এমন সময় এই প্রতিবেদনটি লিখছি যখন নির্বিঘ্নে কাশ্মীরে ইদ পালিত হয়ে গেছে, ১৫ আগস্ট স্বাধীনতা দিবসও নির্বিঘ্নেই কেটে যাবে এমনটাই আশা করা যাচ্ছে। সত্যি কথা বলতে কী, এই দুটি দিন নিয়ে কাশ্মীরে প্রতিবছরই যথেষ্ট উত্তেজনা থাকে। এই সময়ই অমরনাথ যাত্রীদের ওপর হামলা, ১৪ তারিখ পাকিস্তানের স্বাধীনতা দিবস উদ্যাপনে চঁাদতারাওয়ালা সবুজ পতাকা উত্তোলন, এসব দেখতে ভারতবাসী অভ্যস্ত হয়ে গেছে। তবে ৩৭০ ধারা আর ৩৫এ ধারা উঠে যাবার পর এই অভ্যাস যে পাল্টে যাচ্ছে। তারও আগাম ইঙ্গিত মিলেছে। সাধারণত কাশ্মীরে কাফু উঠে গেলেই সেনাবাহিনীর ওপর পাথর ছোঁড়া হতো। এখন ব্যাঙ্ক, দোকান-পাট খুলছে, মানুষজন সারিবদ্ধভাবে এটিএমে লাইন দিয়ে টাকা তুলছেন; ১৪৪ ধারার মাঝেও মানুষ দলে দলে মসজিদে গিয়ে ইদের নামাজ পড়ছেন।
ভেতর থেকে সাংবাদিকদের রিপোর্ট, আর বাইরে থেকে তার যে ছবি ভারতবাসী দেখতে পাচ্ছেন তাতে বেশ সুখী কাশ্মীরের ছবিটাই ধরা পড়ছে। স্বাধীনতার পর থেকে এমন চকমপ্রদ কাশ্মীরের দৃশ্য কেউ দেখেছেন বলে কল্পনাও করতে পারা যায় না। সুখী কাশ্মীর ভারতবাসীকেও নিশ্চয়ই স্বস্তি দেবে। ৩৭০ আর ৩৫এ ধারা। কাশ্মীরকে এতদিন ভারতের থেকে যেন। বিচ্ছিন্ন উপত্যকা করে রেখেছিল। আজ যখন জম্মু-কাশ্মীর এবং লাদাখও কেন্দ্রশাসিত অঞ্চলে পরিণত হয়েছে, শুধু বিভেদকামী ৩৭০ ধারা ও ৩৫এ ধারা উঠে যাওয়াই নয়— কেন্দ্রের নিয়ন্ত্রণ এখন জম্মু-কাশ্মীরের ওপর সুদৃঢ় হয়েছে, পাকপন্থী বিচ্ছিন্নতাবাদীরা আর কাশ্মীরি যুবকদের ভারতীয় সেনাবাহিনীর ওপর পাথর ছুড়তে কিংবা ভারতীয় জনগণের ওপর হামলা চালাতে আর প্ররোচিত করতে পারবে না।
সব মিলিয়ে সুখী কাশ্মীরের পরিস্থিতি এখন গোটা দেশেই ফিল গুড’ ফ্যাক্টর এনে দিয়েছে। কিন্তু ভারতের এই সুখী পরিস্থিতিতে কতিপয় ব্যক্তি নেহাত অসুখী বোধ করছেন। তাদের কথা বলা দরকার। এই মুহূর্তে সবচেয়ে অসুখী দেশের নাম পাকিস্তান। পাক অধিকৃত যে কাশ্মীর, যা নেহরুর ভুলের মাসুল হিসাবে আজও পাকিস্তানের কবজায়, যে অংশটিকে ভারতের হাতে নিয়ে আসার প্রতিজ্ঞা করেছেন অমিত শাহ, তার বাস্তব প্রতিফলন ঘটতে এখনও অনেক দেরি। কিন্তু আপাতত ভারতের অভ্যন্তরীণ ব্যাপার নিয়ে পাকিস্তান এখনও যেভাবে কেঁদে-কঁকিয়ে