মানবের চিন্তা সম্ভাব্য যত দিকে বিস্তার লাভ করতে পারে তার কোনো দিকই ভারতবর্ষের অধরা ছিল না।সমৃদ্ধ ভারতবর্ষের যে ইতিহাস আজও আমাদের অবাক করে এবং যে ভারতীয় জ্ঞানসমুদ্র বর্তমান সময়েও বহুমূল্য রত্ন উপহার দিতে সক্ষম, তার মূলে ছিল ভারতবর্ষের অতুলনীয় শিক্ষা ব্যবস্থা।
চতুরাশ্রমের যে পর্যায়ে জ্ঞানের সাধনা করা হত তার নাম–‘ব্রক্ষ্মচর্য’ ।হিমবাহ থেকে উৎপন্ন হয়ে গঙ্গা নদী যেমন ভারতীয় জীবনকে পুষ্ট করে কিন্তু তার অন্তিম লক্ষ্য সমুদ্রে মিশে যাওয়া ঠিক তেমনি ভারতীয় শিক্ষা ব্যবস্থা জীবনের বৈষয়িক ব্যবহারিক দিকের চাহিদা পূরণ করলেও তার অন্তিম লক্ষ্য ছিল ‘ব্রক্ষ্মোপলব্ধি’।
সমৃদ্ধশালী ভারতবর্ষের শিক্ষার এই আদর্শের সঙ্গে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের জীবন ও কাজের নিবিড় যোগ। পিতা মহর্ষি দেবেন্দ্রনাথ ঠাকুরের ‘ব্রাহ্মসমাজ’-এর প্রভাব পড়েছিল রবীন্দ্রনাথের উপর । তাঁর বিভিন্ন লেখাতে উপনিষদের শ্লোকের ছড়াছড়ি ।কবির নিজের কথায়—
“……বাল্যে উপনিষদের অনেক অংশ বারবার আবৃত্তি-দ্বারা আমার কণ্ঠস্থ ছিল।
……কেবলমাত্র মুখস্থভাবে না; বারংবার সুস্পষ্ট উচ্চারণ করে আবৃত্তি করেছি এবং পিতার কাছে গায়ত্রীমন্ত্রের ধ্যানের অর্থ পেয়েছি।”
(মানুষের ধর্ম)
রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের মত শিক্ষার লক্ষ্য ও পদ্ধতি এবং প্রাচীন ভারতবর্ষের তথা উপনিষদীয় যুগের শিক্ষা দর্শন ছিল অভিন্ন।
ভারতবর্ষে একদিন ধ্বনিত হয়েছিল ‘বসুধৈব কুটুম্বকম্’। কিন্তু এই তপস্যার জন্য এক তপোভূমি দরকার–সেই সাধনার ক্ষেত্র ‘ভারতবর্ষ’ ; সেই সাধনার জন্য যে পদ্ধতি তা ‘ভারতীয় শিক্ষা পদ্ধতি’।
রবীন্দ্রনাথ চেয়েছিলেন শিক্ষার মাধ্যমে মানবের উত্তরণ ঘটবে , সে বিশ্বমানবে পরিণত হবে— দেশের গন্ডি পেরিয়ে সে এই বিশ্বের একজন বলে নিজেকে মনে করবে।
মানবাত্মার সঙ্গে ‘বিশ্বাত্মা’র এই যোগ বাস্তবায়ন সম্ভব প্রকৃতির কোলে— এই ছিল বিশ্বকবির চিন্তা।
এই বিশ্বের প্রতিটি মানুষের সঙ্গে তার যোগ , সে তার আত্মীয় ; পরমব্রক্ষ্মের অংশ তারই মতো–এই উপলব্ধি জাগ্ৰত হলে একটি দেশ আপন স্বার্থসিদ্ধির জন্য অন্য দেশকে মারণ অস্ত্র প্রয়োগে ধূলিসাৎ করবে না , বৈজ্ঞানিক উৎকৃষ্টতার প্রদর্শন ভয়াবহ অস্ত্রের মাধ্যমে হবে না।ইউরোপের বৈভবের অন্তঃসারশূন্যতা দুটি বিশ্বযুদ্ধে দেখা গেছে , বর্তমানে ইউক্রেন-রাশিয়ার যুদ্ধ আমরা প্রত্যক্ষ করছি।
রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর ‘আশ্রমের রূপ ও বিকাশ’ প্রবন্ধে বলেছেন—
“… একটা কথা আমার নিজের মনে হয়েছে যে, তপোবনের শিক্ষাপ্রণালীতে খুব একটি বড়ো সত্য আছে। যে বিরাট বিশ্বপ্রকৃতির কোলে আমাদের জন্ম তার শিক্ষকতা থেকে বঞ্চিত বিচ্ছিন্ন হয়ে থাকলে মানুষ সম্পূর্ণ শিক্ষা পেতে পারে না।”
রবীন্দ্রনাথ মনে করতেন ; ‘শিক্ষাদান’ দিনের একটি বিশেষ সময়ের বিচ্ছিন্ন ঘটনা নয় , সারাদিনব্যাপী শিক্ষকের সাহচর্যে বিভিন্ন দৈনন্দিন কাজকর্মের মাধ্যমে সেবা ও সহযোগিতার অনুশীলনে প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে শিক্ষালাভ সম্ভব।’শিক্ষক’ হয়ে উঠবেন , শিক্ষার্থীদের কাছের মানুষ আর এই ধরনের ব্যবস্থার রূপায়ণ সম্ভব আশ্রমভিত্তিক শিক্ষার মাধ্যমে যার অপরনাম ‘গুরুকুল’। কবিগুরুর কথায়—-
“অত্যন্ত বেদনার সঙ্গে আমার মনে এই কথাটি জেগে উঠেছিল, ছেলেদের মানুষ করে তোলবার জন্যে যে-একটা যন্ত্র তৈরি হয়েছে, যার নাম ইস্কুল, সেটার ভিতর দিয়ে মানবশিশুর শিক্ষার সম্পূর্ণতা হতেই পারে না। এই শিক্ষার জন্যে আশ্রমের দরকার, যেখানে আছে সমগ্রজীবনের সজীব ভূমিকা।”
(আশ্রমের রূপ ও বিকাশ)
রবীন্দ্রনাথের এই শিক্ষাতত্ত্ব শুধুমাত্র তত্ত্বজ্ঞানেই সীমাবদ্ধ ছিল না , তিনি তাঁর তত্ত্বের সফল রূপায়ণ করেছিলেন শান্তিনিকেতনে ‘ব্রক্ষ্মচর্যাশ্রম’ প্রতিষ্ঠা করে।কবির একসময় মনে হয়েছিল , সাহিত্য সৃষ্টির থেকে শিক্ষায় সংস্কারের কাজে যোগদান জরুরী। এজন্য তিনি ব্যক্তিগত জীবনে প্রিয়জন বিয়োগ , ঋণভারে জর্জরিত হয়েও নিজের শিক্ষা সংস্কারের সাধনায় অবিচল ছিলেন।
প্রাচীন ভারতে শিক্ষার লক্ষ্য — পারমার্থিক ও ব্যবহারিক দুইই ছিল।
ব্যবহারিক জ্ঞান কে ভারতবর্ষ যে কখনোই উপেক্ষা করে নি তাঁর সাক্ষ্য পাওয়া যায় চরক-শুশ্রুত এর স্বাস্থ্যবিজ্ঞান , আর্যভট্ট-বরাহমিহির এর জ্যোতির্বিজ্ঞান , প্রাচীন মন্দিরগুলির স্থাপত্য , মরিচা বিহীন লোহা এবং বিশাল পণ্যবাহী জাহাজ নির্মাণে।
কিন্তু বিজ্ঞানের প্রয়োগ প্রকৃতিকে ‘বশ’ করে রাখতে হয় নি ; প্রকৃতির সঙ্গে লড়াই করে , শোষণ করে নয় প্রকৃতিকে দোহন করার পদ্ধতি ছিল বিজ্ঞান।
রবীন্দ্রনাথ বলেছেন…”
জীবিকার লক্ষ্য শুধু কেবল অভাবকে নিয়ে, প্রয়োজনকে নিয়ে; কিন্তু জীবনের লক্ষ্য পরিপূর্ণতাকে নিয়ে– সকল প্রয়োজনের উপরে সে। এই পরিপূর্ণতার আদর্শ সম্বন্ধে য়ুরোপের সঙ্গে আমাদের মতভেদ থাকতে পারে, কিন্তু কোনো একটা আদর্শ আছে যা কেবল পেট ভরাবার না, টাকা করবার না, এ কথা যদি না মানি, তা হলে নিতান্ত ছোটো হয়ে যাই।”(আশ্রমের রূপ ও বিকাশ)
