গোধরা, ফিরে দেখা ২৭য়ে ফেব্রুয়ারী

গোধরা, ২৭য়ে ফেব্রুয়ারী, ২০০২য়ের সেই কুখ্যাত ঘটনার জন্য শিরোনামে আসা গোধরা কাণ্ডের ১৮ বছর পূর্তি আজ। কেমন আছে সে শহর ? যে কাণ্ডের জন্য একটি গোটা রাজ্যে ছড়িয়ে যায় সাম্প্রদায়িক দাঙ্গা, সেই শহরে কেমনভাবে সহাবস্থান করছেন দুই সম্প্রদায়ের মানুষ ? প্রথমেই আমরা জেনে নেবো কি ঘটেছিল সেদিন দুপুরে।

২৭য়ে ফেব্রুয়ারি, ২০০২, সকাল ৭ টা ৪৫ মিনিট

গুজরাতের পাঁচমহল জেলার গোধরা শহরের গোধরা স্টেশন। প্লাটফর্ম ছেড়ে একটু আগেই বেরিয়ে গেছে বারাণসী থেকে আহমেদাবাদগামী সাবরমতি এক্সপ্রেস। বেরিয়ে সিগন্যালের কাছে যেতেই কে বা কারা যেন চেন টেনে দাঁড় করিয়ে দেই ট্রেনটিকে। ট্রেনের এস-৬ বগি জুড়ে রয়েছেন প্রায় শখানেকের উপর অযোধ্যায় করসেবা করে আসা বিশ্ব হিন্দু পরিষদের করসেবক। দাঁড় করিয়েই পাথর ছুঁড়ে কামরার ভিতরের মানুষদের সন্ত্রস্থ করে প্রায় দুহাজার জন দুষ্কৃতি। তারপর পুরো বগিজুড়ে খুব ঠাণ্ডা মাথায় পেট্রোল ছোঁড়া হয়। আর তারপরই লাগিয়ে দেওয়া হয় আগুন। মুহূর্তে আগুন ছড়িয়ে যায় ভয়াবহভাবে। সেই লেলিহান শিখায় মারা যান ৫৯ জন সাধারণ করসেবক। ভয়ঙ্করভাবে আহত হন ৪৮ জন। মারা যাওয়া ৫৯ জনের মধ্যে মহিলা এবং শিশু ছিলেন ৪০ জন।

সুপরিকল্পিতভাবে ঘটানো ভয়ঙ্কর এই হত্যাকাণ্ডের পরপরই ছড়িয়ে যায় গোধরা পরবর্তী দাঙ্গা, যাকে আমরা গুজরাত দাঙ্গা নামেও চিনি। হাজারের উপর সেই দাঙ্গায় নিহত হন দুই সম্প্রদায়ের মানুষ।

কিন্তু সত্যি কি কিছুজনের দাবী করা গোধরা শান্তশিষ্ট শহর ? কোনদিনই কি এই শহরে খারাপ হয়নি সাম্প্রদায়িক পরিস্থিতি ? সংখ্যাতত্ত্ব অবশ্য বলছে অন্য কথা। ব্রিটিশের সময় এমনকি স্বাধীনতার পর থেকে বরাবরই উত্যপ্ত হয়েছে গুজরাতের এই শহর। আসুন দেখে নেওয়া যাক এই তথ্যাবলি এক নজরে।

১৯২৭- খুন হন বিশিষ্ট হিন্দু নেতা পি এম শাহ। তিনি ছিলেন স্থানীয় হিন্দুদের প্রতিনিধি।

১৯৪৬- সাদভা হাজী এবং চাউদিঘার নামের দুজন পাকিস্তানপন্থী মুসলিম নেতা আক্রমণ করেন একজন পার্সি ব্যবসায়ীর উপর। পরে ৪৭য়ের পর তারা পাকিস্তান চলে যান।

২৪য়ে মার্চ, ১৯৪৮- এক হিন্দুকে কুপিয়ে খুন করা হয় জাহুরপুরের এক স্থানীয় মসজিদের সামনে। হাজার হাজার হিন্দুদের বাড়ি জ্বালিয়ে দেওয়া হয় সে সময়।

১৯৬৫- হিন্দুদের বাড়ির উপর জ্বলন্ত বস্তু নিক্ষেপের ঘটনা ঘটে এক পুলিশ চৌকির সামনেই। সবটাই হয় স্থানীও এক সংখ্যালঘু কংগ্রেস নেতার মদতে।

১৯৮০- গোধরা কাণ্ডের মতই এক আক্রমণ হয় হিন্দুদের উপর। প্রায় পাঁচজন মারা যান সেবার। বহু হিন্দু দোকান জ্বালিয়ে দেওয়া হয় এই সময়। প্রায় এক বছর এরপর জারি ছিল কারফিউ ফলে ব্যাপকভাবে ক্ষতিগ্রস্থ হয় ব্যবসা-বাণিজ্য।

১৯৯২- রেল স্টেশনের কাছেই প্রায় ১০০ টি হিন্দুদের বারিকে জ্বালিয়ে দেওয়া হয়। বহু হিন্দু ঘরছাড়া হন এইসময়।

মার্চ, ২০০২- জহরপুরা এলাকায় ফের ৫০০ জনের উত্তেজিত জনতা আক্রমণ করে হিন্দুদের। বহু বাড়ি জ্বালিয়ে দেওয়া হয়।

সেপ্টেম্বর, ২০০৩- গণেশ পুজোর পরপরই বিসর্জনকে কেন্দ্র করে ছড়ায় সাম্প্রদায়িক অশান্তি। কিন্তু কেউই মনে রাখেনি এ ঘটনা

সুতরাং দেখা যাচ্ছে কোনো কালেই আদপে শান্ত ছিলনা গোধরা। সম্ভবত সেকারণেই অযোধ্যা ফেরত সাধারণ জনতার উপর মৃত্যুর খাঁড়া নামানোর জন্য বেছে নেওয়া হয় চিরকাল সাম্প্রদায়িকতার আগুনে পুড়তে থাকা এই অভিশপ্ত নগরী গোধরাকে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.