভয়ে মুখ খুলতেও পারেননি, পথে-ঘাটে নির্ভয়ে আপন চিন্তা ব্যক্ত করতেও পারেন না। গত রামনবমীতে রামভক্তদের উপর তাণ্ডবের কথা মনে করুন। মনে করুন ধুলাগড়, নলিয়াখালি, বসিরহাট, দেগঙ্গা, ময়ুরেশ্বর, কালিয়াচকের উন্মত্ত ধর্মান্ধদের তাণ্ডব আর এই তৃণমূল সরকার ও প্রশাসনের নির্লিপ্ততা। এই পশ্চিমবঙ্গ ও ভারতের জেলায় জেলায়, অলিতে গলিতে অজস্র খাগড়াগড়, মেটিয়াবুরঞ্জ, বোমা, বন্দুক, তলোয়ার। তাকিয়ে দেখুন, যে সকল রাজ্য সরকারি কর্মচারী ভোটকর্মী হয়ে বুথে বুথে ভোট নিতে যান তাদের আতঙ্কিত মুখের দিকে। উত্তর থেকে দক্ষিণ, পূর্ব থেকে পশ্চিম, ভোট কর্মীরা দাবি তুলেছে, কেন্দ্রীয় ফোর্স ছাড়া তারা কোনো বুথে ভোট নিতে যাবেন না। সরকারি কর্মচারীদের এই দাবি, ভয় রাজ্য প্রশাসনের নির্লজ্জ ভ্যাগাবন্ড রূপটা কি তুলে ধরছে না? তা থেকেই তো পরিষ্কার রাজ্যের সাধারণ মানুষের প্রকৃত অবস্থা। আপনি যেখানে বাস করেন সেখানে নিশ্চিন্ত কি ?
আমি-আপনি খুব সাধারণ মানুষ। সাধারণ ভাবেই একটু স্বাচ্ছন্দ্য নিয়ে পরিবার আত্মীয় বন্ধু-বান্ধব নিয়ে আনন্দে থাকতে ভালোবাসি। কিন্তু দেশের রাজনৈতিক শক্তি, দেশের সরকার যদি আমাদের শত্রু হয়ে ওঠে? তাকিয়ে দেখুন একদা ভারতের অঙ্গ বর্তমানে পাকিস্তান ও বাংলাদেশের দিকে, যেখানে সমাজ, রাজনীতি, সরকার, প্রশাসন সব সে দেশের হিন্দুর মহাশত্রু। হিন্দু সেখান কাফের, মালাউনের বাচ্চা। প্রতিদিন প্রতিনিয়ত সেখানে চলছে চরম অত্যাচার। পিটিয়ে, খুন করে দখল করা হচ্ছে হিন্দুর বাড়ি-ঘর, জমি, মন্দির, শ্মশান। হিন্দু ঘরের বৌ, কিশোরী, যুবতীকে ইচ্ছামতো তুলে নিয়ে গিয়ে ধর্ষণ করা হচ্ছে, ধর্মান্তর করা হচ্ছে। সমাধান নেই, পাশে দাঁড়ানোর কেউ নাই। তাকিয়ে দেখুন আফগানিস্তান, ইরাক, সিরিয়া, সোমালিয়ার দিকে। জনগণের শত্রু যখন শক্তিশালী হয়ে ওঠে, শাসক হয়ে ওঠে বা শাসকই যখন শত্রু হয়ে ওঠে তখন বুকে-পিঠে গুলি খেয়ে আপনি পড়ে থাকবেন নর্দমায়, হবেন ক্রীতদাস। আপনার শিশুটা অযত্নে খালি পেটে ছড়ানো লাশের মাঝে ধুলোয় কেঁদে কেঁদে নিস্তেজ হয়ে পড়বে। আপনার আদরের মেয়ে বা ভালোবাসার স্ত্রী ধর্মান্ধ সন্ত্রাসীদের পাশবিক খিদে মেটাতে থাকবে আর খোলা হাটে বিক্রি হতে থাকবে। রাষ্ট্র কী, রাষ্ট্রের সুরক্ষাবলয় কী তা আমরা বুঝতে চাই না। তবে সেই রাষ্ট্রীয় সুরক্ষাবলয় দুর্বল হলে, ভেঙে পড়লে, শাসক শয়তানের পৃষ্ঠপোষক হলে এটাইহয় যা চলছে ওই দেশগুলোতে। আপনার ভারতে, আপনার বাঙ্গলায় কী ওদের অস্তিত্ব অনুভব করছেন না? ওদের দেখছেন না? আগত ভবিষ্যৎকে অনুভব করছেন না? | আশার আলো কি দেখা যাচ্ছে? মুম্বই হামলায় প্রতিরক্ষা বাহিনীর সঙ্গে লড়াইয়ে দশ জঙ্গির মধ্যে ন’ জনেরই মৃত্যু হয়েছিল। একজন জীবন্ত ধরা পড়েছিল। আজমল কাসব। সমস্ত তথ্য-প্রমাণ সামনেই ছিল। জীবন্ত সাক্ষী ছিল ওই কাসব। পাকিস্তানের বিরুদ্ধে কী করতে পেরেছিল বা করেছিল তৎকালীন কংগ্রেস সরকার ? মোটা মোটা