রাতারাতি মুখ্যমন্ত্রীর অবস্থান বদলাল কিভাবে ?দেবাঞ্জন কি ধরা পড়ার পর নতুন কোন অপরাধ করেছে ?

১০০ ঘণ্টা লাগল মুখ্যমন্ত্রীর ! !

দেবাঞ্জন দেব সন্ত্রাসবাদীর থেকেও বেশী অপরাধী সেটা বুঝতে ? নবান্নে বসে ২৮ জুন মুখ্যমন্ত্রী এটাই বললেন তো ? শুনেছেন সবাই ?

আর এই মুখ্যমন্ত্রী দু দিন আগে ২৫ জুন নবান্নে বসে কি বলেছিলেন ?
” পুলিশ কমিশনারকে ফোন মুখ্যমন্ত্রীর / অনিচ্ছাকৃত খুনের মামলার নির্দেশ ” ( আনন্দবাজার ২৬ জুন, ২০২১)

রাতারাতি মুখ্যমন্ত্রীর অবস্থান বদলাল কিভাবে ?দেবাঞ্জন কি ধরা পড়ার পর নতুন কোন অপরাধ করেছে ? তাতো নয় । আসলে দেবাঞ্জন কীর্তি জনসমক্ষে আসার পর জল মাপছিলেন মমতা । লোকে কি ভাবে নিচ্ছে সেটা মাপছিলেন । যখন বুঝলেন এটা ওটা বলে লোকে খাচ্ছেনা, গিলছেও না, বিশ্বাসও করছেনা । প্রভাবশালী যোগ ক্রমশ জোরালো হচ্ছে তখন ভেবে মেপে দুটি কাজ করলেন । হাকিম, অতীন, শান্তনুদের বাঁচাতে ।

এক ।।
নিজেই ব্যাট ধরলেন । সন্ত্রাসবাদী থেকেও মারাত্মক দেবাঞ্জন – নিজেই বললেন । কর্পোরেশনের দিকে, পুলিশের দিকে কিছুটা বল ঠেলে দিলেন । বললেন এরা দায় এড়াতে পারেনা ।

প্রশ্ন – এখন সত্যি যদি তাই হয় পারবেন মুখ্যমন্ত্রী তদন্ত করাতে এই প্রতারকের সঙ্গে হাকিম, অতীন, শান্তনু, জাভেদ কিম্বা পুলিশ কর্তাদের সম্পর্ক নিয়ে বিচারবিভাগীয় বা সি বি আই তদন্ত করাতে ?

দুই ।।
সিট গঠন করে প্রতারকের সঙ্গে প্রভাবশালী যোগকে ধামাচাপা দেওয়ার চিরস্থায়ী একটা ব্যবস্থা পাকা করলেন ।

একদম মমতা স্টাইলে । গত ১০ বছর ধরে যে স্টাইলে তিনি প্রতিটি দুর্নীতি চাপা দিয়েছেন তার রেপ্লিকা দেখলাম আমরা ।

ওদিকে রাজ্যপালকে নিয়ে খেলতে গিয়ে মমতা কিন্তু কিছুটা বিপাকে পড়েছেন । আজ কি করলেন ?

রাজ্যপাল উত্তরবঙ্গ সফর সেরে সেখানকার GTAর দুর্নীতি নিয়ে সরব হলেন । বললেন ক্ষমতাবলে সেই দুর্নীতি নিয়ে CAG কে দিয়ে স্পেশ্যাল অডিট করাব । শুনেই মমতা রেগে টং হলেন । বলেই বসলেন রাজ্যপাল দুর্নীতিগ্রস্থ । কিভাবে ? হাওয়ালায় নাকি তিনি জড়িত ছিলেন । রাজ্যপাল পয়েন্ট বাই পয়েন্ট উত্তর দিয়ে প্রমাণ দিলেন মমতা পুরোটাই মিথ্যে বলছেন । অভ্যাস মত । উল্টে স্বাস্থ্য ভবনের দু হাজার কোটি টাকার আর্থিক কেলেঙ্কারির রিপোর্টের কি হল সেই ভীষণ অপ্রিয় প্রশ্নও করে বসলেন ।

লাভ কি হল মমতার ?

এই পুরো পর্বটায় যেটা বেরিয়ে এল বিনয় তামাং কে বসিয়ে যে ব্যাপক দুর্নীতি পাহাড়ে হচ্ছে তা মমতার জ্ঞাতসারে হচ্ছে । তাই মমতা ডিফেন্ড করতে মরিয়া ।
ফল কি হল ? পাহাড়ের দুর্নীতি আর তৃণমূলের দুর্নীতি একাকার হয়ে গড়াগড়ি খেতে শুরু করল পাহাড় থেকে সমতলে । পাহাড় হাসতে থাকল সমতলের এই কারবার দেখে ।

রাজ্যপালের বক্তব্য নিয়ে ওভার রিএক্ট করতে গিয়ে নিজেই আগবাড়িয়ে কাদায় পা ডোবালেন মমতা । দেখবেন এখন থেকে বারবার মানুষের আলোচনায় আসবে gta ও স্বাস্থ্য ভবনের দুর্নীতির কাহিনী । কি উত্তর দেবেন মমতা ?

আজ হাইকোর্ট নিয়েও খেলছেন মমতা । বিধায়ক অশোক দেবকে দিয়ে বার কাউন্সিলের চেয়ারম্যানের প্যাডে সুপ্রিম কোর্টের প্রধান বিচারপতিকে লেখালেন – ফিরিয়ে নিন কলকাতা হাইকোর্টের প্রধান বিচারপতি বিন্দলকে । খবর চাউর হতেই রুখে দাঁড়ালেন বার কাউন্সিলের অন্যান্য আইনজীবী সদস্যরা । ডুবলেন অশোক দেব । মুখ পুড়ল তাঁরও । প্রশ্ন উঠে গেল সরকার চালাচ্ছেন, চালান । আদালতটাও চালাবেন ?

আসলে এই স্টাইলেই চলছে সারদা-নেত্রীর বাংলা । এখানে প্রশ্ন করারও কেউ নেই । উত্তর দেওয়ারও কেউ নেই । আছে মিনমিনে দিদি দিদি করে পেছন পেছন ঘোরা কিছু সাংবাদিক । এরা গৃহপালিত, এরা গৃহশোভিতও বটে । ফল যা হওয়ার তাই হচ্ছে । মাত্র দু দিনের তফাতে একজন অনিচ্ছাকৃত খুনের আসামী পেয়ে যাচ্ছেন “সন্ত্রাসবাদীর থেকেও ভয়ংকরে”র তকমা । ভাবার কোন কারণ নেই যে দেবাঞ্জন সন্ত্রাসবাদী কাজ করেছেন বলে এই তকমা পেয়েছেন ।

দেবাঞ্জন আদতে আপাদ মস্তক দুর্নীতিপরায়ণ সরকারের চেহারাটা চিনিয়েছেন । তাই এই তকমা পেয়েছেন । জেলে না গেলে, চিনে না ফেললে এই দেবাঞ্জনরাই বঙ্গশ্রী কিম্বা বঙ্গবিভুষণ নিয়ে ঘুরে বেড়াতেন সমাজে । হাকিমের প্রণাম পেতেন, শান্তনু সঙ্গ দিতেন ।

এগিয়ে বাংলাকে আরও এগিয়ে নিয়ে যেতেন ।

কি বলেন ?

সন্ময় বন্দ্যোপাধ্যায় ( ৯৮৩০৪২৬০৭৮)

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.