এত ভয় এক তরুণকে ?
সরকার চালাবেন কি করে ? ত্রিপুরায় গিয়ে কি অজুহাত দেবেন ? ভাবছেন আজ কলকাতায় যা করলেন কেউ জানবেনা ?
কি করেছেন, শুনুন সবাই ।
শিক্ষক ঐক্য মুক্ত মঞ্চের মহিদুল ইসলাম আর গ্রাম বাংলার ছয় শিক্ষিকার কলকাতা হাইকোর্টে স্টে অর্ডার এবং সরকারি ফতোয়া বে আইনি ঘোষণার দাবীতে মামলা রুজু করার কথা ছিল । আইনি লড়াইটা লড়ার জন্য আইনজীবী শামীম আহমেদ তৈরি ছিলেন । সব শিক্ষিকার আজ হাইকোর্টে হাজির হওয়ার কথা ছিল । মহামান্য বিচারপতিদের সামনে নিজের নিজের আবেদন রাখার জন্য ।
কি সেই আবেদন ?
সম্প্রতি নিজেদের আবেদন মুখ্যমন্ত্রীর কানে দিতে নবান্নের সামনে পৌঁছেছিলেন সেই অপরাধে মহিদুল ইসলাম এবং আরও ১৭ জনকে শিক্ষা দফতর ৪০০ থেকে ৬০০ কিলোমিটার দূরের প্রান্তিক এলাকায় বদলির বিজ্ঞপ্তি ধরিয়েছিল শুক্রবার । সোমবারের মধ্যে সেখানে তাঁরা পৌঁছে জয়নিং না করলে তাঁদের চাকরিতে ছেদ পড়ে যাবে । এই অবস্থায় মহিদুল এবং অন্যান্য শিক্ষিকারা সোমবারই হাইকোর্টে কেস করার লক্ষ্যে কলকাতা পৌঁছান দূরের গ্রামগুলো থেকে । ওঠেন বেলেঘাটার ডোরা গেস্ট হাউসে ।
খবর পৌঁছায় লালবাজারে । রবিবার রাতেই আচমকা বেলেঘাটা থানা এরেস্ট করে নেয় মহিদুলকে । লক আপে নোংরা বাথরুমের পাশে সারা রাত মাটিতে শুইয়ে রাখে শিক্ষক মহিদুলকে । ওদিকে যে গেস্ট হাউসে ৬ জন গ্রামবাংলার শিক্ষিকা উঠেছিলেন সারা রাত তা ঘিরে রেখে দেয় কলকাতা পুলিশের অ্যান্টি রাউডির গোয়েন্দারা । ভোরের অন্ধকারেই বেলেঘাটা থানা গেস্ট হাউসের শিক্ষিকাদের ঘরে আচমকা হানা দেয় । টানতে টানতে তোলে প্রিজন ভ্যানে । তারপর বেলেঘাটা থানা হয়ে মহিদুল সহ শিক্ষিকাদের নিয়ে চলে যায় সোজা লালবাজারে ।
তারপর সারা দিন দফায় দফায় জেরার নামে চলে প্রহসন । এইসময় প্রিজন ভ্যানে করে লালবাজারে যাওয়ার সময়ই বুদ্ধি করে ঘটনাটা লাইভ করে দেন মহিদুলরা । নিমেষে তা ছড়িয়ে পড়ে সর্বত্র । সন্ধ্যের মুখে হাইকোর্ট থেকে ছুটে আসেন আইনজীবী শামীম আহমেদ । শেষ পর্যন্ত অবস্থা বেগতিক দেখে লালবাজার ২৪ ঘণ্টার এই প্রহসন বন্ধ করে ছেড়ে দেয় ভগবানগলার শিক্ষিকা ফজিলা তুমেশাকে, মুর্শিদাবাদের শিক্ষিকা ছবি চাকী দাস হাজরকে, সালবনির শিক্ষিকা জ্যোৎস্না টুডুকে, মহিসাদলের শিক্ষিকা শিখা দাসকে, নামখানার শিক্ষিকা পুতুল মণ্ডলকে । এবং মহিদুল ইসলামকে ।
এরেস্ট করেছিলেন ? উত্তর না কিন্তু হ্যাঁ । আবার হ্যাঁ কিন্তু না । লালবাজার কিছুতেই বলতে পারছে না ঠিক কি করেছেন তাঁরা । যেহেতু কি বলবেন তার নির্দেশ নাকি আসেনি নবান্ন থেকে । তাই । ঠিক এভাবেই সরকারের মুখটা পুড়িয়ে ছাড়তে হল সবাইকে । প্রায় ২৪ ঘণ্টার চূড়ান্ত অমানবিক হ্যারাসমেন্ট এর পর ।
কিরকম শুনবেন ? মহিদুলকে মুচলেখা দিতে হয়েছে বেলেঘাটা থানায় বেলেঘাটায় মহিদুলের শ্বশুর বাড়িতে আসতে গেলে এখন থেকে আগে মহীদুলকে জানাতে হবে বেলেঘাটা থানার আই সিকে । এই বাকি শিক্ষিকারা কলকাতার কোন গেস্ট হাউসে কিম্বা হোটেলে আর উঠতে পারবে না সরকারি মৌখিক ফতোয়া । এই ফতোয়া ভাঙলেই হয়ে যাবেন এরেস্ট ।
হ্যাঁ এটাই তাঁর অর্ডার । সেই তিনি তাঁর । তিনি, যিনি ত্রিপুরায়, দিল্লীতে গণতন্ত্র ফেরানোর স্বপ্ন ফেরি করতে হাঁক ডাক পাড়ছেন নিয়ম করে ।
2021-08-26