আচার্য প্রফুল্লচন্দ্র রায়ের স্বপ্নের বেঙ্গল কেমিক্যাল তাদের সব যন্ত্রপাতি,প্ল্যন্ট, কেমিক্যাল দ্রব্য,গোডাউন ইনসিওর করতে চায়, ইন্সিওরেন্স কোম্পানী থেকে বলা হল আগুন লাগার ছোটখাটো দূর্ঘটনা যদি তারা সামলে না নিতে পারে তাহলে বিমার আওতায় আনা অসম্ভব। সুতরাং অগ্নিনির্বাপক যন্ত্র কিনতেই হবে। বিমার জন্য যন্ত্র খুবই জরুরী, বিলেত থেকে আনতে হয়,দামেও বেশ চড়া। ওই অগ্নিনির্বাপক যন্ত্র কিনে আচার্য প্রফুল্ল রায়ের ছাত্র সতীশচন্দ্র দাশগুপ্ত নিজেই তৈরি করে ফেললেন ফায়ার কিং। দামে বিদেশি কোম্পানির থেকে অনেক সস্তা,আবার গুণগত মানে অনেকটা এগিয়ে। বাজারের যুদ্ধে বেঙ্গল কেমিক্যালের তৈরি ফায়ার কিংয়ের কাছে চুড়ান্ত ভাবে পর্যদুস্ত হল বিদেশি কোম্পানী।
রাজশেখর বসুর পরে সতীশচন্দ্র দাশগুপ্ত বেঙ্গল কেমিক্যালে কেমিস্ট পদে যোগ দিয়েছিলেন৷ তিনি প্রফুল্লচন্দ্রের প্রিয় ছাত্রদের অন্যতম।পরীক্ষার হাত নিখুঁত৷ এম.এ. পরীক্ষার হল থেকে শেষদিন বের হবার সময় মাস্টারমশাই তাঁকে বেঙ্গল কেমিক্যালে নিয়ে এসেছিলেন সময়টা ১৯০৬৷ বেঙ্গল কেমিক্যালের জন্য জরুরী অগ্নিনির্বাপক যন্ত্র কেনার ভার সতীশচন্দ্রের উপর পড়েছিল। একটা মাত্র সংস্থা তখন বিদেশি কোম্পানির যন্ত্র বিক্রি করত। সংখ্যায় অনেক গুলো কেনা হবে। স্বাভাবিকভাবেই সতীশচন্দ্র বিক্রেতা সংস্থা কে কিছুটা দাম কমাতে অনুরোধ করলেন। তবে ওই প্রস্তাবে বিক্রেতা সংস্থার পক্ষ থেকে বলা হল দাম কমানো যাবে না,কারণ এই অগ্নিনির্বাপক যন্ত্রের ব্যাপারটা বেশ জটিল,তারা অনেকটাই কম লাভে মাল বিক্রি করছে। সতীশচন্দ্র বেশি দাম দিয়ে একটা মেসিন কিনে নিলেন তারপর খুলেও ফেললেন সেই মেসিন,সবটা দেখে বুঝে বিদেশি কোম্পানীর থেকে ভাল একটা ডিজাইন করে বেঙ্গল কেমিক্যালের মিস্ত্রিদের দিয়ে আস্ত একখানা যন্ত্র বানালেন, পেটেন্ট নিলেন। তারপর বেঙ্গল কেমিক্যালে ফায়ার কিং তৈরি হতে লাগল। বিলেতের কোম্পানীর যন্ত্রের দাম যেখানে আশি টাকা তখন সতীশচন্দ্র দেখলেন তাঁর যন্ত্র তৈরিতে খরচ পড়ছে কুড়ি টাকা৷ দাম নির্ধারিত হল চল্লিশ টাকা৷ কার্যত প্রথম বিশ্বযুদ্ধের সময় বেঙ্গল কেমিক্যালের ফায়ার কিং এর চাহিদা আকাশছোঁয়া হয়। এক অর্ডারে আট লক্ষ টাকার অগ্নিনির্বাপক যন্ত্র বিক্রি করেছে বেঙ্গল কেমিক্যাল। চার লক্ষ টাকা লাভ হয়,এর পঞ্চাশভাগ অর্থাৎ দু-লক্ষ টাকা পেয়েছিলেন সতীশচন্দ্র৷ বেঙ্গল কেমিক্যাল ছাড়ার পরে তিনি সোদপুরে খাদি প্রতিষ্ঠান তৈরি করেছেন৷ শেষ জীবনে বাঁকুড়ার গোগরা গাঁয়ের অনুর্বর মাটিকে তিন ফসলি করেছেন৷ কৃষিবিজ্ঞানী এম.এস. স্বামীনাথন সেসব দেখে এসে বলেছিলেন ‘তাঁর কাজ দেখে মনে হয় অভিধানে অসম্ভব কিছু নেই’৷
সংকলনে ✍???? অরুণাভ সেন।।
ধ্রুবতারাদের খোঁজে
পুস্তক ঋণ, কৃতজ্ঞতা স্বীকার বিজ্ঞান ও বিজ্ঞানীদের মজার গল্প সুবীরকুমার সেন,ঐতিহ্য উত্তরাধিকার ও বিজ্ঞানী প্রফুল্লচন্দ্র,শ্যামল চক্রবর্তী