রাজ্যের কোনও মানুষের অসুবিধে হলে তা এবার থেকে জানানো যাবে রাজ্যপালকে। সরাসরি। রাজভবনে যাওয়ার জন্যও কারও মুখাপেক্ষী হয়ে থাকতে হবে না। রাজ্যের যে কোনও মানুষের যে কোনও সমস্যায় রাজভবনের দরজা খোলা। সোমবার এমনটাই জানালেন রাজ্যপাল জগদীপ ধনকড়।
বিশ্বাভারতীর সমাবর্তন অনুষ্ঠান থেকে ফেরার সময়ে ঝটিকা সফরে সিঙ্গুরে গিয়েছিলেন রাজ্যপাল। বিডিও অফিসে বৈঠক করেন। দেখা করেন গ্রামের মানুষের সঙ্গে। সেখানেই একাধিক সমস্যার কথা উঠে আসে। তখন রাজ্যপাল বলেন, “আমার টুইটার হ্যান্ডল রয়েছে। সেখানে আমাকে আপনাদের সমস্যার কথা জানাতে পারেন। রাজভনের ওয়েবসাইটে গিয়েও জানাতে পরেন। আমি জবাব দেব। আপনাদের অভিযোগের ব্যাপারে প্রয়োজনীয় যা করার করব।”
রাজ্যপাল আরও বলেন, “আমি সব অভাব অভিযোগ ধরে ধরে মানুষকে জবাব দিচ্ছি। সংশ্লিষ্ট জায়গায় কথাও বলছি।” উদাহরণ দিতে গিয়ে তিনি বলেন, “এই যে সর্বভারতীয় জয়েন্ট এন্ট্রাস পরীক্ষায় বাংলা ভাষাকে বঞ্চনার অভিযোগ উঠছে, আমি এটা নিয়ে দিল্লিতে কথা বলেছি। এজেন্সিকে জানিয়েছি। কোনও অবিচার আমি সহ্য করব না।” তাঁর কথায়, “আপনার প্রশ্ন বা অভাব-অভিযোগের উত্তর দিতে আমার দেরি হতে পারে। কিন্তু উত্তর দেব। আজ না হোক কাল। সংবিধানকে রক্ষা করতে আর বাংলার মানুষের পাশে থাকতেই আমি এসেছি।”
লোকসভা ভোটের পর রাজ্যের মানুষের সমস্যা শোনার জন্য মুখ্যমন্ত্রী ‘দিদিকে বলো’ চালু করেছেন। সেখানে ফোন করে বিভিন্ন মানুষ তাঁদের সমস্যার কথা জানান। তা নথিভুক্ত হয় এবং প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয় মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের অফিস। তৃণমূলের বক্তব্য, এই ক’মাসে বিপুল সাড়া পাওয়া গিয়েছে দিদিকে বলো কর্মসূচিতে। এদিনের রাজ্যপালের কথা শুনে অনেকেই বলছেন, এ যেন দিদিকে বলোর পাল্টা রাজ্যপালকে বলো চালু করে দিলেন জগদীপ ধনকড়!
সিঙ্গুরে গিয়েছেন রাজ্যপাল আর সেখানে কারখানার জমি প্রসঙ্গ উঠবে না, তা আবার হয় নাকি! রাজ্যপালকে বসিয়ে অনেকে বলেন, “কিচ্ছু হয়নি সিঙ্গুরে। ওই জমিতে ফসল ফলছে না। শিল্প, কৃষি দু’টোরই সর্বনাশ হয়েছে। আপনি প্লিজ কিছু করুন।” রাজ্যপাল স্পষ্ট তাঁদের জানিয়ে দেন, “ওই জমিতে পা না রেখে, নিজে চোখে সবটা না দেখে, ওই ব্যাপারে তিনি কোনও মন্তব্য করবেন না।”
এমনিতেই রাজ্যপালের সঙ্গে শাসক দলের সংঘাত রয়েছে। একের পর এক ইস্যুতে রাজ্যপাল সরকারের সমালোচনা করেছেন আর সরকারের মন্ত্রীরা পাল্টা তোপ দেগেছেন। এমনকি মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় নিজে দলের কোর গ্রুপের বৈঠকের দিন স্পষ্ট বলে দিয়েছিলেন, “হি ইজ আ বিজেপি পার্টি ম্যান। আমি বিজেপির লোকের কোনও কথার জবাব দেব না।” এদিনও রাজ্যপালের সিঙ্গুর যাওয়াকে ভাল ভাবে নেয়নি তৃণমূল তথা সরকার। রাজ্যের বিদ্যুৎমন্ত্রী শোভনদেব চট্টোপাধ্যায় বলেন, “আমার মনে হয় উনি রাজ্যপালের পদের মর্যাদাটা বুঝতে পারছেন না। নাহলে এ ভাবে কেউ ব্লক অফিসে চলে যান? আমি পদটাকে সম্মান করি। কিন্তু কোনও ব্যক্তি যদি সেটা না করেন তাহলে আর কী করার থাকতে পারে!”