পারমার্থিক লক্ষ্য কে চূড়ান্ত জেনে ব্যবহারিক জ্ঞানলাভ ছিল রবীন্দ্রনাথের শিক্ষা-দর্শন।বিশ্বকবি
পুত্র রথীন্দ্রনাথ কে ‘কৃষিবিজ্ঞান’ পড়তে বিদেশে পাঠিয়েছিলেন কিন্তু তাকে ছোটোবেলায় ‘কেদারনাথ’ ভ্রমণে পাঠিয়েছিলেন আত্মীয়দের সমালোচনার আশঙ্কা করেও।
তাঁর নিজের কথায়—-
“যখন রথীর বয়স ছিল ষোলোর নীচে তখন আমি তাকে কয়েক জন তীর্থযাত্রীর সঙ্গে পদব্রজে কেদারনাথ-ভ্রমণে পাঠিয়েছি, তা নিয়ে ভৎর্সনা স্বীকার করেছি আত্মীয়দের কাছ থেকে, কিন্তু এক দিকে প্রকৃতির ক্ষেত্রে অন্য দিকে সাধারণ দেশবাসীদের সম্বন্ধে যে কষ্টসহিষ্ণু আভিজ্ঞতা আমি তার শিক্ষার অত্যাবশ্যক অঙ্গ বলে জানতুম তার থেকে তাকে স্নেহের ভীরুতাবশত বঞ্চিত করি নি।”
আধ্যাত্মিক চেতনার বৃদ্ধি জ্ঞানলাভের সহায়ক হবে–এই ছিল রবীন্দ্রনাথের চিন্তা।
ইংরেজ আমলে ‘স্কুল’ হিসেবে স্বীকৃতি পাওয়ার জন্য ন্যূনতম উপকরণ হিসেবে টেবিল , চেয়ার , ঘর ইত্যাদির যে ফর্দ বাধ্যতামূলক করা হলো , সেই দাবি পূরণ করতে না পেরে গ্ৰামের টোলগুলি বন্ধ হতে লাগলো।এই ঘটনা কবিগুরুর দৃষ্টি এড়িয়ে যায় নি।
উপকরণের বহুলতা বৃদ্ধির সঙ্গে , শিক্ষাব্যবস্থার উন্নতি যে সমানুপাতিক নয় ,বরং প্রাথমিক শিক্ষার ক্ষেত্রে উপকরণের বিরলতা আরো গভীরভাবে শিখতে সহায়তা করে—- রবীন্দ্রনাথের এই চিন্তার ফল তাঁর আশ্রম। ভারতবর্ষের সনাতন শিক্ষা পদ্ধতিকে প্রতিস্থাপন করে যে মেকলীয় শিক্ষা পদ্ধতি ইংরেজরা চাপিয়ে দিয়েছিল তার কুফল সম্পর্কে রবীন্দ্রনাথ অবহিত ছিলেন এবং ‘শিক্ষার বিকিরণ’ প্রবন্ধে লিখেছেন—
“এ কালে যাকে আমরা এডুকেশন বলি তার আরম্ভ শহরে। তার পিছনে ব্যাবসা ও চাকরি চলেছে আনুষঙ্গিক হয়ে। এই বিদেশী শিক্ষাবিধি রেলকামরার দীপের মতো। কামরাটা উজ্জ্বল, কিন্তু যে যোজন যোজন পথ গাড়ি চলেছে ছুটে সেটা অন্ধকারে লুপ্ত।”
তাই স্বদেশের শিক্ষার ভার , ‘স্বদেশী সমাজ’ কেই নিতে হবে—- এই ছিল তাঁর সিদ্ধান্ত আর তাই কবিগুরু ১৯০৬ সালে প্রতিষ্ঠিত ‘জাতীয় শিক্ষা পরিষদ’ এ যুক্ত হন।
এই স্বদেশী শিক্ষাব্যবস্থার মাধ্যমে কিভাবে ‘স্বদেশবোধ’ জাগবে ? এর উত্তর স্পষ্টভাবে পাওয়া যায় রবীন্দ্রনাথের ‘ভারতবর্ষের ইতিহাস’ প্রবন্ধে—-
“এই স্বদেশী প্রণালীর শিক্ষার প্রধান ভিত্তি স্বার্থত্যাগপর ভৃতিনিরপেক্ষ অধ্যয়ন-অধ্যাপনরত নিষ্ঠাবান গুরু এবং তাঁহার অধ্যাপনের প্রধান অবলম্বন স্বদেশের একখানি সম্পূর্ণ ইতিহাস।”
