খোকাবাবু ভারত দর্শনে যাবেন ।
কার কি বলার আছে । থাকবেই বা কেন । কিন্তু সেই ভারত দর্শন নিয়ে মিডিয়াতে ” কি হল কি হল ” রবটা কেন ! তাদের ভাবখানা কিছুটা এক বাঙালি যাচ্ছে বিশ্বজয়ে, দেখ বাঙালি দেখ ।
খোকাবাবু বড়দের শুভেচ্ছা নিতে যাচ্ছেন, প্রণাম করতে যাচ্ছেন, জড়িয়ে ধরছেন সেটাও খবর । ঘুরিয়ে ফিরিয়ে বিভিন্ন এঙ্গেল থেকে সুব্রত বকসী কি ভাবে কতটা তাকে জড়িয়ে ধরছেন, কতবার পিঠ ঠুকছেন, কতটা আন্তরিক আলিঙ্গন তার মিনিট টু মিনিট রুদ্ধশাস ধারা বিবরণী । খোকাবাবু কবে কখন কোন বাড়িতে যাবেন, জল খাবেন, প্রণাম ঠুকবেন তার লাইভ টেলিকাস্ট । অর্থাৎ পি কে এখনো গিয়েও যান নি । এই হাইপ তোলার অপারেশনে পুরোমাত্রায় আছেন । মিডিয়া সেটা ফ্রি তে পাওয়া বিদেশি মদ গেলার মত ঢক ঢক করে গিলছে । আর বমি করছে ।
কিন্তু প্রশ্নটা অন্যত্র ।
খোকাবাবু সংবাদ মাধ্যমে হাইপ তোলার জন্য বলেছেন – আমি সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক হয়ে অন্য রাজ্যে যাব তৃণমুলের খাতা খোলার জন্য নয়, তৃণমূলকে সেইসব রাজ্যে ক্ষমতায় আনার জন্য । কোন কোন রাজ্যে যাবেন ? সাসপেন্স বাড়িয়ে বলেছেন – এক মাসের মধ্যে জানাব সেই তালিকা ।
জানাবেন তো বটে । কিন্তু বাস্তবতাটা আসলে কি ? একটু ফিরে তাকাই ।
মিশন ১ ।।
আন্না হাজারে কে নিয়ে দিল্লিতে সভা করতে গিয়েছিলেন মমতা । মুম্বাই থেকে অভিনেতা বিশ্বজিৎকে নিয়ে গিয়েও সভায় লোকে জমাতে পারেননি । ফ্লপ শুধু নয়, সুপার ফ্লপ শো । দিল্লির রাজনীতিতে পা ফেলার ইচ্ছে ধাক্কা খেয়েছিল ।
মিশন ২ ।।
প্রণব মুখার্জির রাষ্ট্রপতি হওয়া আটকাতে গিয়েছিলেন মমতা মুলায়ম সিং যাদবকে সঙ্গে নিয়ে । মমতাকে আশা দিয়েও মুলায়ম মমতার হাত ছাড়তে তিন মিনিট সময় নেন নি । মুখ পুড়েছিল মমতার ।
মিশন ৩ ।।
২০১৯ । বি জে পি বিরোধী মঞ্চ তৈরি করে ইউনাইটেড ইন্ডিয়া স্লোগান দিয়ে ব্রিগেডে ১৮ টি দলকে জড় করেছিলেন । বাঙালি পি এম এর স্বপ্নে বিভোর হয়েছিল তৃণমূল আর এক শ্রেণীর মিডিয়া । ফল কি হয়েছিল সবাই জানেন ।
এবার রাজ্যের বাইরে তৃণমূলের বিস্তৃতির কথায় আসি ।