লেকচার দিয়েছিল, নিন্দা করেছিল। কী যায় আসে তাতে ওদের? ওরা তো ভারতে খুনের সন্ত্রাস চালিয়ে বুক ঠুকে তা ঘোষণা করে আতর মেখে, পান মুখে দিয়ে পাকিস্তানের পথে হাওয়া খেতে অভ্যস্ত হয়ে উঠেছিল নিশ্চিন্তে। জানত, মুখে বলতও, ভারতে হিজরেরা দেশ চালায়। সেই হিজরেদের মাঝ থেকে মরদ উঠে আসতে পারে তা ভাবতে পারেনি। নরেন্দ্র মোদীই প্রথম প্রধানমন্ত্রী যিনি সন্ত্রাস দমনে সেনাকে ঢেলে সাজাচ্ছেন, হাত খুলে দিয়েছেন। পাকিস্তানে ঢুকে দু দু-বার জঙ্গি খতম করে বুঝিয়ে দিয়েছেন সময় পাল্টেছে। শুধরে যাও নয়তো একের বদলে দশটা মারব, ঘরে ঢুকে মারব।
ও বাবা! আমাদের ঘরেই তো ওদের দরদি কত! বলে ভারত তেরে টুকরে হোঙ্গে, জঙ্গির মানবাধিকার, মৌলিক অধিকার। তাইতো দেশের নাগরিক মরলে, সেনা মরলে জঙ্গিকে গাল দেয় না, পাকিস্তানকে গাল দেয় না। আবার দেশের সরকার জঙ্গি মারলে তাতে রাগ করে। শুধু কী তাই? টাকা জোগায়, আশ্রয় দেয়, পথ বাতলে দেয়, আইনি সাহায্য করে; ভোট দিলেই হলো। ওদের কাউকে কাউকে আবার সরকারি টাকা, সরকারি গাড়ি, সরকারি দেহরক্ষী দিয়েও রেখেছিল। সেখানেও পেশাই শুরু হয়েছে, আখ পেশাই হবে।
আমি স্বার্থপর, আমি আমারটা বুঝি। আমি । সুখ-শান্তিতে থাকব যদি আমার পরিবার নিরাপদ থাকে। সপরিবারে আমি তখনই নিরাপদ থাকব যখন আমার গ্রাম, আমার থানা, আমার জেলা, আমার রাজ্য নিরাপদ থাকবে, গুন্ডা, সন্ত্রাস, তোলাবাজ, দালাল মুক্ত থাকবে। আমার রাজ্য তখন নিরাপদ থাকবে যখন আমার দেশ ভিতর থেকে ও সীমান্ত থেকে সুরক্ষিত থাকবে। আমার দেশ সব দিক থেকে তখন নিরাপদ থাকবে যখন ভারতমায়ের পূজারি দৃঢ়প্রতিজ্ঞ শক্তিশালী শাসকের হাতে দেশের ভার থাকবে। ভারত নিরাপদ তো আমি নিরাপদ। নিশ্চিন্ত, সুখী। আমি স্বার্থপর, তবু আমি আমার স্বার্থে ভোট দেব। যখন আমার মতো আত্মকেন্দ্রিক স্বার্থপর ভালো মানুষেরা অহঙ্কারে নিজেদের ঘরবন্দি করে নেয় তখন শয়তানেরা দলে দলে ঝাঁপিয়ে পড়ে। শয়তানকে জিতিয়ে শাসক বানিয়ে দেয়। আমরা চার দেওয়ালের ভিতর মোটা মোটা লেকচার ঝেড়ে দায় সারি আর ক্রন্দন করি। কিন্তু আর তা হবে না, আমি ভোট দেব, বিচার। বিবেচনা করে আমার স্বার্থে, আমার সন্তানের স্বার্থে ভোট দেব। আমার সন্তানকে আমি লোলুপ হিংস্র দানবে ভরা ভারতে ছেড়ে যেতে পারি না। আমি সাধারণ মানুষ, ভোট আমার অস্ত্র। সেই অস্ত্রবলে আমি আমার সন্তানের জন্য নিরাপদ ভারত সৃষ্টি করে যাব। আমি তাকেই ভোট দেব যার ভয়ে আমি ভীত হব না, বরং হবে ওই দানবেরা। আমি তাকেই ভোট দেব যে আমাদের অধিকার নিরাপদ রাখবে। আমি তাকেই ভোট দেব যার ভয়ে সাধারণ মানুষ মূক ও বধির হবে না, আমার শত্রু, আমাদের দেশের শত্রু ভয়ে কাঁপবে, দেশ ছেড়ে পালাবে। আমি তাকেই ভোট দেব যে আমার দেশকে, আমার সমাজকে, আমার পরিবেশকে নিরাপদ করে তুলবে আর সারা বিশ্বে ভারতীয় রূপে আমাকে গর্বিত করবে।
প্রীতীশ তালুকদার

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.