কিভাবে আমি হিন্দু হলাম? কেন আজ আমি গর্বিত হিন্দু?

কিভাবে আমি হিন্দু হলাম? কেন আজ আমি গর্বিত হিন্দু?

১।পৃথিবীর হাজার হাজার ধর্মগুলোর প্রত্যেকে নিজ নিজ ধর্মানুসারী হওয়ার জন্য বলে।কিন্তু একমাত্র হিন্দু ধর্মই বলে সর্বপ্রথম, মানুষ হও।

২।সনাতন হিন্দু ধর্মে আমি স্রষ্টাকে নিজের মতো করে ভালোবাসতে ও ভক্তি, আরাধনা করতে পারি।
আমি ভালোবাসার ও ভক্তির পিয়াসী হলে স্রষ্টাকে রাধাকৃষ্ণ হিসেবে,
আমি স্রষ্টাকে পিতা হিসেবে শ্রদ্ধা ভক্তি করতে চাইলে ভোলানাথ,শিব হিসেবে,
মাতা ও শক্তির উপাসক হলে দূর্গা,সরস্বতী,কালী,
আমি বিদ্যার্থী,জ্ঞানের উপাসক হলে সরস্বতী গায়ত্রী হিসেবে,
এমনকি
আমি নিরাকার ঈশ্বরের উপাসনা করতে চাইলে ওঁ কার,যোগধ্যান এর মাধ্যমেও স্রষ্টার আরাধনা করতে পারি।

যে যথা মাং প্রপদ‍্যন্তে তাংস্তথৈব ভজামহ‍্যম্।
মম বর্ত্মানুবর্তন্তে মনুষ‍্যাঃ পার্থ সর্বশঃ।।(শ্রীমদ্ভাগবতগীতা ৪/১১)
অর্থ- যারা যেভাবে আমার প্রতি আত্মসমর্পণ করে,আমি তাদেরকে সেইভাবেই পুরুস্কৃত করি।হে পার্থ! সকলেই সর্বোতভাবে আমার পথ অনুসরণ করে।

গীতায় ৭ম অধ্যায়ে এব্যাপারে শ্রীকৃষ্ণ বলেন,

যো যো যাং তনুং ভক্তঃ শ্রদ্ধয়ার্চিতুমিচ্ছতি।
তস্য তস্যাচলাং শ্রদ্ধাং তামেব বিদধাম্যহম্।।২১।।
অনুবাদঃ পরমাত্মরূপে আমি সকলের হৃদয়ে বিরাজ করি। যখনই কেউ দেবতাদের পূজা করতে ইচ্ছা করে, তখনই আমি সেই সেই ভক্তের তাতেই অচলা শ্রদ্ধা বিধান করি।

স তয়া শ্রদ্ধয়া যুক্তস্তস্যারাধনমীহতে।
লভতে চ ততঃ কামান্ময়ৈব বিহিতান্ হি তান্।।২২।।
অনুবাদঃ সেই ব্যক্তি শ্রদ্ধাযুক্ত হয়ে সেই দেবতার আরাধনা করেন এবং সেই দেবতার কাছ থেকেই আমারই দ্বারা বিহিত কাম্য বস্তু অবশ্যই লাভ করেন।

৩।হিন্দু ধর্মে স্রষ্টা কখনোই নিজেকে স্রষ্টা হিসেবে স্বীকৃতি পাওয়ার জন্য মানুষকে স্বর্গের লোভ বা নরকের ভয় দেখাননা।হিন্দু ধর্মমতে আমার নিজের ভালো,খারাপ কর্মই আপনাকে স্বর্গে বা নরকে নিয়ে যাবে।

অন্ধং তমঃ প্রবিশন্তি যেহ সংভূতি মুপাস্তে।
ততো ভুয় ইব তে তমো য অসম্ভুত্যাঃ রতাঃ।।
-যজুর্বেদ ৪০/৯

অর্থ- যারা সকামকর্ম(অর্থাৎ ফলের আশায় কাজ করা,স্বার্থপরতা,লোভ ইত্যাদি) আসক্ত হয় তারা অন্ধকারে প্রবেশ করে এবং যারা “অসম্ভুত্যাং” অর্থাৎ বিধ্বংসী কার্যকলাপে লিপ্ত হয় তারা আরো অন্ধকারে প্রবেশ করেন।
এখানে,
প্রবিশ্যন্তি- প্রবেশ করে
সম্ভুতি- সকাম কর্ম
মু উপাস্তে- সংযুক্ত হওয়া
রত্যাঃ- আসক্ত হওয়া

৪।সনাতন হিন্দু ধর্মে স্রষ্টা তাঁকে ভয় পেয়ে তটস্থ হতে বলেন না,তাঁকে খুঁজতে,তাঁর সম্পর্কে জানতে ও তাঁকে ভালোবাসতে বলেন।

৫।সনাতন ধর্মে কখনোই অন্যধর্মালম্বীদের প্রতি বিদ্বেষ করা হয়নি।এমনকি স্রষ্টাকে মানলে স্বর্গ, না মানলে নরকের হুমকিও দেয়া হয়নি।সনাতন হিন্দু ধর্মের বেদ,গীতা,উপনিষদের অধিকাংশ শ্লোকই আমার নিজেকে জানা,চেনার ও মুক্তির জন্য লিখা। আমার অশান্ত মনের শান্তির জন্য লিখা।