“ত্রিপুরায় এসে গেছে তৃণমূল” হাওয়া তোলা হয়েছিল । ৬০ আসনের বিধানসভায় একটি আসনও আজ নেই তৃণমূলের । মেঘালয়ে জোট রাজনীতির শরিক হয়ে চারটি আসন জেতার কয়েক মাসের মধ্যে সবাই এক যোগে দল ছাড়েন । কে ডি সিং এর সৌজন্যে ইউ পি তে ১ টি আসন পায় তৃণমূল । এক বছরের মধ্যে দল ছাড়েন বিধায়কটি । পাঞ্জাবে অফিস খুলেছিল তৃণমূল । শেষে লোক না থাকায় অকালি দল দখল নেয় সেই ঘরের । কেরলে গিয়ে বিজ্ঞাপন দিয়ে দল খুলেছিলেন ডেরেক ওব্রায়েন । এক বছরের মধ্যেই ২০ জন তৃণমূলের ঘোষিত সভাপতির ১৯ জন ফরোয়ার্ড ব্লকে জয়েন করেন । ঝাড়খন্ডে তৃণমলকে লোক রাখতে হয়েছিল পয়সা দিয়ে । পয়সা নিয়ে লোক পালিয়েছিল । এন আর সি নিয়ে আন্দোলনে অসমে গিয়ে লোক জড় করে অনেক সভা করেছেন । নিট ফল – শূন্য ।
এই বাস্তবতায় আরও যেটা সত্য – আজ পর্যন্ত কোন রাজ্যের আঞ্চলিক দল সেই রাজ্যের বাইরে সফলতা পায়নি গত ৭৪ বছরের ভারতের সংসদীয় রাজনীতির ইতিহাসে । পন্ডীচেরি ছাড়া ।
আর জে ডি, বহুজন সমাজবাদী পার্টি, এন সি পি, অখিলেসের এস পি, বিজু জনতা দল, ডি এম কে, শিবসেনা, অসম গণ পরিষদ, কিম্বা কেজরিওয়ালের আপ কোন দল তাদের রাজ্যের বাইরে সরকার গড়তে পেরেছে ? আজ পর্যন্ত ? কেউ বলতে পারবেন ? তৃণমূলের খোকাবাবুর ভারত দর্শনে যে সব মিডিয়া আজ আহা আহা রব তুলে আহ্লাদিত হচ্ছেন কেউ ভেবে দেখেছেন এই বাস্তবতাটা ?
এমনকি পি কে যিনি বিহারের মুখ্যমন্ত্রী হওয়ার স্বপ্নে ২০১৮ সাল থেকে নতুন দল তৈরি করার জন্য অফিস খুলে কর্মচারী রেখেছিলেন অচিরেই সেই ঝাঁপ বন্ধ করায় একসঙ্গে বেকার হয়েছিলেন ১৩০ জন কর্মী ।
প্রশ্ন তাহলে এই হাইপ তৈরি করার ছকে সামিল হচ্ছেন কি ভাবে সংবাদ মাধ্যমের ঢোল পিটিয়েরা ? একটা দল দিল্লি যাওয়ার চেষ্টা করতেই পারে । দোষের কিছু নেই । খোকাবাবু চাইতেই পারে পিসি আমার পি এম হবে । কিন্তু রিয়েলিটি তো অন্য কথা বলে ।
সেই রিয়েলিটিকে অস্বীকার করে কাকে বোকা বানানো হচ্ছে কেউ ভেবে দেখেছেন কি ? বাংলার বাইরে যে দলের একটা কর্মী দূরে থাক একটা সাইন বোর্ডও আজ নেই সেই দল খোকাবাবুকে ভারত ভ্রমণে বার করছে । যদি দেবগৌড়ার মত অ্যাক্সিডেন্টাল পি এম করা যায় পিসিকে, ফাঁকতালে । মন্দ নয় ভাবনাটা !
ভাবনায় তো কোন জি এস টি নেই !! খোকাবাবু জানেন দেখছি সেটা ।
সন্ময় বন্দ্যোপাধ্যায় ( ৯৮৩০৪২৬০৭৮ )