প্রথমে অনুমতি দিলেও শেষ পর্যন্ত পশ্চিম মেদিনীপুরে আটকে দেওয়া হল হিন্দু মহাসম্মেলন। পশ্চিম মেদিনীপুরের চন্দ্রকোণা রোডে আজ শুক্রবার বেলা বারোটায় এই সম্মেলন হওয়ার কথা ছিল। পুলিশ তা বতিল করে দেওয়ায় চন্দ্রকোণা রোড-সহ বিভিন্ন জায়গায় খণ্ডযুদ্ধ বেধে যায় পুলিশের সঙ্গে। উদ্যোক্তারা স্পষ্ট ভাবে জানিয়ে দিয়েছিলেন, কোনও ভাবেই সভা বাতিল করা সম্ভব নয়। সভায় জমায়েতও শুরু হয়েছিল। তবে শেষ মুহূর্তে সভা বাতিল বলে ঘোষণা করেন হিন্দু জাগরণ মঞ্চের সাধ্বী সরস্বতী।
অনুষ্ঠান বাতিল করা প্রসঙ্গে সাধ্বী সরস্বতী বলেন, প্রশাসনকে সম্মান জানিয়েই তাঁরা অনুষ্ঠান স্থগিত করছেন। তাঁর দাবি, প্রশাসনের সঙ্গে তাঁর কথা হয়েছে, জানুয়ারি মাসে এই সম্মেলন করার অনুমতি দেওয়া হবে বলে জানানো হয়েছে। তবে প্রশাসনের তরফে এব্যাপারে আলাদা করে কিছু জানানো হয়নি। সাধ্বী সরস্বতীর দাবি নিয়ে প্রশাসন কিছু জানায়নি।
সভার উদ্যোক্তারা এদিন সকালেই জানান, প্রয়োজনীয় সমস্ত অনুমোদন তাঁদের আছে। সমষ্টি উন্নয়ন আধিকারিক বা বিডিওর কাছ থেকে তাঁরা সভার অনুমতি নিয়েছিলেন। তবে শুক্রবারের অনুষ্ঠানের অনুমতি বাতিল করেছেন মহকুমাশাসক বা এসডিও।
হিন্দু জাগরণ মঞ্চ আয়োজিত হিন্দু মহাসম্মেলনের সভায় শুক্রবার সকাল থেকে লোকজন যেতে শুরু করতেই পুলিশ তাদের পথ আটকায়। এই সভায় যোগ দিতে বৃহস্পতিবারই চন্দ্রকোণা রোডের কাছে একটি রিসর্টে চলে এসেছিলেন সাধ্বী সরস্বতী। মিছিল করে তিনি সভাস্থলে যাচ্ছিলেন। সেই মিছিল পুলিশ আটকাতেই শুরু হয় বচসা, তার থেকে ধস্তাধস্তি। প্রশাসনের আচমকা সিদ্ধান্ত বদলের প্রতিবাদে ও নির্ধারিত সভা করার দাবিতে অবরোধ করা হয় চন্দ্রকোণা রোড।
জেলার বিভিন্ন প্রান্ত থেকে চন্দ্রকোণা রোডে লোকজন আসতে শুরু করলে পুলিশ তাঁদের বাধা দেয়। শালবনিতেও একই ছবি দেখা যায়। তবে প্রচুর সংখ্যায় লোকজন সভায় যোগ দিতে এলে একসময় তারা পুলিশকর্মীদের ঘিরে ফেলে। শুরু হয় ধস্তাধস্তি। তখন অতিরিক্ত পুলিশবাহিনী পাঠাতে হয়।
সভা বাতিলের জন্য যাতে কোথাও কোনও রকম অশান্তি না হয়, সেজন্য চন্দ্রকোণা রোডে বিপুল সংখ্যায় পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে। জেলার সমস্ত থানাকে এ ব্যাপারে সতর্ক করে দেওয়া হয়েছে।
হিন্দু জাগরণ মঞ্চের পশ্চিমবঙ্গের প্রচার প্রমুখ পারিজাত চক্রবর্তী সকালেই বলেছিলেন, “তিন মাস ধরে এই অনুষ্ঠানের প্রস্তুতি চলেছে, এখন সভা বাতিল করা সম্ভব নয়। সাধ্বীকে ঘিরে মিছিল আটকে দিয়েছে পুলিশ। অথচ এই সভার জন্য যেসব অনুমতি প্রয়োজন, আমাদের কাছে তার প্রত্যেকটি রয়েছে।” তবে শেষ পর্যন্ত তাঁরা সভা করতে পারেননি।
শেষ মুহূর্তে অনুষ্ঠান বাতিলের যুক্তি হিসাবে পুলিশ জানিয়েছিল, দেশের বিভিন্ন জায়গায় নাগরিকত্ব (সংশোধন) আইনের প্রতিবাদে আইনশৃঙ্খলার অবনতি হচ্ছে। এখানেও যাতে কোনও ভাবে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে না যায়, সে জন্যই সভার অনুমোদন বাতিল করা হয়েছে।
তবে রাজনৈতিক মহল মনে করছে, কয়েকদিন আগেই রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী যে নির্দেশ দিয়েছেন, সেই কারণেই এই সভার অনুমতি বাতিল করা হয়েছে। মুখ্যমন্ত্রী বলেছিলেন, কোনও ধর্মীয় চরমপন্থী গোষ্ঠীকে যেন এরাজ্যে কোনও ধরনের সভা করার অনুমতি না দেওয়া হয়। এরাজ্যে হিন্দু ভোটের মেরুকরণ করে ভিত শক্ত করছে বিজেপি। এই অবস্থায় তৃণমূল কংগ্রেসের প্রধান ভরসা মুসলমান ভোট। কিন্তু পশ্চিমবঙ্গে ভিতরে ভিতরে কট্টর ইসলামপন্থী রাজনৈতিক সংগঠন মজলিস-এ-মুত্তাহিদিন মুসলিমিন (মিম) ভিত তৈরি করতে শুরু করায় রাজনৈতিক ভাবে সমস্যা হতে পারে তৃণমূলের। সেই কারণেই মুখ্যমন্ত্রীর এই সিদ্ধান্ত বলে মনে করছে রাজনৈতিক মহল।