হিন্দু, বৌদ্ধ থেকে আফগানরা কী করে তালিবান হল ?
আফগানদের ১০০ বছর স্বাধীন ভাবে নিজের মতো করে বাঁচতে দিক বিশ্ব
কেন আফগান আর্মি তালিবানদের কাছে আত্মসমর্পণ করল, সেটা বুঝতে চাইলে আফগান ইতিহাস আমাদের জানা দরকার, আমি সংক্ষেপে লিখতে চেষ্টা করছি। আমি আফগানদের কোনো দোষ দিইনা। কেন একটা পাহাড়ি শান্তির জাতি তালিবান হয়ে গেল???
০১. ৮৭০ সালে বহিরাগত পারসী মুসলিম Saffarid dynasty জোর করে বৌদ্ধ, জরাথ্রুস্ট , হিন্দু ও ইহুদি ধর্মের দেশ আফগানিস্তানকে দখল করে, অত্যাচার ও ভীতি সৃষ্টির মাধ্যমে তাদের উপর ইসলাম চাপিয়ে দেয়। বৌদ্ধরাও এক সময় জোর করে আফগান হিন্দুদের বৌদ্ধ বানিয়েছিল। তারপর থেকে মহাভারতের গান্ধারীর দেশ আফগানিস্তান কোনো দিন শান্তির দেশ ছিল না। একটা সহজ সরল পাহাড়ি জাতি অত্যাচার ও ডিপ্রেশনে ভুগতে ভুগতে আজ পাকিস্তান ও আমেরিকার চালাকিতে তালিবান হয়ে সহি ইসলামের পথে বাঁচতে চায়। এদেরকে এদের মত বাঁচতে দেওয়া হোক। ভারত এদের সঙ্গে চুক্তি করে স্বীকৃতি দিক। আফগানরা আসলে খারাপ নীতিহীন ছিল না। আফগানরা হাজার হাজার বছর ধরে কেবল বাঁচার জন্য লড়াই করতে বাধ্য হয়েছে।
০২.. যারা আফগান সেনা হয়েছে, তারা সবাই অশান্তির আফগানিস্তানে বড় হয়েছে । 1963তে Daoud Khan সমাজ সংস্কারের চেষ্টা করেন তিনি সোভিয়েট ইউনিয়নের সঙ্গে ঘনিষ্ঠ হন ও সমাজে আবার দ্বন্দ্ব শুরু হয়। 1973 সালে আফগান রাজা ইতালি গেলে Daoud Khan রক্তপাতহীন অভ্যুত্থানের ম্যাধ্যমে ক্ষমতা দখল করে প্রেসিডেন্ট হন। ১৯৭৮ সালে রক্তাক্ত অভ্যুত্থানের মাধ্যমে People’s Democratic Party of Afghanistan (PDPA) ক্ষমতা দখল করে। সৃষ্টি হয় মুজাহেদিন গোষ্ঠী ও গেরিলা যুদ্ধ শুরু হয়। Dec 24, 1979 – Feb 15, 1989 পর্যন্ত সোভিয়েত এর বিরুদ্ধে লড়াই করেছে। 1992 এ নাজিবুল্লার পতন হয়। ১৯৯২ থেকে ২০০১ পর্যন্ত আফগানিস্তানে গৃহযুদ্ধ চলে। তারপর এলো পশ্চিমারা। ২০০১-২০২১।
