কোচবিহারের বিভিন্ন আক্রান্ত অঞ্চল ঘুরে দেখলাম, ভীষনই হতাশাব্যঞ্জক এবং দুঃখজনক দৃশ্য, ওদের সমস্ত কথা শোনার পর চোখে জল এসে যাচ্ছিল

ভোট-পরবর্তী হিংসার বলি হতে হয়েছে প্রায় কুড়ি জন রাজনৈতিক কর্মীকে। এ নিয়ে প্রথম থেকেই মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সমালোচনায় মুখর রাজ্যপাল জগদীপ ধনকর। এমনকি মুখ্যমন্ত্রীর শপথ গ্রহণের দিনেও এ বিষয়ে তাকে কঠোর ব্যবস্থা নিতে পরামর্শ দেন তিনি। মন্ত্রিসভার শপথগ্রহণ সমারোহতেও ফের একবার সংবাদমাধ্যমের সামনে এ বিষয়ে সরব হন রাজ্যপাল। তিনি অভিযোগ করেন বাংলার মানুষকে ভোটদানের দাম দিতে হচ্ছে। একইসঙ্গে তিনি বলেন, বারবার আক্রান্তদের সঙ্গে দেখা করতে চাইলেও মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সরকার সে বিষয়ে সাহায্য করছে না তাকে। এরপরই আজ বাংলায় রাজনৈতিক হিংসার পরিস্থিতি খতিয়ে দেখতে বিএসএফের হেলিকপ্টারে কুচবিহার শীতলখুচি পৌঁছানো রাজ্যপাল। পরিস্থিতি দেখে রীতিমতো উদ্বিগ্ন তিনি।

এদিন শীতলকুচি জোড়াপাটকি পৌঁছাতেই অবশ্য রাজ্যপালের কনভয় ঘিরে ধরে বিক্ষোভ দেখানো হয়। দেওয়া হয় গো ব্যাক স্লোগান। দেখানো হয় কালো পতাকাও। তবে তাও এদিন আক্রান্তদের পরিবারের সঙ্গে কথা বলেন তিনি। কোচবিহারের বিভিন্ন জায়গা ঘুরে দেখে পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণও করেন রাজ্যপাল। বিশেষত পুলিশের পদক্ষেপ নিয়ে ভীষণই ক্ষুব্ধ তিনি। এদিন সরাসরি বেশকিছু পুলিশ অফিসারদের ধমক দিতে দেখা যায় তাকে। পুলিশের ভূমিকা নিয়ে সংবাদমাধ্যমের কাছে তিনি বলেন, ”পুলিশ শাসকদলের হয়ে কাজ করছে। তাই পুলিশকে তোয়াক্কা করছে না শাসকদলের কর্মীরা। সাধারণ মানুষ কীভাবে ভরসা রাখবে?” ভোট-পরবর্তী হিংসার পরিস্থিতি যে তার কাছে ভীষণ হতাশাব্যঞ্জক তাই দিয়ে স্পষ্ট ভাষায় বুঝিয়ে দেন তিনি। এদিন নিজের টুইটার হ্যান্ডেল থেকে তিনি লেখেন, “কোচবিহারের বিভিন্ন আক্রান্ত অঞ্চল ঘুরে দেখলাম। ভীষনই হতাশাব্যঞ্জক এবং দুঃখজনক দৃশ্য। ওদের সমস্ত কথা শোনার পর চোখে জল এসে যাচ্ছিল। ভোট-পরবর্তী হিংসার এই প্রতিচ্ছবি আমার ভাবনার বাইরে। নিজের ভোটদানের অধিকার প্রয়োগ করতে গিয়ে একজনকে এতোখানি মূল্য দিতে হচ্ছে।”

প্রসঙ্গত উল্লেখ্য, রাজ্য সরকারের কাছে ভোট পরবর্তী হিংসা নিয়ে এর আগেই রিপোর্ট তলব করেছিল স্বরাষ্ট্রমন্ত্রক। আশাব্যঞ্জক উত্তর না মেলায় রিপোর্ট তলব করা হয় রাজ্যপালের কাছে। সেই কারণে পরিস্থিত দেখে এবার রিপোর্ট পাঠাবেন রাজ্যপাল। এর আগেই ভোট পরবর্তী হিংসার প্রতিচ্ছবি খতিয়ে দেখতে কেন্দ্র চার প্রতিনিধির দল পাঠিয়েছিল বাংলায়। এবার রাজ্যপালের রিপোর্টে সমীকরণ কতটা বদলায় সে দিকেই নজর থাকবে সকলের। তবে রিপোর্ট যা আশাব্যঞ্জক নয়, তা বোঝা যাচ্ছে তার মন্তব্য থেকেই।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.