হিমালয় পাহাড়ের বিভিন্ন জনজাতির সংস্কৃতির সঙ্গে জড়িয়ে রয়েছে বিভিন্ন বাদ্যযন্ত্র। আবার তাদের সংস্কৃতিতে নানারকম মুখোশের নামও পাওয়া যায়। এরকম বাদ্যযন্ত্র বা মুখোশের অনেক কিছুই হারিয়ে যাচ্ছে। সে কথা চিন্তা করে শিলিগুড়ি মহকুমার বাগডোগরা ভুট্টা বাড়িতে শুরু হয়েছে হিমালয় ওয়ার্ল্ড মিউজিয়াম। হিমালয়ান হেরিটেজ এন্ড রিসার্চ ডেভেলপমেন্ট সোসাইটির উদ্যোগে বাগডোগরার ভুট্টা বাড়িতে ছোটো আকারে মাত্র ছকাঠা জমি নিয়ে সেই মিউজিয়াম শুরু হলেও ভবিষ্যতে ওই এলাকাতে চার একর জমির ওপর আরও বড়ো মিউজিয়াম শুরু হতে চলেছে। এই মিউজিয়াম তৈরির মূল উদ্যোক্তা রাষ্ট্রপতি পুরস্কারপ্রাপ্ত ডঃ ওমপ্রকাশ ভারতী জানাচ্ছেন, ভবিষ্যতে বাগডোগরার মিউজিয়াম বড়ো করার পাশাপাশি ডুয়ার্সের লাটাগুড়ি এবং পাহাড়ের সোনাদাতে তাঁরা আরও মিউজিয়াম শুরু করতে চলেছেন। তাতে বন্যপ্রাণী এবং জঙ্গলের প্রতিফলনও ঘটবে।
তবে আপাতত বাগডোগরা ভুট্টা বাড়ির সেই মিউজিয়ামে হিমালয় পাহাড়ের বিভিন্ন জনজাতির ৪৬৫ রকম বাদ্যযন্ত্র রয়েছে। আর মুখোশ রয়েছে ৮০০ রকমের। বাগডোগরা বিমানবন্দরে নামার পর পাশেই রয়েছে ভুট্টা বাড়ি। পর্যটকরা পুজোর মধ্যে পাহাড় বেড়াতে এলে এক ফাঁকে এই মিউজিয়াম পরিদর্শন করতে পারেন বলেও জানিয়েছেন ডঃ ওমপ্রকাশ ভারতী।
মেডিটেশন বা মনঃসংযোগ বৃদ্ধি করার জন্য পাহাড়ের কিছু জনজাতি বিশেষ ধরনের ঘণ্টার মতো বাদ্যযন্ত্র ব্যবহার করেন। তার নমুনাও দেখা যাচ্ছে ওই মিউজিয়ামে। তাছাড়া লেপচা সম্প্রদায়ের বাদ্যযন্ত্র, ধীমাল সম্প্রদায়ের বাদ্য যন্ত্রও সেখানে রয়েছে। সেখানে রয়েছে সারেঙ্গী, নানারকম দোতারা। আদিবাসী সংস্কৃতি, ভারতের সনাতন বৈদিক সংস্কৃতি, বৌদ্ধ সংস্কৃতির প্রতিফলনও ঘটেছে সেই সংগ্রহশালায়।
১৯৯১-১৯৯২ সাল থেকে হিমালয় সংস্কৃতি নিয়ে গবেষণা ধর্মী কাজ চালিয়ে যাচ্ছেন ডঃ ভারতী। তিনি বলছেন, ভারতবর্ষে বহু রাজা মহারাজার মুকুট, তরোয়াল প্রভৃতি নিয়ে অনেক মিউজিয়াম রয়েছে। কিন্তু ভারতের বিভিন্ন জনজাতির সংস্কৃতি বা জনজাতির কাজকর্ম নিয়ে কম্যুনিটি মিউজিয়াম নেই। অথচ বিদেশে এই কম্যুনিটি মিউজিয়ামের বিশেষ গুরুত্ব রয়েছে। সেই দিক থেকে বিবেচনা করলে বাগডোগরায় ওই হিমালয়া ওয়ার্ল্ড মিউজিয়াম গোটা দেশে একটি ব্যতিক্রমী মিউজিয়াম।
হিমালয়ের সংস্কৃতির এত সুন্দর বৈচিত্র্য রয়েছে যে, তা পৃথিবীর অন্যত্র সেভাবে নেই বললেও চলে। সেদিক থেকে এই মিউজিয়াম ভবিষ্যতে পর্যটনের জন্যও বিরাট গুরুত্ব বহন করবে। ডঃ ওমপ্রকাশ ভারতী বলছেন, এই মিউজিয়ামের বিভিন্ন বাদ্যযন্ত্র এবং মুখোশ সংগ্রহের জন্য তাঁকে হিমালয়ের এ প্রান্ত থেকে সে প্রান্তে ছুটতে হয়েছে। তিনি দেখেছেন উত্তরবঙ্গের হিমালয় সংলগ্ন বিভিন্ন গ্রামে ক্রাফটের বিশেষ কাজ হয়। ক্রাফটের বাজারও রয়েছে ভালো। এজন্য দুশোটি আদিবাসী গ্রামে তিনি বিশেষভাবে ক্রাফটের কাজের ওপর প্রশিক্ষণও শুরু করতে চলেছেন। এর মাধ্যমে অনেকের কর্মসংস্থান হবে। আর মিউজিয়ামেও ঠাঁই পেতে পারে সেসব ক্রাফটের কাজ। রাজ্যের শিক্ষামন্ত্রীর কাছেও বার্তা দেওয়া হয়েছে, স্কুল ছাত্রছাত্রীরা যদি এসব মিউজিয়াম পরিদর্শন করে তবে তাদের অনেক কিছু জানাও হবে। মিউজিয়ামে ছাত্রছাত্রীদের শিক্ষামূলক ভ্রমণের প্রস্তাব কার্যকরী হতে পারে করোনা মুক্ত পরিবেশ তৈরি হওয়ার পরই। সেজন্য তাঁরা স্কুল খোলার অপেক্ষাতেও রয়েছেন বলে জানিয়েছেন ডঃ ভারতী।