স্বদেশের সেই ইতিহাস হবে ভারতবর্ষের দিক থেকে লেখা , কয়েক হাজার বছরের ঐতিহ্যবাহী যে সংস্কৃতির শিকড় ভারতবর্ষের মর্মস্থান অধিকার করে আছে তার পক্ষে লেখা কিন্তু শিক্ষাবিদ রবীন্দ্রনাথের আক্ষেপ ছিল যে ‘ইতিহাস’ মুখস্থ করে শিক্ষার্থীদের পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হতে হয় তা ভারতবর্ষের সংস্কৃতি কে আক্রমণকারী বিদেশীদের মহিমান্বিত করে এবং এই ‘ইতিহাস’ স্বদেশের সঙ্গে যোগ কে দুর্বল করে।
রবীন্দ্রনাথ ‘কথা’ কাব্যগ্রন্থ এবং ‘শিখ স্বাধীনতা’ , ‘বীর গুরু’ ইত্যাদি প্রবন্ধে ভারতবর্ষের সঠিক ইতিহাস সামনে আনার চেষ্টা করেছেন কিন্তু স্বাধীন ভারতবর্ষেও সেই রচনাগুলো শিক্ষার্থীদের সামনে আনা হয় নি।
ভারতবর্ষ কে বুঝতে হলে , তাঁর নিজস্ব ‘ভাষা’ই যে সর্বোৎকৃষ্ট তা রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর বলেছেন। নিজের উদাহরণ দিয়ে তিনি বারবার বোঝাতে চেয়েছেন বাল্যকালে মাতৃভাষায় শিক্ষাগ্ৰহণ একদিকে তার সাহিত্যসৃষ্টি তে সহায়ক হয়েছে আবার বিদেশী ভাষা আত্মস্থ করতেও তাঁর অসুবিধা হয় নি।পঞ্চাশ বছর বয়স পর্যন্ত কোনো ইংরেজি সাহিত্য রচনা না করেও পরবর্তীতে কবিগুরু নিজে ‘গীতাঞ্জলী’র ইংরেজি অনুবাদ করেছিলেন আর তা বিশ্বমঞ্চে সর্বোচ্চ সম্মান ,’নোবেল প্রাইজ’ লাভ করেছিল।
আর ভারতবর্ষকে বুঝতে হলে সংস্কৃত ভাষার বিকল্প নেই তা রবীন্দ্রনাথ দ্ব্যর্থহীনভাবে বুঝিয়ে দিয়েছেন—–“ইংরেজি ভাষার ভিতর দিয়ে নানা জ্ঞাতব্য বিষয় আমরা জানতে পারি, সেগুলি অত্যন্ত প্রয়োজনীয়। কিন্তু সংস্কৃত ভাষার একটা আনন্দ আছে, সে রঞ্জিত করে আমাদের মনের আকাশকে; তার মধ্যে আছে একটি গভীর বাণী, বিশ্বপ্রকৃতির মতোই সে আমাদের শান্তি দেয় এবং চিন্তাকে মর্যাদা দিয়ে থাকে।”(আশ্রমের রূপ ও বিকাশ)
রবীন্দ্রনাথের লেখনীতে প্রাচীন ভারতীয় শিক্ষাব্যবস্থার যে যুগানুকূল প্রয়োগ বারবার উঠেছে আর সে প্রয়োগ তিনি বাস্তবায়িত করেছেন ‘বিশ্বভারতী’ বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার মধ্য দিয়ে।
‘বিশ্বভারতী’ কে তিনি ভারতের সঙ্গে বাকী বিশ্বের মিলনক্ষেত্র রূপে তুলে ধরতে চেয়েছিলেন কিন্তু ভারতবর্ষের নিজস্ব ‘জ্ঞান’ এর চর্চা বাদ দিয়ে নয় এবং সেই ব্যবহারিক জ্ঞান শুধু বিশ্ববিদ্যালয়ে সীমাবদ্ধ না থেকে সমাজে সরাসরি প্রয়োগ হবে আর এইভাবেই সমাজের সঙ্গে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের যোগসাধন হবে।’বিশ্বভারতী’ প্রবন্ধে বিশ্বকবির এই ইচ্ছাই প্রকট হয়—-