আমরা কী দেখলাম: ইসলামতন্ত্র, রাজতন্ত্র, অভ্যুত্থানতন্ত্র, সমাজতন্ত্র, গণতন্ত্র ,গৃহযুদ্ধ ও পশ্চিমীতন্ত্র নিয়ে এক্সপেরিমেন্ট করতে করতে করতে এরা মানসিক অবসাদের এক জাতিতে পরিণত হয়েছে। প্রায় প্রত্যেক পরিবারের একজন না একজন প্রিয়জন এই দীর্ঘ সময়ে খুন হয়েছে। পরিবারে ভয়, বিদ্বেষের সৃষ্টি হয়েছে বংশ পরম্পরায়। ফলে তারা এক অবিশ্বাসীর জাতিতে পরিণত হয়েছে। তাই এখন এরা স্বপ্ন দেখছে , ধর্মের মধ্যেই হয়ত এদের শান্তির বীজ লুকিয়ে আছে। তাই এই দিশেহারা পাহাড়ি জাতি এখন ধর্মকে আঁকড়ে বাঁচতে চায়। আর এর সুযোগ তাদের নাগালে। কোনো ইসলামিক দেশেই গণতন্ত্র চলেনি। ইসলামের শাসন মানেই, ইসলামের ইতিহাস অনুযায়ী , খুন করে একজনকে সরিয়ে অন্যজনের ক্ষমতা দখল। কিন্তু এদের কাছে এ ছাড়া আর কোনো পথ নেই।
আফগানরা ৩ বার ব্রিটিশদের বিরুদ্ধেও খাইবার পাস নিয়ে লড়াই করতে বাধ্য হয়েছে। ১৩.১১.১৮৯৩ ডুরান্ড লাইন চুক্তি করে আফগানিস্তানের অর্ধেক অংশ ব্রিটিশরা ভারতে নিয়ে আসে. আজকের পাকিস্তানের অর্ধেকের মালিকানাই কিন্তু আফগানিস্তানের। আর আফগান জাতির হুঁশ ফিরলে, সেই জায়গা পাকিস্তানকে ছাড়তে হবে. তাই পাকিস্তান এদের ধর্মের আফিমে বুঁদ করে রেখেছে।
০৩. নানা গোষ্ঠীতে বিভক্ত , অধিকাংশ পাখতুন গোষ্ঠীর আফগান সৈন্য কখনোই মোটিভেটেড আর্মি টীম ছিল না।
০৪. এদের টীমে কেউ কাউকে বিশ্বাস করত না।
০৫. বিদেশী অস্ত্রের রক্ষনাবেক্ষন করতে জানত না, তাই অনেক যন্ত্র অকেজো
০৬. আর এরা জনগণ ও সরকারের ব্যাকিংও পায়নি, তেমনি জনগণ ও সরকারকে এরাও ভরসা বা বিশ্বাস করত না। চাচা আপন প্রাণ বাঁচা নীতি নিয়ে এরা আত্মসমর্পণ করেছে।
০৭. আর সব চেয়ে বড় রোল প্লে করেছে- ইসলাম।এরা মনে মনে ভাবত, তালিবান মানে কোরান, তার বিরুদ্ধে লড়াই করা মানেই সহি ইসলামের বিরুদ্ধে লড়াই। একজন মুসলিম কখনোই সহি ইসলামের বিরুদ্ধে লড়াই করে, হুরিস্তানের পথ বন্ধ করবে না। এদের দেশে শান্তি ছিল না বলে, দেশের সঠিক ইতিহাস এরা জানে না কারণ এদের সঠিক শিক্ষায় বার বার বাধা পড়েছে।
০৮. তা হলে পশ্চিমীরা কেন কখনো সেটা বুঝতে পারেনি? কারণ মুসলিমরা ভালো ব্যবসায়ী ও মনোবিদ। এরা কথায় ও আচরণে দ্রুত বিশ্বাস অর্জন করে ফেলে, কিন্তু মনের লক্ষ্য কাউকে বলে না। তাই আফগানরা সেই স্বপ্নই দেখাতো, পশ্চিমীরা যে স্বপ্ন দেখতে চাইতো।
যা হবার হয়েছে। এবার ওদেরকে ওদের মতো বিশ্ব চুক্তি করে বাঁচতে দিক। বিন লাদেন ও পাকিস্তান আফগানদের ব্যবহার করেছে। তাই ১১.০৯.২০০১। মূল দোষী কি আফগানরা? না।
মৃণাল মজুমদার, ১৬.০৮.২০২১