বিধান রায় তো ছেড়ে দিলাম, দুই প্রফুল্ল বাবু (ঘোষ এবং সেন ) অসাধারণ মানুষ ছিলেন l ১০০% সৎ l এমনকি সিদ্ধার্থবাবুও ১০০% সৎ l জ্যোতিবাবুর মত সব টাকা ছেলের একাউন্টে পাঠিয়ে নিজে সৎ বলা লোক না l কিন্তু যে মিডিয়া আজ বুদ্ধদেব ভট্টাচাৰ্যকে ভগবানের জায়গা নিয়ে গেছে, তারা এঁদের সম্পর্কে কেন কিছু বলে না?
প্রফুল্ল ঘোষ একজন বিজ্ঞানী এবং সম্ভবত: সারা জীবন প্রথম হওয়া মানুষ l নেহেরুকে অসৎ ইত্যাদি বলে মুখ্যমন্ত্রীত্ব ছেড়ে দেন l এবং তাই ওনার প্রশংসা কংগ্রেসও করে না l আর প্রফুল্ল সেনকে ১৯৬৭ তে হারান তাঁরই দলের নেত্রী ইন্দিরা l অতুল্য ঘোষ এবং কামরাজকে রাজনীতি থেকে সরিয়ে দেবার জন্য পশ্চিমবঙ্গ এবং তামিলনাড়ুতে কংগ্রেস হারা ইন্দিরার প্রয়োজন ছিল l যে বাংলা-কংগ্রেস সেদিন সিপিএম এবং সিপিআইদের নিয়ে সরকার গঠন করে, ঋষিতুল্য প্রফুল্ল সেনকে চোর বদনাম দিয়ে, তাঁর মূল সেনাপতি ছিলেন প্রণব মুখার্জী, সিদ্ধার্থ রায় এবং গণি খান l বোঝাই যাচ্ছে, মূল খেলোয়াড় ১৯৬৭ তে কে ছিলেন l ১৯৬৯ তে ইন্দিরা দল গঠন করতেই তারা সেই নতুন দলে যোগ দেন l অনেকেই জানেন না সিদ্ধার্থ রায় জাতীয় কংগ্রেসের মুখ্যমন্ত্রী ছিলেন না l উনি কংগ্রেস (আর ) এর মুখ্যমন্ত্রী ছিলেন, যার চিহ্ন ছিল গাই বাছুর l আদি কংগ্রেস ছিল জোড়া বলদ l প্রফুল্ল সেন থেকে যান আদি কংগ্রেসে, যারা পরে জনসঙ্ঘ, লোকদল এবং সতন্ত্র পার্টির সঙ্গে মিশে জনতা পার্টি তৈরি করে l আর ঠিক এই কারণেই প্রফুল্ল সেনের অপমান আজকের কংগ্রেস হজম করে নিয়েছে এবং সিপিএমের তাঁদের বন্ধু হয়েছে l প্রফুল্ল সেন আজকের কংগ্রেসের কেউ না l উনি অন্য দলের নেতা, যেটা আজকের কংগ্রেস স্বীকার করে না l
প্রফুল্ল ঘোষ এবং প্রফুল্ল সেন সম্পর্কে কোন মিডিয়া, রাজনৈতিক বিশ্লেষক কোন দিন প্রশংসা করে নি, কারণ দুজনই জাতীয়তাবাদী ছিলেন এবং নরসীমা রাওএর মত নেহেরু-গান্ধী পরিবার বিরোধী l ১৯৬৯ এ তৈরি হওয়া কংগ্রেস-আর এবং ১৯৭৮ এ তৈরি হওয়ার কংগ্রেস-আই এর মূল পৃষ্ঠপোষক ছিল সোভিয়েত গুপ্তচর সংস্থা কেজিবি l ১৯৯৬ এ সেই দলই নাম ভাড়িয়ে জাতীয় কংগ্রেস নাম নেয় l আজকের কংগ্রেস যখন দাবী করে তারা ১৩০ বছরের দল, সেটা আমাদের দেশের ইতিহাসের সবচেয়ে বড় বিকৃতি l এঁদের সঙ্গে আদি কংগ্রেসের কোন সম্পর্কই নেই l রেজিস্ট্রেশন নম্বরই আলাদা l আর, আদি কংগ্রেস ১৯৭৫ এ জনসঙ্ঘের সঙ্গে মিশে গেছে l তাঁদের শেষ নেতা আমাদের রাজ্যে প্রফুল্ল সেন l
সুদীপ্ত গুহ