সবার কোয়ারেন্টাইনের দায়িত্ব নিতে পারব না, এবার বাড়িতে হবে করোনা চিকিৎসা: মুখ্যমন্ত্রী

 যে হারে করোনা মহামারী চেহারা নিচ্ছে তাতে করোনা রোগীদের সংস্পর্শে আসা লক্ষ লক্ষ মানুষের কোয়ারেন্টাইনের দায়িত্ব নিতে পারবে না সরকার। কারণ সরকারের একটা লিমিট আছে। প্রয়োজন হলে বাড়িতে রেখে অর্থাৎ হোম কোয়ারেন্টাইন করে নজরদারিতে চিকিৎসা চলবে। সোমবার নবান্নে এ কথাই বললেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় (Mamata Banerjee)। কিন্তু বাড়িতে থাকলে যদি সংক্রমণ ছড়ায়, তার দায়িত্ব কে নেবে সে প্রশ্ন উঠেছে। যদিও মুখ্যমন্ত্রীর দাবিতে কিছু ভুল দেখছেন না স্বাস্থ্য দফতরের কর্তারা।

সোমবার নবান্নের সাংবাদিক বৈঠকে তিনি বলেন, যাদের বাড়িতে কোয়ারেন্টাইনে থাকার জায়গা রয়েছে, তারা চাইলে হোম কোয়ারেন্টাইনে থেকেও চিকিৎসা করতে পারেন। এক্ষেত্রে প্রশাসনকে অতিরিক্ত দায়িত্ব নিয়ে তাকে তুলে আনতে হবে না। প্রয়োজনে ফোনে চিকিৎসকের পরামর্শ পেতে পারবেন।

মুখ্যমন্ত্রীর দাবি, ‘মানুষ নিজের বাড়িতে থাকলে অনেক ভাল থাকে। একটা হসপিটালে গেলে বরং অনেক রকম রোগী আসে, মানে অনেক রকম পবলেম থাকে। কিন্তু ঘরটা কিন্তু নিজের মতো করে করা যায়। যদি কেউ মনে করে ঘরটা পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন করে আরও সুন্দর করে রাখব শুধু নিজের জন্য। আমি কারোর সথে মিশব না। আমি আমার মতো থাকব। তাহলে মনে রাখবেন হোম কোয়ারেন্টাইনটা সব থেকে মডেল কোয়ারেন্টাইন। সারা পৃথিবীতে অনেক জায়গায় এটা কিন্তু চালু হয়ে গিয়েছে। ইভেন যারা পজিটিভ কেস, সিম্পটমস নেই, তারা কিন্তু বাড়িতেই থাকছে।‘ অর্থাৎ যারা কোয়ারেন্টাইনে যেতে চান না, তারা বাড়িতে থাকতে চাইলে রাজ্য সরকার আপত্তি করবে না বলে জানিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী।

কিন্তু করোনার মতো মহামারীর সংক্রমণে বাড়িতে থাকা কি নিরাপদ? করোনা সংক্রমিত রোগী হন বা তার সংস্পর্শে আসা প্রতিবেশী, বাড়িতে থাকলে আচমকা শারীরিক অবস্থার অবনতি হতে পারে। তাছাড়া হাসপাতালে আইসোলেশন বা কোয়ারেন্টাইনে থাকলে চিকিৎসকের নজরদারিতে নিয়মিত চিকিৎসা এবং করোনা টেস্টের সুযোগ থাকে। কিন্তু কেউ কোয়ারেন্টাইনে যেতে না চাইলে তিনি উপসর্গবিহীন সংক্রমিত হলেও তার সামনে আসবে না এবং তিনি আরও অনেককে সংক্রমিত করে ফেলতে পারেন। সেই কারণেই মুখ্যমন্ত্রীর এই দাবি চিকিৎসা গত ভাবে কতটা যুক্তিযুক্ত তা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে চিকিৎসক মহলের একাংশের মধ্যেইরোগীর সংখ্যা বেড়ে যাওয়ায় কোয়ারেন্টাইন সেন্টার তৈরিতে রাজ্য সরকারের অপারগতা ঢাকতে গিয়ে উল্টে রাজ্যবাসীকে বিপদের মুখে ঠেলে দিচ্ছেন না তো, এমনই প্রশ্ন উঠেছে বিভিন্ন মহলে।

যদিও রাজ্য প্রশাসনের একাধিক শীর্ষ কর্তাদের দাবি, মুখ্যমন্ত্রী সবরকম পথ খোলা রাখতে চাইছেন। তিনি একবারও বলেননি করোনা আক্রান্তকে হাসপাতালে আনা হবে না। অনেক সময়ে হাসপাতালের মতো কোয়ারেন্টাইন সেন্টারে যেতে অনেকের আপত্তি থাকে। প্রত্যেক করোনা রোগীর একাধিক আত্মীয়-স্বজন থাকে, তার সংস্পর্শে তিনি এসে থাকেন। আবার অনেকে ভাবেন তিনি সুস্থই আছেন, কোয়ারেন্টাইন সেন্টারে গেলে সংক্রামিত হয়ে যাবেনসে ক্ষেত্রে বাড়িতে নজরদারি করে মানুষকে রাখা যেতে পারে। কিন্তু খুব গুরুত্বপূর্ণ কেস বা তার সংস্পর্শে আসা লোকজনকে অবশ্যই কোয়ারেন্টাইন সেন্টারে রাখা হবে। কিন্তু অকারণে বিপুল অর্থব্যয়ে এত লোকের সরকারি আতিথেয়তার কোনও দরকার নেই।

সোমবার রাতে স্বাস্থ্য ভবনের তরফে জারি নির্দেশিকাতেও স্পষ্ট করা হয়েছে, করোনা রোগীর প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষ সংস্পর্শে আসা ব্যক্তির বাড়িতে জায়গা থাকলে তিনি উপযুক্ত সতর্কতা নিয়ে বাড়িতেই কোয়ারেন্টাইনে থাকতে পারবেন। সেক্ষেত্রে তাঁকে সমস্ত নির্দেশিকা বুঝিয়ে দেবেন চিকিৎসক ও স্বাস্থ্যকর্মীরা। বাড়িতে থাকলেও তাঁর শারীরিক পরিস্থিতির দিকে কড়া নজর রাখবেন স্বাস্থ্যকর্মীরা। কখনও কোনও পরীক্ষার প্রয়োজন হলে সঙ্গে সঙ্গে তা করা হবে।
এর পরেও যাঁদের করোনা পরীক্ষার রিপোর্ট পজিটিভ আসবে তাদের ক্ষেত্রে এই বিধি কার্যকর হবে না। করোনা আক্রান্তদের হাসপাতালে রেখেই বাধ্যতামূলক করা হবে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.