কয়েক দশক ধরে অসমে সক্রিয় ছিল ন্যাশনাল ডেমোক্র্যাটিক ফ্রন্ট অব বোড়োল্যান্ড নামে এক জঙ্গি গোষ্ঠী। সোমবার তারা দিল্লিতে শান্তিচুক্তি সই করল কেন্দ্র ও রাজ্য সরকারের সঙ্গে। ওই ত্রিপাক্ষিক চুক্তিতে বলা হয়েছে, অসমের আঞ্চলিক অখণ্ডতা অক্ষুণ্ণ থাকবে। এনডিএফবি আর পৃথক রাজ্য দাবি করবে না। আগামী ৩০ জানুয়ারির মধ্যে আত্মসমর্পণ করবে ১৫০০ জঙ্গি। চুক্তি স্বাক্ষরের সময় উপস্থিত ছিলেন অসমের মন্ত্রী হেমন্ত বিশ্বশর্মা ও কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ। হেমন্ত বিশ্বশর্মা জানিয়েছেন, চুক্তি অনুযায়ী বোড়োদের উন্নয়নে সরকার ব্যয় করবে ১৫০০ কোটি টাকা।
অমিত শাহ বলেন, “এই চুক্তি ঐতিহাসিক। এর ফলে বোড়ো অধ্যুষিত অঞ্চল সহ সামগ্রিকভাবে অসমে উন্নয়ন হবে।” চুক্তিতে বোড়োদের তরফে এনডিএফবি বাদে বোড়ো স্টুডেন্টস ইউনিয়ন নামে এক সংগঠনও সই করেছে। অমিত শাহ সেকথা উল্লেখ করে বলেন, এর আগে বোড়োদের তিনটি গোষ্ঠীকে বাদ দিয়ে চুক্তি হয়েছিল। তাই শান্তি স্থায়ী হয়নি।
অমিত শাহ জানিয়েছেন, আত্মসমর্পণকারীদের মধ্যে কয়েকজনকে আধা সামরিক বাহিনীতে নেওয়া হবে। বোড়ো আন্দোলনে যাঁরা মারা গিয়েছেন, তাঁদের পরিবার ক্ষতিপূরণ পাবে পাঁচ লক্ষ টাকা করে।
এর আগে অসমের কোকরাঝাড়, উদালগুরি, বাকসা, বরপেটা, বঙ্গাইগাও ও আরও কয়েকটি জেলা নিয়ে তৈরি হয়েছিল বোড়ো টেরিটোরিয়াল কাউন্সিল। তার মধ্যে ছিল ৪০ টি বিধানসভা কেন্দ্র। এবার ৬০ টি বিধানসভা কেন্দ্র নিয়ে গঠিত হল বোড়ো টেরিটোরিয়াল রিজিয়ন। তার মধ্যে ৪৫ টি বিধানসভা সংরক্ষিত থাকবে বোড়োদের জন্য।
পাশাপাশি অসমের পার্বত্য এলাকার বাসিন্দা বোড়োদের ‘হিল ট্রাইব’ অর্থাৎ পার্বত্য উপজাতি হিসাবে স্বীকৃতি দেওয়া হবে। বোড়ো ভাষা লেখা হবে দেবনাগরী হরফে। তা সমগ্র অসমে অন্যতম সরকারি ভাষা হিসাবে স্বীকৃতি পাবে।
চুক্তিতে বলা হয়েছে, বোড়ো অধ্যুষিত অঞ্চলের জন্য বিরাট অঙ্কের আর্থিক প্যাকেজ দেওয়া হবে। রাজ্য সরকার আগামী তিন বছরে দেবে আড়াইশ কোটি টাকা। কেন্দ্রও দেবে একই পরিমাণ অর্থ। সব মিলিয়ে ওই অঞ্চলের উন্নয়নে ব্যয় হবে ১৫০০ কোটি টাকা।
সেই টাকায় গড়ে তোলা হবে শিল্প। ইকো-ট্যুরিজমের উপযোগী পরিকাঠামো গড়ে তোলা হবে। এছাড়া তৈরি হবে কেন্দ্রীয় বিশ্ববিদ্যালয়, জাতীয় ক্রীড়া বিশ্ববিদ্যালয়, আঞ্চলিক মেডিক্যাল ইনস্টিটিউট, হোটেল ম্যানেজমেন্ট ক্যাম্পাস, মাদার ডেয়ারি প্ল্যান্ট, ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অব টেকনোলজি এবং নবোদয় বিদ্যালয়। অমিত শাহ বলেন, আমরা এই চুক্তির রূপায়নে সবরকম চেষ্টা করব। নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে প্রতিটি প্রকল্পের কাজ শেষ হবে।