চলেছে তাকূটনৈতিক ভাবে অত্যন্ত বেমানান। কিন্তু অক্ষমের আর্তনাদের মতো ভিক্ষাজীবী দেশ হয়েও ভারতের সঙ্গে বাণিজ্য বন্ধ করেছে। ভিক্ষাজীবীকে ভিক্ষা না দিলে দাতার কোনও ক্ষতি হয় না, বরং আর্থিক দু’পয়সা হলেও বাঁচে, কিন্তু ভিক্ষাজীবীর পরিস্থিতি যে কত সঙ্গীন হয় পাকিস্তানের সবজি বাজারেই তার প্রাথমিক ধাক্কায় মালুম হয়েছে।
তবে সবচেয়ে বড়ো রগড় হলো ভারতীয় কূটনীতিককে পাকিস্তান ছাড়তে বলার সঙ্গে সঙ্গে পাকিস্তানের ভারতে নিযুক্ত রাষ্ট্রদূত আবদুল বশিরকেও তারা প্রত্যাহার করে নিয়েছে। তবে বশির যে বোমাটা ফাটানোর সেটা ফাটিয়ে দিয়েছেন সফলভাবে। সোশ্যাল মিডিয়ায় ভাইরাল হওয়া একটি ভিডিয়োতে দেখা গেছেবসির ভারতীয় সাংবাদিক শোভা দে-কে পাকিস্তানের হয়ে লেখার প্রস্তাব দেয় এবং শোভা তাতে সম্মত হয় বলেও ভারতে নিযুক্ত সদ্য প্রাক্তন পাক হাই কমিশনার দাবি করে। আসলে ভারতীয় বুদ্ধিজীবীদের এই চেহারাটা আমাদের জানা হয়ে গেছে এতদিনে।
কাশ্মীরে শান্তি ফিরুক, স্থিতাবস্থা ফিরে পর্যটন শিল্প আরও জমজমাট হোক, শুধু যে কাশ্মীরের বিচ্ছিন্নতাবাদী, পাক মদতপুষ্ট শিবিরই এটা চায় না তা নয়, আন্তর্জাতিক সংবাদমাধ্যমের একাংশ এবং ইউরো ও পেট্রো ডলার পুষ্ট বুদ্ধিজীবী নামধারীরাও এর বিপক্ষে। যারা মতাদর্শগত ভাবে কমিউনিস্ট এবং ভারতে সেই দেউলিয়া অবলুপ্ত দলটিকে কাগজেকলমে হলেও এরাই বাঁচিয়ে রেখেছে। ‘সেকুলারিজম’ যে আসলে এদের গা বাঁচানোর বর্ম, মুখোশ— দেশের মানুষ তা ধরে ফেলেছেন। কারণ মুসলমান দরদ দেখানোর মরিয়া প্রচেষ্টায় নকশাল পরিচালিত কলকাতায় একটি প্রধান মুদ্রিত সংবাদমাধ্যম স্রেফ যে কাশ্মীরি জাতীয়তাবাদের নামে জঙ্গি কার্যকলাপকেই সমর্থন করে তা নয়, সুখী কাশ্মীরকে অশান্ত দেখানোয় এদের তোড়জোড় আর মিথ্যাচার দেখার মতো।
এক আন্তর্জাতিক সংবাদমাধ্যমকে মুখের ওপর সাংবাদিক অর্ণব গোস্বামী ‘মিথুক’বলায় লেফট লিবারালদের আর রাগের সীমা নেই। আসলে নেহরু ও আবদুল্লার পৈত্রিক জমিদারির অবসান অনেকদিন আগেই ঘটেছে, তবে কমিউনিস্ট বুদ্ধিজীবীদের মধ্যে সেই জমিদারি মেজাজটা ছিল। মোদী আর শাহ মিলে এমন কাণ্ড করছেন যে সেই মেজাজটুকুও এবার চটকে যাচ্ছে। হা, কপাল?
বিশ্বামিত্র-র কলম
2019-08-17