ফোন ট্যাপ ও হোয়াটসঅ্যাপে আড়ি পাতা নিয়ে মোদী সরকারকে আক্রমণ করেছেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। ২৪ ঘণ্টার মধ্যে মমতার সরকারকে পাল্টা আক্রমণ করলেন রাজ্যপাল জগদীপ ধনকর৷ এদিন একবালপুরে মাড়োয়ারি মহিলা সমিতির অনুষ্ঠানে তিনি বলেন, “আমার কাছে অনেকে অভিযোগ করছে বাংলাতেও গোপনীয়তা লঙ্ঘিত হচ্ছে৷”
শনিবার মোদী সরকারের বিরুদ্ধে বিস্ফোরক মন্তব্য করেন মমতা৷ বলেন, “আমার ফোন ট্যাপ করা হচ্ছে। আমি সেটা বুঝতেও পারছি। সব কিছুতেই নজরদারি চালানো হচ্ছে। এটা ঠিক নয়। সরকারি কাজকর্ম করতে ব্যাঘাত ঘটছে।”
তিনি আরও বলেন, “এটা ফ্যাক্ট যে ইজরায়েলের এনএসও সংস্থা ফোন ট্যাপ করার ওই সফটওয়্যার কেন্দ্রকে দিয়েছে। এর সঙ্গে দুটি রাজ্যের সরকারও যুক্ত আছে। আমি তাদের নাম বলব না। কিন্তু তারমধ্যে একটি রাজ্যে বিজেপি সরকার রয়েছে। এই ট্যাপ করার জন্য একটি বিশেষ গাড়ি ব্যবহার করা হচ্ছে। সেই গাড়ির মধ্যে ওই সফটওয়্যার রয়েছে। গাড়ি যেখানে যাচ্ছে সেখানকার ১০ কিলোমিটারের মধ্যে যে কারও ইচ্ছে ফোন ট্যাপ করা কিংবা হোয়াটসঅ্যাপ থেকে তথ্য নিয়ে নিচ্ছে।”
মমতা এও বলেন, শুধুমাত্র তাঁর নয়, রাজ্যের একাধিক মন্ত্রী, আমলা, আইএএস, আইপিএস অফিসার, সাংবাদিক এমনকি বিচারপতিদের ফোন বা হোয়াটসঅ্যাপেও আড়ি পাতা হচ্ছে বলে জানিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী। এই ঘটনায় তিনি সরাসরি প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর হস্তক্ষেপ দাবি করেছেন।
রাজ্যপাল বলেন, “কোন তথ্যের বিরুদ্ধে মুখ্যমন্ত্রী একথা বলছেন, তা উনিই বলতে পারবেন। মুখ্যমন্ত্রীর কাছে কী তথ্য আছে, তা জানি না। তবে এরাজ্যেও গোপনীয়তা লঙ্ঘন নয়। অনেকেই আমাকে একথা বলেছেন।” রাজ্যপালের এই মন্তব্যের পরই শোরগোল পড়ে যায়। রাজ্যপালের এই মন্তব্যের পরই পাল্টা মুখ খোলেন তৃণমূল মহাসচিব পার্থ চট্টোপাধ্যায়। জগদীপ ধনখড়কে পাল্টা চ্যালেঞ্জ ছুঁড়ে তিনি বলেন, কারা রাজ্যপালকে একথা বলেছেন। সেই তালিকা প্রকাশ করুন। ধনকড়কে কটাক্ষ করে পার্থ বলেন, “রাজনৈতিক নেতা হওয়ার চেষ্টা করেছেন রাজ্যপাল৷”
উল্লেখ্য, ইজরায়েলি সংস্থা এনএসও-র তৈরি স্পাইওয়্যার-এর মাধ্যমে নজরদারি চালানো হচ্ছে হোয়াটসঅ্যাপে। কেন্দ্রের বিজেপি সরকারও এ কথা স্বীকার করে নিয়ে নোটিশ পাঠিয়েছে হোয়াটসঅ্যাপকে। কিন্তু এই ঘটনায় সরাসরি কেন্দ্রের উপরেই দায় চাপিয়েছেন অন্তর্বর্তী কংগ্রেস সভানেত্রী সোনিয়া গান্ধী৷
শনিবার একটি সর্বভারতীয় সংবাদমাধ্যমকে সোনিয়া বলেন, “এটা খুবই দুর্ভাগ্যজনক ঘটনা যে ইজরায়েলি পেগাসাস সফটওয়্যার ব্যবহার করে মোদী সরকার সমাজকর্মী, সাংবাদিক ও রাজনৈতিক ব্যক্তিত্বদের ফোন ও হোয়াটসঅ্যাপে আড়ি পাতছে। গুরুত্বপুর্ণ তথ্য চুরি করা হচ্ছে। এই ধরনের ঘটনা শুধুমাত্র বেআইনি নয় অসাংবিধানিকও বটে। এটা খুবই লজ্জার।” খিদিরপুর এলাকায় তক্তাঘাটে গিয়ে সোনিয়ার সুরে সুর মিলিয়েছিলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়৷ তবে এদিন রাজ্যপাল ফোন ট্যাপিং নিয়ে রাজ্যের বিরুদ্ধে যেভাবে সরব হল তাতে মমতার প্রশাসনের অস্বস্তি বাড়ল বলেই মনে করা হচ্ছে৷