ব্রাত্যবাবুদের দেখে একটুও অবাক হচ্ছি না l নিজের সিদ্ধান্তকে প্রতিষ্ঠা করতে নোবেল লরিয়েটদের ইতিহাস বলা পর্যন্ত শুরু করেছেন ব্রাত্য বসু l নাটক কিছুটা হলেও তো জানেন? টিভির দর্শকের নাড়ি বোঝেন l
কিন্তু কবি কাকে বলে জানেন মন্ত্রীমশায়? কোথা থেকে উৎপত্তি এই ‘কবি’ শব্দের? অধিকাংশ শব্দকোষ এবং উইকিপেডিয়াতে লেখা “যিনি কবিতা লেখেন তিনি কবি” l অনেকটাই “যিনি ডাক্তারি করেন, তিনিই ডাক্তার” l কিন্তু এই শব্দের উৎপত্তি কোথায়? উত্তর, বেদের যুগেই l ঋষি অরবিন্দ তাঁর বেদের রহস্য বইয়ের প্রাক-কথনে শুরুতেই বলছেন, “বেদ একটি পবিত্র জ্ঞানগ্রন্থ, অন্ত:স্ফূত কবিতাবলীর সুবিশাল সংগ্রহ, তত্ববিদ ঋষিদের কৃতি, এই ছিল প্রাচীনকালের বেদবিষয়ে সমাদর-ভাবনা l ঋষিরা স্বীয় জ্যোতিরুদ্ভাসিত মানসপটে পেয়েছিলেন সার্বভৌম মহৎ, শাস্বত আপৌরষেয় এক সত্য যা তাঁরা মননের দ্বারা গঠন করেননি l এই সত্যকে তাঁরা রূপ দিলেন মন্ত্রে, স্বত:প্রকাশিত শক্তিময়ী কবিতায় যারা প্রেরণা ও উৎস সাধারণ নয়, কিন্তু দিব্য l এই ঋষিরা ‘কবি’ আখ্যায় অভিহিত হতেন” l পরে বলেছেন, ” পরবর্তীযুগে যে কোন কাব্য-রচয়িতাকে কবি বলা হত l সেই যুগে কবি-পদটির সত্যদ্রষ্টা অর্থ জ্ঞাপিত হত l বেদের মধ্যেই এঁদের ‘কবয়: সত্যশ্রুত:’ সত্যের দ্রষ্টা ও শ্রোতারূপে বর্ণনা করা হয়েছে “
ব্রাত্য হয়তো বলবেন, সত্যদ্রষ্টা কোথায় পাবো? শ্রীজাত? সুবোধ? জয়? কে? বরং তাঁদের যিনি অনুপ্রাণিত করে জনতার সামনে “কা কা ছি ছি” কবিতা আবৃতি করতে শিখিয়েছেন, তিনিই তো এই কলিযুগের সবচেয়ে বড় সত্যদ্রষ্টা l
কিন্তু সত্য শ্রোতা? আপনারাই যদি শুধু মাননীয়ার চারপাশে বসে থাকেন এবং সারাদিন তাঁকে মিথ্যার কবিতা পাঠ করেন, তবে তো কবি হবার দ্বিতীয় শর্ত থেকেও কি তিনি বঞ্চিত হচ্ছেন না? শ্রেষ্ঠ কবির পুরস্কার তো দিলেন, কিন্তু কবি হবার সুযোগটুকু দিলেন কোথায়? অবশ্য তিনি যে সত্য শুনতে চান, সেটা আপনারা ছাড়া আর কেই বা গুছিয়ে বলতে পারবে? কলি যুগের সত্য হয়তো এখানেই সত্যযুগের সত্যের চেয়ে আলাদা l
সুদীপ্ত গুহ