হিন্দু ধর্ম ও নারীর অধিকার

হিন্দুধর্ম বা সনাতন ধর্ম প্রাচীন বৈদিক ধর্ম থেকে চার হাজার বছর ধরে নানা জাতির নানা আচার-বিচার দ্বারা প্রভাবিত হয়ে বর্তমান পর্যায়ে এসেছে। হরপ্পা মহেজদার সভ্যতার এক হাজার বছর পর থেকে পরবর্তী চারহাজার বছরের ইতিহাস পর্যালোচনা করলে দেখা যাবে সবচেয়ে বেশী বিচ্যুতি ঘটেছে নারী অধিকার হরনের মাধ্যমে। পৃথিবীর প্রাচীনতম সভ্যতাগুলি অধিকাংশই ছিল মাতৃতান্ত্রিক।
মহেঞ্জোদারো সভ্যতাও ছিল মাতৃতান্ত্রিক সুতরাং নারীর অবস্থান ভারতের আদিমতম সভ্যতায় কেমন ছিল তাও ধারনা করা যায়। (বৈদিক সভ্যতা অনেকের মতে সিন্ধু সভ্যতারও আগে শুরু হয় আফগানিস্তানের উত্তরাংশে হিন্দুকুশ বা তৎসংলগ্ন এলাকায়)। বৈদিক সমাজ পুরুষষতান্ত্রিক হলেও বিদ্যার্জন থেকে শুরু করে জীবনের প্রতিটি ক্ষেত্রে নারীর ক্ষমতা ছিল পুরুষের সমান।ঋগ্বেদের শ্লোক সমূহ যে সকল মুনি ঋষিরা রচনা করেন তাদের মধ্যে ২০ জন ছিলেন ঋষিকা বা নারী। ঋষি বা ঋষিকা উচ্চশিক্ষিত জ্ঞানীকে বুঝাতো। লোপামুদ্রা, অপলা, উর্বশী অদিতি সবিতার নাম উল্লেখযোগ্য ।
বৈদিক যুগে সমাজজীবনের মূল ভিত্তি ছিল পরিবার এবং পরিবারে স্ত্রীর সম্মান ছিল সবার উপরে। ঋগ্বেদে পাওয়া যায় সকল নারীরা নিজেরা তাদের পতি নির্বাচন করতেন।। (ঋগ্বেদ ১০,২৭।১২ ) । নারীরা যুদ্ধে যেতেন (ঋগ্বেদ ।৯ ১.১১৮.০৮।) বিবাহের মন্ত্রে উল্লেখ করা হত “Excercise your authority as the main figure in your home, Address your company and others in the house listen to you and obey and care about what you have to say” (Rig Veda 10.85.27)” অর্থাৎ স্বামীগৃহে নিজেকে পরিবারের প্রধান হিসেবে জ্ঞান করবে এবং সকলের উপর কর্তৃত্ব প্রতিষ্ঠিত করবে। তারা তোমার নির্দেশ পালন করবে।”
ঋগ্বেদ অন্তত এক হাজার বছর ব্যাপী রচিত হয় যার ফলে সময়ের সাথে সাথে সমাজ জীবনে যে পরিবর্তন ঘটে তাতে নারীর মর্যাদা নানা উত্থান পতনের সম্মুখীন হয়। নারীর মর্যাদা এবং বর্ণভেদ বৈদিক যুগের শেষ ভাগে দেখা দেয়। তবে সেগুলি ঋগ্বেদে আদিতে বর্নিত শ্লোকের সাথে সাংঘর্ষিক এবং তার কারন যেমন হতে পারে সামাজিক অবস্থার পরিবর্তন তেমনি হতে পারে পরবর্তীকালে অনুপ্রবিষ্ট।
মনু সংহিতার অনেক শ্লোক এক্ষেত্রে উল্লেখযোগ্য। তবে যেহেতু এটা সংহিতা গ্রন্থ অর্থাৎ নিশ্চিতভাবেই বলা চলে যে মনু গ্রন্থে নানা জনের নানা কথা এতে প্রক্ষিপ্ত হয়েছে। তাই মনু স্মৃতিতে নারী বিদ্বেষীরা নানা শ্লোকের অনুপ্রবেশ করিয়েছে এমন সিদ্ধান্ত অনেকেই দিয়ে থাকেন। মনুশাস্ত্রকে নিয়ে নানা সমালোচনা করা হয় এবং সকলেই মনুকে ভয়ানক নারী বিদ্বেষী হিসেবেই জানেন। তবে সেই মনু সংহিতায় নারীকে যে অধিকার গুলি দেয়া হয়েছে সেগুলিও কি পালিত হচ্ছে?

মনু সংহিতায় নির্দেশ আছে পুত্রবধু, নববধু পরিবারে সর্বাগ্রে আহার গ্রহন করবেন। এমনকি অথিতিরও আগে। (মনু সংহিতা ৩ঃ১১৪)। পুত্রবধু ইত্যাদি স্ত্রীলোকেরা যে বংশে অনাদৃত হয় সেই বংশ বিনাশপ্রাপ্ত হয়। (মনু সংহিতা ৩ঃ৫৫-৫৯) যে ব্যক্তিকে তার স্ত্রীকে হেয় প্রতিপন্ন করার চেষ্টা করে সেই ব্যক্তিকে শাস্তি প্রদান করতে হবে যাতে কেউ পরবর্তীতে এমন ঘৃন্য কাজ না করে ( মনু সং হিতা ৮ঃ২৭৫)
বৃটিশ আমলে করা হিন্দু পারিবারিক আইন যখন করা হয় তখন হিন্দুরা ছিল অন্ধকারাচ্ছন্ন এক অবস্থার শিকার।বৈদিক যজ্ঞাদিতে পশু বলির বিধান রহিত করতেই জৈন বৌদ্ধ ইত্যাদি ধর্মের সূত্রপাত হয়েছিল এবং উপনিষদ সমূহ রচিত হয়েছিল। কিন্তু কোন প্রচেষ্টাই ভারতীয় সভ্যতার পতন থামাতে পারেনি বহিরাক্রমনের কারনে। ৮০০ বছর দমন নিপীড়নের পর এরা কার্যত অধ:পাতনের শেষ সীমায় পৌছায়।

আজ প্রতিটি ক্ষেত্রে সুবিচার পেতে হবে এবং নিজে সুবিচার করতে হবে। বাংলাদেশে হিন্দু নারী্দের অধিকার নিয়ে যারা সরব তাদের ধর্মস্বীকৃত আইনগুলির ব্যপারে অবহিত হতে হবে এসব আইনের প্রয়োগ নিশ্চিত করতে হবে। কোন অন্যায়কে ছাড় দেয়া হবেনা।

Via Samiran Bhattacharya

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.