স্বাধীনতা দিবসেই প্লাস্টিক-মুক্ত ভারতের কথা ঘোষণা করেছিলেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। জানিয়েছিলেন, ২ অক্টোবর থেকে এক বার ব্যবহার যোগ্য প্লাস্টিকের উৎপাদন ও ব্যবহার দুই-ই বন্ধ করতে হবে। এই মর্মে নির্দেশ পাঠানো হয়েছে কেন্দ্রীয় মন্ত্রকগুলিতেও। সেই ঘোষণা ও নির্দেশ কার্যকর করার উদ্দেশে সক্রিয় হয়ে উঠেছে কেন্দ্রের সব ক’টা মন্ত্রক।
তবে এই নির্দেশ যথাযথ ভাবে কার্যকর হচ্ছে কি না, তা তত্ত্বাবধান করার মূল দায়িত্ব পেয়েছে পরিবেশ মন্ত্রকের অধীনে অরণ্য ও জলবায়ু দফতর। আগে জানানো হয়েছিল, ২ অক্টোবর থেকে ছ’রকমের প্লাস্টিকজাত দ্রব্য নিষিদ্ধ হবে গোটা দেশে। সেগুলির মধ্যে রয়েছে প্লাস্টিকের ব্যাগ, কাপ, প্লেট, স্ট্র, ছোট বোতল, নানা রকম স্যাশে। কিন্তু সূত্রের খবর, যে ছ’টি প্লাস্টিকজাত দ্রব্যের উপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা হয়েছে, তার বাইরেও আগের আলোচনা অনুযায়ী আরও কিছু প্লাস্টিক বন্ধের ব্যবস্থা করা হবে। এগুলির মধ্যে সব চেয়ে গুরুত্বপূর্ণ দুধের প্যাকেট।
শিল্প মন্ত্রককে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে, সমস্ত সিমেন্ট উৎপাদন কারখানার জ্বালানি হিসেবে প্লাস্টিক ব্যবহার করতে হবে। ন্যাশনাল হাইওয়ে অথরিটি অফ ইন্ডিয়া-কে দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে, সারা দেশের বর্জ্য সংগ্রহ শুধু নয়, এবার থেকে সড়ক নির্মাণের কাজের প্লাস্টিক বর্জ্য ব্যবহার করতে হবে।
বস্তুত, প্লাস্টিক ব্যবহার করে রাস্তা নির্মাণ করা নিয়ে বেশ কিছু দিন ধরেই গবেষণা চলছে। তাতে জানা গিয়েছে, প্লাস্টিক বর্জ্য ব্যবহার করে সড়ক নির্মাণ করলে, তা অনেক সস্তা হয় এবং রোদে-বৃষ্টিতে অনেক বেশি টেকসই হয়। এবার সেই উদ্যোগই হাতে-কলমে নেওয়া হবে।
রেল মন্ত্রকের তরফেও জানানো হয়েছে, সারা দেশের প্ল্যাটফর্ম চত্বর থেকে এবং রেল লাইন থেকে প্লাস্টিক সংগ্রহ করার জন্য আলাদা স্বেচ্ছাসেবকদের দল তৈরি করা হবে। এই দলের সংখ্যা চার হাজারেরও বেশি। তারা সারা দেশের রেল চত্বর থেকে, বিশেষ করে শহর অঞ্চল থেকে প্লাস্টিক বর্জ্য সংগ্রহ করে, রিসাইকেলযোগ্য প্লাস্টিক আলাদা করবে। প্লাস্টিক ব্যবহারের বিরুদ্ধে মানুষকে সচেতন করতে ট্রেনে বিজ্ঞাপনও চালানো হবে নিয়মিত।
গ্রামের দিকে এই দায়িত্ব দেওয়া হচ্ছে পঞ্চায়েতগুলিকে। প্রধানমন্ত্রী গ্রাম সড়ক যোজনার আওতায় যত সড়ক নির্মাণ হবে, সে সবে যেন প্লাস্টিক বর্জ্য ব্যবহার করা হয়, সে দিকে নজর রাখবে তারা। গ্রাম এলাকা থেকে সংগৃহীত প্লাস্টিক বর্জ্য থেকে পুনর্ব্যবহারযোগ্য প্লাস্টিক আলাদা করার জন্য স্বেচ্ছাসেবক দলও নিয়োগ করবে পঞ্চায়েত।
পর্যটন মন্ত্রক এবং তাঁত মন্ত্রক জোট বাঁধবে, প্লাস্টিকের বদলে পাটের ব্যবহার বাড়ানোর জন্য। ট্যুরিস্ট স্পটগুলিতে কেনাকাটার জন্য প্লাস্টিকের ব্যবহার বন্ধ করার কথা বলা হয়েছে। পাট শিল্পকেও একই সঙ্গে চাঙ্গা করা দরকার।
কেন্দ্রের সমস্ত মন্ত্রকের এই দায়িত্ব ভাগ এবং প্লাস্টিক রাখতে নতুন নতুন উদ্যোগকে স্বাগত জানাচ্ছেন অনেকেই। কিন্তু পরিকল্পনা ও উদ্যোগে খামতি না থাকলেও, কার্যক্ষেত্রে এই সমস্ত দায়িত্ব সকলে মেনে চলবেন তো? অপেক্ষা আর এক মাসের, তার পরে সময়ই বলবে সে কথা।