“ভারতবর্ষে যদি সত্য বিদ্যালয় স্থাপিত হয় তবে গোড়া হইতেই সে বিদ্যালয় তাহার অর্থশাস্ত্র, তাহার কৃষিতত্ত্ব, তাহার স্বাস্থ্যবিদ্যা, তাহার সমস্ত ব্যবহারিক বিজ্ঞানকে আপন প্রতিষ্ঠাস্থানের চতুর্দিকবর্তী পল্লীর মধ্যে প্রয়োগ করিয়া দেশের জীবনযাত্রার কেন্দ্রস্থান অধিকার করিবে। এই বিদ্যালয় উৎকৃষ্ট আদর্শে চাষ করিবে, গো-পালন করিবে, কাপড় বুনিবে এবং নিজের আর্থিক সম্বল-লাভের জন্য সমবায়প্রণালী অবলম্বন করিয়া ছাত্র শিক্ষক ও চারিদিকের অধিবাসীদের সঙ্গে জীবিকার যোগে ঘনিষ্টভাবে যুক্ত হইবে।
এইরূপ আদর্শ বিদ্যালয়কে আমি “বিশ্বভারতী’ নাম দিবার প্রস্তাব করিয়াছি।”
শুধু বৈষয়িক লক্ষ্য কে প্রাধান্য দিয়ে ,শিক্ষা থেকে ভারতবর্ষের আপন সংস্কৃতি বাদ গেলে
যে তা মূল্যহীন সেকথা রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর ‘শিক্ষা ও সংস্কৃতি’ প্রবন্ধে তুলে ধরেছেন—
“চিত্তের ঐশ্বর্যকে অবজ্ঞা ক’রে আমরা জীবনযাত্রার সিদ্ধিলাভকেই একমাত্র প্রাধান্য দিয়েছি। কিন্তু সংস্কৃতিকে বাদ দিয়ে এই সিদ্ধিলাভ কি কখনো যথার্থভাবে সম্পূর্ণ হতে পারে?
সংস্কৃতি সমগ্র মানুষের চিত্তবৃত্তিকে গভীরতর স্তর থেকে সফল করতে থাকে। তার প্রভাবে মানুষ অন্তর থেকে স্বতই সর্বাঙ্গীণ সার্থকতা লাভ করে। তার প্রভাবে নিষ্কাম জ্ঞানার্জনের অনুরাগ এবং নিঃস্বার্থ কর্মানুষ্ঠানের উৎসাহ স্বাভাবিক হয়ে ওঠে।”
ভারত রাষ্ট্রের মূল ভিত্তি যে সাংস্কৃতিক ঐক্য তার উপলব্ধি বর্তমান শিক্ষা ব্যবস্থায় খুঁজে পাওয়া যায় না।স্বাধীনতার পর প্রায় ৭০ বছর ভারতীয় শিক্ষা কে তার সংস্কৃতি থেকে দূর করার চেষ্টা চলেছে।ইতিহাস বিজ্ঞান সাহিত্য রাষ্ট্রবিজ্ঞান সমাজবিজ্ঞান সহ বিভিন্ন বিষয়ে পাঠক্রম থেকে ভারতীয়ত্বকে দূর করা হয়েছে এবং ইউরোপীয় দৃষ্টিতে পড়ানো হয়েছে।
রবীন্দ্র জয়ন্তী প্রতিবছর পালিত হয় কিন্তু শিক্ষা নিয়ে রবীন্দ্রনাথের চিন্তনের সঠিক চর্চা হয় না। বর্তমানে জাতীয় শিক্ষানীতির মাধ্যমে ভারতবর্ষের শিক্ষা পদ্ধতি কে সঠিক দিশা দেওয়ার কাজ শুরু হয়েছে
স্বাধীনতার ৭৫ বছর পূর্তির প্রাক্কালে দাঁড়িয়ে কেন্দ্র-রাজ্য বিবাদের ঊর্ধ্বে উঠে ভারতীয়ত্বের দৃষ্টিকোণ থেকে শিক্ষার সংস্কার কে সর্বাধিক গুরুত্ব দেওয়া প্রয়োজন আর তাহলেই ভারতীয় শিক্ষা ব্যবস্থা ঔপনিবেশিক দাসত্ব থেকে মুক্ত হয়ে ‘স্বতন্ত্র’ হবে।
পিন্টু সান্যাল