৬।সনাতন ধর্মে স্রষ্টার কাছে আমার ভীত সন্ত্রস্ত অবস্থায় স্বীকৃতির চেয়ে গুরুত্বপূর্ণ আমাট ভালো থাকা, আমার মোক্ষ লাভ,আমার আত্মজ্ঞান ও মুক্তিলাভ।কারণ, স্রষ্টাকে আমি থেকে স্বীকৃতি দিলেও তিনি স্রষ্টা আর না দিলেও তিনি স্রষ্টা। সত্য কেউ মানলেও সত্য, আর না মানলেও সত্য।

৭।সনাতন ধর্মে স্রষ্টাকে প্রার্থনা করার ক্ষেত্রেও রয়েছে আমার স্বাধীনতা।
আমি চাইলে স্রষ্টার সাকার রূপ অর্থাৎ বিগ্রহের সামনে জপ,পূজা,অর্চনা,ভক্তি কীর্তন,আরতি, নিত্যসেবা করতে পারেন।আবার চাইলে নিরাকার ঈশ্বরের স্বরূপ জ্ঞান,ধ্যান,মন্ত্র, যজ্ঞ ও করতে পারি।

৮।সনাতন হিন্দু ধর্মে আমাকে স্রষ্টার আরাধনা শাস্তির ভয়ে করতে হয়না, আমি আনন্দে স্রষ্টার আরাধনা করতে পারি।

৯।সনাতন হিন্দু ধর্মে বহুত্বের সমন্বয়ে ঈশ্বরের একত্ববাদের বহিঃপ্রকাশ হয়েছে।এক ঈশ্বরের বিভিন্ন শক্তির রূপই দেবদেবী। দেবদেবীর আরাধনা করলেও ঈশ্বরেরই আরাধনা হয়।দেবদেবীরাই এক ঈশ্বরের বিভিন্ন রূপ।

একং সদ বিপ্রা বহুধা বদন্তি।(ঋকবেদ-১/৬৪/৪৬)
অর্থ -সেই এক ঈশ্বরকে পণ্ডিতগণ বহু নামে ডেকে থাকেন।

রূপং রূপং প্রতিরূপো বভুব
তদস্য রূপং প্রতিচক্ষণায় ৷
ইন্দ্রো মায়াভিঃ পুরুরূপ ঈয়তে
যুক্তা হস্য হরয়াঃ শতা দশ ৷৷(ঋগ্বেদ ৬.৪৭.১৮)
অর্থ-
“রুপে রুপে প্রতিরুপ (তাহার অনুরুপ) হইয়াছেন, সেই ইহার রুপকে প্রতিখ্যাপনের (জ্ঞাপনের) জন্য ৷ ইন্দ্র মায়াসমূহের দ্বারা বহুরুপ প্রাপ্ত হন ৷ যুক্ত আছে ইহার অশ্ব শত দশ (অর্থাৎ সহস্র) ৷”

১০।সনাতন হিন্দু ধর্মে রয়েছে বিভিন্ন বৈজ্ঞানিক মতবাদ।যা উপর ভিত্তি করেই আজকের আধুনিক বিজ্ঞান প্রতিষ্ঠিত।যেমনঃ
বিবর্তনবাদ-জন্মান্তরবাদে কীট থেকে বহু লক্ষ জন্মের পর মানব জন্ম লাভ,
গাছের প্রাণ- ১১লক্ষ বার জীবাত্মার জন্ম নেয়া
টিস্যু কালচার,টেস্টটিউব বেবি- মহাভারতের গান্ধারীর ওই পদ্ধতিতে ১০১ টি সন্তান জন্ম দেয়া,
জ্যোতিষশাস্ত্র- গ্রহ,নক্ষত্র,পূর্ণিমা,অমবস্যা সম্পর্কে জ্ঞান।
এছাড়া, আহ্নিক গতি,বার্ষিক গতি,পৃথিবীর ঘূর্ণন, সূর্যোদয়সহ চিকিৎসা শাস্ত্রে বহু ব্যাখ্যা আছে পবিত্র বেদগুলোতে।

১১।অন্যান্যরা যেখানে শুধু স্বজাতির জন্য প্রার্থনা করে তখন সনাতন হিন্দুরা বিশ্বের সকলের জন্য প্রার্থনা করে।
ওম
সর্বেসাম স্বস্তি ভবতু । সর্বেসাম শান্তিঃ ভবতু ।
সর্বেসাম পূর্ণম ভবতু । সর্বেসাম মঙ্গলম ভবতু ।
সর্বে ভবন্তু সুখীনাঃ । সর্বে সান্তু নিরামায়ঃ ।
সর্বে ভদ্রানি পশ্যন্তু । মা কসচিদ দুঃখ- ভাগবেত ।
ওম শান্তিঃ শান্তিঃ শান্তিঃ
অর্থঃ সর্বত্র স্বস্তি, শান্তি, সম্পদের পূর্ণতা আসুক। সকলের মঙ্গল হোক, রোগের নিরাময় হোক, সব জায়গায় প্রশান্তি বিরাজ করুক এবং সকলের সকল দুঃখ দূর হোক। ওম শান্তিঃ শান্তিঃ শান্তিঃ

এই সকল কারণেই আজ আমি মায়াবাদী এই ইউরোপ, কখনো আমেরিকা,এশিয়া বা অন্ধকারাচ্ছন্ন আফ্রিকা থেকে আলো,শান্তি ও মুক্তির পথ সনাতনে এসেছি।

বহু অন্যান্য ধর্মীয় ভাইবোনদের আদি ধর্ম সনাতনে ফিরে আসার কাহিনীর সমন্বয়ে রচিত।

সত্য, শান্তি,সুন্দর সনাতনে স্বাগতম

জয় হোক সনাতনের

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.