দেবী জ্ঞান সরস্বতীর আরাধনা হয়ে আসছে যুগ যুগ ধরে। দেবী জ্ঞান সরস্বতী বিরাজ করছেন, তেলেঙ্গানায়। সেখানে দেবীর একটি মন্দির রয়েছে। মন্দিরের চারিপাশ অরণ্যে ঘেরা। শ্বেতশুভ্র মন্দিরের গর্ভগৃহে দেবী সরস্বতী বিরাজ করছেন। এখানে দেবী শ্বেতবর্ণা নন। তার গাত্রবর্ণ হরিদ্রাভ। কারণ, দেবীর অঙ্গে দেওয়া হয় হলুদের প্রলেপ। ওখানকার ভক্তরা বিশ্বাস করেন, হলুদ খেলে মেধা ও জ্ঞান ক্রমশ বৃদ্ধি পায়। আমরা দেখেছি, সরস্বতীর বাহন রাজহংস। কিন্তু তেলেঙ্গানার জ্ঞান সরস্বতীর বাহন এক হরিদ্রাভ ময়ূর।বলা হয়ে থাকে, দেবী জ্ঞান সরস্বতী বিগ্রহের প্রাণ প্রতিষ্ঠা করেছিলেন স্বয়ং ব্যাসদেব। এর পিছনে পুরাণে একটি গল্প বলা রয়েছে। আসুন সেই পৌরাণিক গল্পটি জেনে নেওয়া যাক। ব্যাসদেব একবার খুব ভোরে বদরিকাশ্রম থেকে বেরিয়ে পড়েছিলেন। তিনি দক্ষিণের দিকে হাঁটা লাগিয়েছিলেন। দীর্ঘ কয়েক মাস কেটে যাবার পরেও তিনি হেঁটেই চলেছিলেন। অবশেষে ব্যাসদেব এসে পৌঁছান দক্ষিণ ভারতের এক গভীর অরণ্যে। পাহাড় দিয়ে ঘেরা সেই অরণ্যের আশেপাশে ছিল না কোন জনপদ। পাশে ছিল কেবল গোদাবরী নদী। পাখিদের কলরব, ময়ূরের নাচ দেখে ব্যাসদেবের মন প্রফুল্ল হয়ে যায়। তিনি ঠিক করেন, সেই অরণ্যেই থেকে যাবেন। এরপর ব্যাসদেব আশ্রয় নেন গোদাবরী নদীর কিনারায় একটি গুহায়।
সেখানে তিনি দীর্ঘকাল তপস্যা করেন। সেই সময় তাঁর জীবনধারণের জন্য একমাত্র সম্বল ছিল বনের ফুল, মধু ও পাহাড়ের ঝর্ণার জল। গুহার ভেতরে ব্যাসদেব কঠিন এক তপস্যায় বসে ছিলেন। সেই তপস্যা যখন শেষ হয়, তখন কেটে গিয়েছিল বহুযুগ। তপস্যা শেষ হবার পর ব্যাসদেব গোদাবরী নদীতে গিয়েছিলেন স্নান করতে। উল্লেখ্য, সেই দিনটি ছিল বসন্ত পঞ্চমী। সেই দিনেই ব্যাসদেব স্নান সেরে নিয়ে তিন মুঠো বালি তুলে নিয়েছিলেন। বালি দিয়েই নদীর তীরে তৈরি করেছিলেন তিনটি ঢিপি। এরপর ব্যাসদেব বালির সেই তিনটি ঢিপিকে দৈববলে পরিণত করে ফেলেছিলেন দেবী সরস্বতী, মা মহাকালী ও মা মহালক্ষ্মীর চন্দন কাঠের বিগ্রহে।তারপর ব্যাসদেব ত্রিদেবীকে তিন জায়গায় প্রতিষ্ঠিত করে আরাধনা শুরু করেছিলেন। পুজোর সময় ব্যাসদেব সরস্বতী বিগ্রহের সামনে ঘন্টার পর ঘন্টা আরাধনা করতেন। এরপর সদানন্দময়ী দেবী জ্ঞানের আশীর্বাদে কেটে গিয়েছিল ব্যাসদেবের মনের মধ্যে থাকা হতাশা। এরপর দেখতে দেখতে দক্ষিণ ভারতের ওই অরণ্যে, মহর্ষি ব্যাসদেবের অবস্থানের কথা লোকের মুখে ছড়িয়ে পড়ে। এরপর বেদব্যাসের নাম অনুযায়ী নামটির নাম দেওয়া হয় বাসারা। এরপর খ্রিস্টীয় ষষ্ঠ শতকে ওই এলাকায় চলে যায় নন্দাগিরি রাজত্বের অধীনে। সেই সময় মসনদে ছিলেন মহারাজ বিজিয়ালুডু।
একদিন মহারাজ বিজিয়ালুডু শিকার করতে এসেছিলেন মহর্ষি ব্যাসদেবের ওই অরণ্যে। সেখানে গিয়ে তিনি দেবী সরস্বতী ও মহর্ষি ব্যাসদেবের অলৌকিক কান্ডকারখানা শুনে মোহিত হয়ে যান। এরপর তিনি নিজেই গোদাবরী নদীর তীরেই তৈরি করেন অপূর্ব সুন্দর এক মন্দির। সেই মন্দিরে প্রতিষ্ঠা করা হয় ব্যাসদেবের তৈরি করা দেবী সরস্বতী মাকে। সরস্বতী মায়ের নাম রাখা হয়, ‘জ্ঞান সরস্বতী’। এরপর থেকেই শুরু হয় মন্দিরে নিত্য পুজো। ভক্তরা দূরদূরান্ত থেকে আসেন, জ্ঞান সরস্বতীর আশীর্বাদ নেওয়ার জন্য।