দীর্ঘ একটা বছর! আতংকের মধ্যে দিন কেটেছে দেশের মানুষের। তবে অবশেষে স্বস্তির খবর। শুরু হল টিকাকরণ কর্মসূচি। প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর উদ্বোধনী ভাষণের মধ্যে দিয়ে দেশজুড়ে করোনার টিকারকরণ শুরু হল।
প্রধানমন্ত্রী জানিয়েছেন, এই প্রক্রিয়া আপাতত চলবে। একই সঙ্গে দেশবাসীকে সতর্ক করে মোদী বলেন, টিকা নেওয়া মানে এই নয় যে, মাস্ক পরা বা দূরত্ববিধি ভুলে যাবেন। একই সঙ্গে স্বাস্থ্যকর্মীদের ধন্যবাদ জানিয়ে মোদী বলেন, আজ স্বাস্থ্যকর্মীদের আগে টিকা দিয়ে, দেশ তার ঋণ শোধ করছে’!
ঠিক সকাল সাড়ে ১০ টায় বক্তব্য রাখেন মোদী। তিনি বলেন, আজকের দিনের জন্যই অপেক্ষা ছিল দেশবাসীর। অবশেষে সেই প্রতীক্ষার অবসান। খুব অল্প সময়ের মধ্যে মেড ইন ইন্ডিয়া দুটি ভ্যাকসিন তৈরি করে ফেলেছেন বিজ্ঞানীরা। আরও কয়েকটির কাজ চলছে। আর এজন্যে বিজ্ঞানীদের প্রশংসা প্রাপ্য। তারা দিন-রাত এক করে কাজ করেছেন।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ভ্যাকসিন তৈরি হতে অনেক সময় লাগে। এক্ষেত্রে খুব কম সময়ে জোড়া ভ্যাকসিন তৈরি হয়েছ বলে দাবি করেন প্রধানমন্ত্রী। ভারতের তৈরি এই ভ্যাকসিনের নজর গোটা বিশ্বের রয়েছে বলে জানিয়েছেন তিনি।
মোদী আরও বলেন, যার সংক্রমিত হওয়ার আশঙ্কা সবচেয়ে বেশি, তিনি আগে পাবেন টিকা। ‘চিকিত্সক-স্বাস্থ্যকর্মীরা ভ্যাকসিনের প্রথম হকদার। এঁদের সংখ্যা প্রায় ৩ কোটি। এঁদের ভ্যাকসিন দেওয়ার খরচ বহন করবে ভারত সরকার। তবে ভ্যাকসিনের দুটী ডোজ নিতে হবে বলে জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী।
প্রথম টিকার পর দ্বিতীয় ডোজ কবে, তা জানিয়ে দেওয়া হবে ফোনে। বিশেষজ্ঞদের মত মেনে দুই ডোজের মধ্যে এক মাস ব্যবধান রাখা হবে। টিকা নিয়েও মাস্ক-দূরত্ববিধি সতর্কতা মেনে চলুন। ভ্যাকসিনের সময়ে করোনার সময়ের মতো ধৈর্য্য রাখুন। ইতিহাসে এত বড় টিকাকরণ কর্মসূচি আগে হয়নি।
এক নজরে আরও কি বললেন প্রধানমন্ত্রী?
বিশ্বের শতাধিক দেশ আছে, যেখানে জনসংখ্যা ৩ কোটির কম। দ্বিতীয় ধাপে ভ্যাকসিন প্রাপকদের সংখ্যা ৩০ কোটিতে নিয়ে যাব। ভারত ছাড়া আমেরিকা, চিনের জনসংখ্যাই শুধু ৩০ কোটি। তাই এই টিকাকরণ অভিযান অভূতপূর্ব।
আমাদের বিশেষজ্ঞরা পরীক্ষা করে জানিয়েছেন ভ্যাকসিন নিরাপদ। এ নিয়ে কোনও গুজবে কান দেবেন না।
বিশ্বের ৬০ শতাংশ শিশু যে টিকা পায়, তা ভারতেই তৈরি হয়। এই ভ্যাকসিন ভারতে প্রয়োগের ক্ষেত্রে উপযুক্ত।
করোনা সংক্রমণের সময়ে ভারতে ১টি ল্যাব ছিল। তারপরে আমরা আত্মনির্ভরতার পথে হেঁটেছি। এই সংক্রমণ মানুষকে একলা করে দিয়েছে। শিশুদের মায়েদের থেকে আলাদা থাকতে হয়েছে।
বৃদ্ধ বাবা-মায়ের কাছে আসতে পারেনি সন্তান। অনেকে প্রিয়জনদের অন্তিম বিদায় পর্যন্ত জানাতে পারেননি। নিরাশার এই সময়ে কেউ আশার সঞ্চার করছিল। প্রাণ বিপন্ন করে ডাক্তার-নার্স-স্বাস্থ্যকর্মী-পুলিশরা লড়ে গিয়েছেন। এঁরা কতদিন বাড়ি ফিরতে পারেননি। অনেকে শেষপর্যন্ত আর বাড়ি ফিরতে পারেননি। তাঁরা নিজেদের প্রাণ বিসর্জন দিয়েছেন। আজ স্বাস্থ্যকর্মীদের আগে টিকা দিয়ে, দেশ তার ঋণ শোধ করছে। নিজেদের দুর্বলতাকে, শক্তিতে রূপান্তরিত করেছে ভারত।