গৌতমী, যখন ওনার বয়স সত্তর বৎসর অতিক্রান্ত, তখন তাঁর পালিত পুত্রকে অনুরোধ করলেন নারীদের জন্য ভিক্ষুণী হয়ে থাকবার জন্য এক সঙ্ঘব্যবস্থার সৃষ্টি করবার জন্য, যাতে নারীরাও বৌদ্ধ ধর্মে দীক্ষিত হয়ে নিজেদের আধ্যাত্মিকতার সাধনা করেতে সমর্থ হয়।
বুদ্ধ অসম্মতি প্রকাশ করেছিলেন।
গৌতমী পুনরায় বুদ্ধকে অনুরোওধ করেছিলে, আবারো প্রত্যাখ্যাত হওয়ার জন্য। গৌতমী তৃতীয়বারের জন্য শেষ চেষ্টা করলেন পুত্রস্নেহে যাকে বড় করেছেন সেই গৌতম বুদ্ধকে, বুদ্ধ পুনরায় নিরস্ত করলেন গৌতমীর কাতর আবেদনকে, এমনকি কোনোরুপ কারণ দর্শালেন না নিজের সিদ্ধান্তের সমর্থনে বা প্রস্তাবের বিরোধিতায়।
গৌতমী হতাশ হলেন ও দুঃখিত হলেন। এই সময়ে তিনি পর্যবেক্ষণ করলেন যে তিনি একা নন। তাঁর মত আরো নারী রয়েছেন যারা বিধবা বা স্বামী পরিত্যক্তা, এবং তারাই বৌদ্ধ লোকগাথা অনুসারে আসতে চেয়েছিলেন বৌদ্ধধর্মে, জীবননির্বাহ করতে চেয়েছিলেন আধ্যাত্মিকতার সাধনায়। তাঁরা এগিয়ে এলেন গৌতমীর সমর্থনে।
সাধারণ নারীদের সমর্থন ও সহমর্মিতায় গৌতমী নিজের মস্তকমুন্ডন করলেন ও গেরুয়া বস্ত্র ধারণ করেন এক বৌদ্ধ ভিক্ষুর মত। পঞ্চশতাধিক অনুগামিনীও তাঁর পদাঙ্ক অনুসরণ করেন। তাঁরা গৌতমীর সঙ্গে পদব্রজে যাত্রা করেন জেতবন বিহারের উদ্দেশ্যে, যেখানে বুদ্ধ অবস্থান করছিলেন। যাত্রাপথে তাদের উৎসাহিত করেন অসংখ্য মানুষ, পঞ্চশতাধিক নারী একই পোশাকে, একই চিত্তে সঙ্ঘবদ্ধ হয়ে যাত্রা করছেন একই লক্ষ্যে।
‘লিখিত মানবেতিহাসে এটাই বোধহয় প্রথম নারী অধিকার রক্ষার জন্য পদযাত্রা’, পেমা খান্দ্রো রিনপোচে লিখলেন বৌদ্ধ জার্নাল ‘লায়ন’স রোর’ এ।
দীর্ঘ পদযাত্রার পর জেতবন মহাবিহারের দ্বারে যখন পদযাত্রার সমাপ্তি হয়, তখন অংশগ্রহণকারী নারীরা পথের ক্লান্তিতে শ্রান্ত, ধূলিধূসর তাদের বসন, পদ ক্ষতবিক্ষত, তবুও তারা তাদের লক্ষ্যে অটল। মহাবিহার দ্বারে বুদ্ধের প্রধান শিষ্য আনন্দ স্বাগতঃ জানালেন পদযাত্রাকারীদের। আনন্দ চিন্তিত হলেন গৌতমীর অশ্রুসজল চোখ দেখে, এবং তাঁর যাত্রাসঙ্গিনীদের দুরবস্থা ও শঙ্কা অনুভব করে। এ কোন বিপদের সম্মুখে দাঁড়িয়ে আনন্দ।
গৌতমী আনন্দকে তাঁদের জেতবন মহাবিহারে আসবার উদ্দেশ্য ব্যক্ত করলেন, নারীদের জন্য এক নতুন সঙ্ঘ স্থাপনের অনুরোধ করবার জন্য এসেছেন তিনি ও তাঁর সহযাত্রীরা। কিন্তু মহাবিহারের দ্বারে এসে তাঁর মন সংশয়াকুল, বুদ্ধ যদি তাঁর অনুরোধ না মানেন তবে তাঁর জন্য তা বড়ই কষ্টদায়ক হবে, গ্রহণ করতে পারবেন কি সে প্রত্যাখ্যান? তার জন্যই খুঁজে বেড়াচ্ছেন সেই শব্দবন্ধ যার সাহায্যে আবেদন করবেন বুদ্ধসমীপে।
আনন্দ তাঁদের প্রতি সহমত পোষণ করে, বুদ্ধের সাথে কথা বললেন গৌতমীদের প্রতিনিধি হয়ে, এবং একই উত্তর পেলেন বুদ্ধের থেকে, না। বারবার অনুরোধের পরেও বুদ্ধ রাজি হলেন না। আনন্দ বুদ্ধকে প্রশ্ন করলেন, ‘নারীরা কি মুক্তিলাভ করতে সমর্থ ও ওনারা কি সন্ন্যাসীর মত জীবনযাপন করতে পারেন না?’
বুদ্ধ জানালেন নারীরাও সন্ন্যাসীর মত জীবনযাপন করতে পারেন ও মুক্তিলাভও করতে পারেন। আনন্দ প্রশ্ন করেন ‘তাহলে নারীরা ভিক্ষুণী হতে পারবেন না কেন?’
বুদ্ধ মানতে বাধ্য হলেন, সৃষ্টি হল ভিক্ষুণীদের জন্য নতুন সঙ্ঘাশ্রম।