৯৯% ভারতীয় জানেনই না/জানার সুযোগই হয় নি পরাক্রমশালী মহারাজা বাপ্পা রাওয়ালের ইতিহাস :

ধর্মনিরপেক্ষতার আড়ালে ভারতের ইতিহাসকে এমনভাবে বিকৃত করা হয়েছে যা আমাদের কল্পনার অতীত। ভারতীয়দেরকে নিজের ইতিহাস সম্পূর্ণভাবে ভুলিয়ে দেওয়া হয়েছে। ভারতীয়দের ইতিহাস বইতে শুধু বাবর, আকবরের কাহিনী পড়ানো হয়। ইতিহাস বইতে পড়ানো হয় মুঘলরা এসেছিল, এরপর ইংরেজরা এসেছিল। তারপর ভারত স্বাধীন হলো। ব্যাস্। ইতিহাস শেষ…?

অবাক করার বিষয়, বিশ্বের সবথেকে প্রাচীন সভ্যতার ইতিহাস সম্পর্কে সঠিক জ্ঞান এবং তথ্য আজকের যুগে খুব কম ভারতীয়রই আছে। এমনকি মুঘলদের কিভাবে ভারতীয়রা তাড়িয়েছিল, তাও ইতিহাস বইতে সঠিকভাবে বলা হয় না।

ভারতের ইতিহাস সম্পর্কে একজন ভারতীয় যতটুকু জানেন, তার চাইতে ভিনদেশের লোকজন জানেন অনেক বেশি। কারণ ভারতে যে ইতিহাস পড়ানো হয় তার অনেকটাই বিকৃত। ভারতীয়দের পূর্বপুরুষদের বীরগাঁথা লুকিয়ে রাখা হয়েছে, যাতে ভারতীয়রা আসল ইতিহাস সম্পর্কে অন্ধকারে থেকে আত্মবিশ্বাসহীন, আত্মবিস্মৃত এক দুর্বল জাতিতে পরিণত হয়।

এই পরিস্থিতিতে আজ ভারতের এক মহান বীর রাজা সম্পর্কে আমরা জানবো যা পাঠ্যপুস্তকের ইতিহাস বইতে পাওয়া যাবে না।

ঘটনা ৭০০ খ্রিস্টাব্দের আশেপাশের, যখন মহম্মদ বিন কাশিম সিন্ধের মুলতান, ব্রাহ্মনাবাদ এলাকায় কব্জা করে নেয়। রাজা দাহীরকে হারানোর পর হিন্দুদের ছোট ছোট সেনা কাশিমকে আটকাতে ব্যর্থ হয়। মহম্মদ বিন কাশিম সিন্ধ কব্জা করার পর সেখানের মহিলাদের আরবে বিক্রি করতে শুরু করেন। একইসাথে সিন্ধের মন্দিরগুলোও ভাঙতে শুরু করেন। গরুজাতীয় সব প্রাণীকে রাস্তায় এনে প্রকাশ্যে কাটতে শুরু করে আরবি জিহাদিরা। সিন্ধে এভাবে অধর্ম ছড়িয়ে পড়তে থাকে।

ফলে অনেকে সিন্ধ ছেড়ে পালাতে শুরু করেন। এর মধ্যে কিছু মানুষ পৌঁছে যায় মেবাড়, যেখানে এক মহান হিন্দু রাজার রাজত্ব ছিল। সেই রাজার নাম ছিল বাপ্পা রাওয়াল। প্রথমত জানিয়ে দিতে চাই, বাপ্পা রাওয়াল একজন মহান পরাক্রমী রাজা ছিলেন, যার সাথে লড়াই করার অর্থ ছিল নিজের নিজের বিনাশ ডেকে আনা।

বাপ্পা রাওয়াল শাকাহারী ছিলেন এবং মহাকালের একজন পরম ভক্ত ছিলেন। ইতিহাসে আছে, হরিৎ ঋষির আশীর্বাদে মাত্র ২০ বছর বয়সে তিনি মৌর্য শাসকদের হারিয়ে মেবাড়ের রাজকার্য সামলে ছিলেন।

এদিকে মহম্মদ বিন কাশিমের অত্যাচারে সিন্ধ থেকে পালিয়ে আসা কিছু মানুষের মুখ থেকে বাপ্পা রাওয়াল সেখানকার মানুষের দুঃখকষ্ট জানতে পারেন। বাপ্পা রাওয়াল জনগণের উপর অত্যাচার ও মহিলাদের সন্মানহরণের কথা শুনে প্রচণ্ড ক্রোধিত হয়ে পড়েন। শিবালয় ও মন্দির ভাঙার কথা শুনে উনি নিজের সেনাপতি ও মন্ত্রীদের উদ্দেশ্য করে এক বড় ঘোষণা করেন।

বাপ্পা রাওয়াল বলেন, “আমাদের কেল্লা কেউ যদি জয় করে তাতে শুধু আমাদের মাথা ঝুঁকে যায়, কিন্তু আমাদের আস্থার স্থান মন্দিরগুলো কেউ ভাঙলে সেটা অধর্মের জয় হয়। আর আমি থাকতে সেটা হতে দিতে পারি না।”

