ও আমার মৃত ছোট ভাই। কোন ভারী পণ্য (Cargo) মোটেই নয়

দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে ১৯৪৫ সালে আমেরিকা পরপর দুটি পরমাণু (Nuclear) বোমা নিক্ষেপ করে জাপানের হিরোশিমা ৬ই আগস্ট, ১৯৪৫ এবং নাগাসাকিতে ৩ দিন পরে অর্থাৎ ৯ ই আগস্ট, ১৯৪৫, এই জোড়া পরমাণু বোমা হামলার শিকার হয়ে গোটা জাপান ধ্বংস স্তুপে পরিনত হয়। সাম্রাজ্যবাদী আমেরিকার এই অমানবিক নির্যাতনের বিরুদ্ধে সোচ্চার হয়ে ওঠে গোটা বিশ্ব। যুদ্ধ পরাজিত জাপান আত্মসমর্পণ করার পরে আমেরিকা ‘জো ও ডোনেল’ (Joe O’Donnell) নামে একজন বিশিষ্ট ফটোগ্ৰাফারকে বিধ্বস্ত জাপানের যাবতীয় তথ্য সহ ছবি তোলার জন্যে পাঠানো হয়। ‘জো’ দীর্ঘ সাত মাস ব্যাপি জাপানের যুদ্ধ নিপীড়িত অঞ্চলে প্রদক্ষিণ করেন।
বিশেষত হিরোশিমা যেখানে পরমাণু বিষ্ফোরণে এক লক্ষ ষাট হাজার মানুষ এবং নাগাসাকিতে আশি হাজারেরও অধিক মানুষ প্রাণ হারায়। মৃত্যু ব্যতীত বাড়ি ঘর সম্পদ বিনষ্ট হয়। বিপন্ন মানবতা। ভুলুণ্ঠিত মানুষের বেঁচে থাকার অধিকার।
ধ্বংস স্তুপে দাঁড়িয়ে ‘জো’ প্রচুর ধ্বংসলীলার ছবি গোটা দুনিয়ার জনসম্মুখে আনেন। নিন্দিত হয় আমেরিকা গোটা দুনিয়ার মানুষের জনমানসে।
‘জো’ এর তোলা একটি ছবি দেখে চক্ষুস্থির হয়ে যায় সারা বিশ্বের। যেখানে নাগাসাকিতে শব অন্তেষ্টিক্রিয়া লাইনে দাঁড়িয়ে একটি দশ বছর বয়সী একটি ছোট্ট ছেলে যার পিঠে বাঁধা তাঁর মৃত ভাই। বলাবাহুল্য, বাবা, মা পরিবার বাসস্থান সব কিছু হারিয়ে নিঃশ্ব,রিক্ত মৃত ভাইকে অন্তিম সৎকার করতে দীর্ঘ সময় ধরে লাইনে প্রতিক্ষারত। একজন গার্ড বলেছিল, তোমার বইতে কষ্ট হচ্ছে। আমার কাছে দাও। চোয়াল শক্ত করে আবেগহীন ভাষায় ছোট্ট ছেলেটির জবাব ‘ও আমার মৃত ছোট ভাই। কোন ভারী পণ্য (Cargo) মোটেই নয়’। চোখে জল নয় প্রচণ্ড জাত্যাভিমান আঘাত করেছিল সবকিছু হারানো ঐ ছোট্ট ছেলেটিকে। যাঁর মুখচ্ছবিটি আসলে ধ্বংস স্তুপে দাঁড়িয়ে মার্কিন সাম্রাজ্যবাদী আগ্ৰআসনের বিরুদ্ধে জাপানের ঘুরে দাঁড়াবার প্রতিকী ছবি হিসেবে বিবেচিত ও বহুল প্রচারিত ও বটে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.