“গুরু গ্রন্থ সহিবের” প্রনেতা শ্রী গুরু অর্জুন দেবকে জাহাঙ্গীর পাঁচ দিন ব্যাপী অত্যাচার করে হত্যা করেছিলেন ইসলাম ধর্ম স্বীকার না করায়।
সৌমিত্র সেন।
গুরু গ্রন্থ সহিবের প্রনেতা শ্রী গুরু অর্জুন দেব পিতা গুরু রামদাসের মাতা ভানির পুত্র ছিলেন।১৫৬৩ সালের ২৫ শে এপ্রিল উনি জন্মে ছিলেন। তরন তারন সাহিব শহর, কার্তারপুর-জলন্ধর শহর, হরমন্দির সাহিব প্রভৃতির প্রতিষ্ঠাতা,সুখমানি সাহিবের প্রণেতা, হরমন্দির সাহিবে আদি গ্রন্থ স্থাপনা করেছিলেন শ্রী গুরু অর্জুন দেব।
শিখ সম্প্রদায়ের পবিত্র ধর্মগ্রন্থ আদিগ্রন্থ গুরু গ্রন্থ সহিব নামেই পরিচিত। শিখ সম্প্রদায়ের পঞ্চম গুরু শ্রী গুরু অর্জুন দেব গুরু গ্রন্থ সহিব সম্পাদনা করেছিলেন। গুরু গ্রন্থ সহিব কেবলই শিখ গুরুদের উপদেশ বানী লিপিবদ্ধ ছিল না বরং ত্রিশ অন্য সাধু সন্ত এবং মুসলিম ভক্তদের বানীও সম্মিলিত ছিল।এখানে জয়দেবজী, পরমানন্দজীর মতো ব্রাহ্মন ভক্তদের বানীও যেমন ছিল সেরকম জাতপাতের বিভেদগ্রস্থ তৎকালীন হিন্দু সমাজের হেয় প্রতিপন্ন হওয়া দিব্যাত্মা সকল যেমন কবীর, রবিদাস,নামদেব, সৈনজী, সাধনা জী, ধন্না র বানীও স্থান পেয়েছিল।
পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ পাঠে বিশ্বাস রাখা শেখ ফরিদের শ্লোকও গুরু গ্রন্থ সহিবে স্থান মর্যাদার সহকারে পেয়েছে।
নিজ ভাষার অভিব্যক্তি, দার্শনিকতা এ স্বদেশ প্রেমের দৃষ্টিকোন থেকে গুরু গ্রন্থ সহিব অদ্বিতীয় এবং অতুলনীয়। এর ভাষার সরলতা, স্বকীয়তা, সুবোধতা সাধারন জনমানসে গভীর আকর্ষন সৃষ্টি করেছে। সুর সংগীত ও একত্রিশ রাগের প্রয়োগে আত্মবিষয়ক গভীর আধ্যাত্মিক উপদেশগুলিকে মধুর ও সারগ্রাহী করে দিয়েছে। গুরু গ্রন্থ সহিবে উল্লেখিত দার্শনকিতা কর্মবাদেরই কথা বলে এসেছে। গুরুবানী বলছে ব্যক্তি নিজ কর্ম অনুসারেই মহত্ব লাভ করে । সমাজের মুখ্য ধারা থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে সন্যাসের মাধ্যমে যে ঈশ্বর প্রাপ্তির পথ অনুসন্ধানকারী সাধকদের গুরু গ্রন্থ সহিব সেই দিশা দেখায়। এমনকি গুরু গ্রন্থ সহিবে আত্মনিরীক্ষণ, ধ্যানের মহত্বও স্বীকৃতি পেয়েছে। অন্যদিকে সাধনার নামে পরিত্যাগ ,অকর্মন্যতা ও উদ্যমবিমুখতাকে পরিহার করতে বলেছে। গুরুবাণী অনুযায়ী ঈশ্বর প্রাপ্তির জন্য সামাজিক দায়বদ্ধতা থেকে বিমুখ হয়ে জঙ্গলে বিচরনের প্রয়োজন পড়ে না।ঈশ্বরের বাস আমাদের হৃদয়ে আর তাই তাঁকে মনের গভীরে অনুসন্ধান আর অনুভব করার প্রয়োজন আছে। গুরুবাণী পরমাত্মা থেকে লব্দ্ধ আত্মিক শক্তিকে জনকল্যানে প্রয়েগের প্রেরণা দেয়।মধুর ব্যাবহার ও বিনম্র শব্দ প্রয়োগের মধ্য দিয়ে হৃদয়কে জয় করবার কথা বলে।স্বকীয় ভাষার অভিব্যক্তি, দার্শনিকতা ও সুবচনের দৃষ্টিতে গুরু গ্রন্থ সহিব অদ্বিতীয় ও জনমানসে আকর্ষন সৃস্টি করেছে।
শিখ সংস্কৃতিকে জনপ্রিয় করতেও গুরু অর্জুন দেবের প্রয়াস অনবদ্য ছিল।
সৌমিত্র সেন। (Soumitra Sen)