এরপর বাপ্পা রাওয়াল সিন্ধকে অধর্ম থেকে মুক্তি দিতে বিশাল সেনা নিয়ে পৌঁছে যান সিন্ধপ্রদেশ। মুখে হরহর মহাদেব শ্লোগান, হাতে গেরুয়া পতাকা নিয়ে সিন্ধপ্রদেশে হাজির হয় বাপ্পা রাওয়ালের বিশাল সেনা।

এদিকে বাপ্পা রাওয়ালের সেনা যেন নিজের শক্তিপ্রদর্শনের কোনো সুযোগ খুঁজছিল। এক একজন সেনা ১০ জন আরবীকে বধ করতে শুরু করে। মহম্মদ বিন কাশিম বিশাল সেনার শক্তি দেখে শঙ্কিত হয়ে পড়ে এবং জলপথে আরবি হাজাজ এর কাছে পালিয়ে যায়। এসে আরবি হাজাজকে কাশিম সব কথা খুলে বলেন।

এদিকে বাপ্পা রাওয়াল দেখেন,আরবি সেনা পালাচ্ছে আরবের দিকেই। তখন বাপ্পা রাওয়াল আরবিদের তাড়িয়ে বেলুচিস্তান পার করে দেন। এভাবে আবার পুরো প্রদেশে শান্তি ফিরে আসে এবং সনাতন ধর্মের প্রকাশ ঘটতে থাকে। তারপর বাপ্পা মেবাড়ে ফিরে আসেন এবং রাজত্ব করতে থাকেন।

এরমধ্যে আরবি হাজাজ হারের বদলা নেওয়ার জন্য বিশাল আরবি সেনা নির্মাণ করে এবং দু তরফা হামলা করে। একদিকে মেবাড়ে , অন্যদিকে জয়সলমেরে হামলা করে আরবি জেহাদি সেনা। বাপ্পা রাওয়াল দ্বিগুণ শক্তি নিয়ে প্রত্যাঘাত করেন। বাপ্পা রাওয়াল তাঁর সেনা নিয়ে হাজাজের সীমায় ঢুকে পড়েন। অপরদিকে নাগভট্ট-প্রথম পশ্চিম প্রান্ত থেকে আরবীদের রক্ত স্নান করিয়ে দিতে শুরু করে।

এরপর বাপ্পা রাওয়াল মহাসেনা নির্মাণ করার সিধান্ত নেন এবং আশেপাশের রাজাদের সেনাকে সম্মিলিত করেন, যাতে করে আরবিদের সঠিক শিক্ষা দেওয়া যায়। নাগভট্ট, বিক্রমাদিত্য দ্বিতীয় এবং অন্যান্য রাজাদের সেনা নিয়ে মহাসেনা নির্মাণ করেন তিনি। সেই মহাসেনা নিয়ে বাপ্পা রাওয়াল আরবের দিকে রওনা দেন। আরবে মহাসেনার প্রথম আক্রমন সংঘটিত হয় আল-হাকাম বিন আলাবার উপরে। সেখানে গেরুয়া পতাকা স্থাপনের পর তামিম-বিন-জেয়েদ, জুনেদ বিন আব্দুল আল নুরির উপর আক্রমণ করা হয়। আরবের যে রাজ্যগুলি থেকে ভারতে আক্রমন করা হতো সেখানে গেরুয়া পতাকা স্থাপিত করে দেওয়া হয়।

তবে জেনে অবাক হবেন, শত্রুদের ধুলিস্যাৎ করার পরও বাপ্পা রাওয়াল সেখানে রাজত্ব করেননি। কারণ হিন্দু রাজারা কখনোই বিদেশের মাটিতে কব্জা করতো না। এরপর এই মহাসেনা গজনীর দিকে অগ্রসর হয়।

গজনীর শাসক সেলিম-আল-হাবিবকে শেষ করে দেয় মহাসেনা। এরপর প্রায় ৪০০ বছর আরবের জেহাদীরা ভারতে আক্রমন করার সাহস পায়নি। হ্যাঁ। ৪০০ বছর আর সাহস হয় নি।

বলা হয় যে,পাকিস্তানের রাওয়ালপিন্ডি শহরের নাম বাপ্পা রাওয়ালের নামানুসারে করা হয়েছিল।

সত্যি বলতে কী, বাপ্পা রাওয়ালের মত একজন মহান বীর রাজার এদেশে পুজো হওয়া উচিত। কিন্তু দুর্ভাগ্যজনক হলেও এটাই সত্যি যে, আমরা নিজেরা নিজেদের পুর্বপুরুষ সম্পর্কে অবগত নই। তাই বাবর আর আকবরের কাহিনী শুনে, নিজেদের গোলাম মনে করে, আত্মবিস্মৃত হয়ে থাকি। এর চেয়ে দুর্ভাগ্যের আর কিছু হতে পারে না ?

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.