“হতচ্ছাড়া এট্টু চিড়েমুড়ি আনতি পারো নি,,এট্টু নারিকেল মুড়ি আনতি পারো নি…সব এয়েছে আমারে কাটলেট খাওয়াতি,,ব্যাটারা সব বাঙ্গালী ছাওয়াল সাহেব হয়েছে” 👈এই ছিল যশোর-খুলনার কথ্যভাষার টোনে ওনার বক্তব্য যখন উনি কলেজের ক্লাস সেরে ছাত্রদের মাঝে আড্ডা দিচ্ছিলেন…আজ এই মহান দেশপ্রেমিক বিজ্ঞানী তথা আজকের ভাষায় entrepreneur বা উদ্যোগপতি আচার্য্য প্রফুল্ল চন্দ্র রায়ের জন্মদিবস 🙏 যিনি সর্বদা বাঙ্গালী জাতির উদ্দেশ্যে বলতেন, “বাঙ্গালী তুমি চাকরী ছাড়ো, ব্যাবসা ধরো, শিল্প গড়ো”।
১৮৬১, ২ অগস্ট অবিভক্ত বঙ্গের খুলনা জেলার রাড়ুলি গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন প্রফুল্লচন্দ্র। প্রপিতামহ মানিকলাল রায় ছিলেন নদিয়া (কৃষ্ণনগরের)ও যশোরের কালেক্টরের দেওয়ান। পিতামহ আনন্দলাল রায় ছিলেন যশোরের সেরেস্তাদার। পিতা হরিশচন্দ্র রায় ও মাতা ভুবনমোহিনী দেবী। বাবা মায়ের আদরের সেই ছোট্ট ফুলু পরবর্তীতে হয়ে ওঠেন ‘মাস্টার অফ নাইট্রাইটস’ আচার্য প্রফুল্লচন্দ্র রায়।
এডিনবার্গ ইউনিভার্সিটি থেকে ১৮৮৪ সালে বিএসসি ডিগ্রি পান পরে ডক্টরেটের জন্যে পড়াশোনা।
তারপর দেশে এসে কলেজে অধ্যাপনা করেন প্রেসিডেন্সী এবং রাজাবাজার সায়েন্স কলেজে।
দীর্ঘ গবেষণায় হঠাৎ তিনি আবিষ্কার করলেন রসায়নের এক অতি বিষম বস্তু মারকিউরাস নাইট্রাইট। ইউরোপীয় বিজ্ঞানীগণ তাঁকে মাস্টার অব নাইট্রাইটস আখ্যায় ভূষিত করেন। সম্ভ্রান্ত কায়স্থ্য বংশীয় জমিদার বাড়ীর ছেলে বিলেত ফেরত বিজ্ঞানী পরনে সাদামাটা ধুতি, কালো কোট, চুল অবিন্যস্ত, তাঁর এমন উদাসীন বেশভূষায় আবৃত ছিল এক দূরদর্শী কর্মচঞ্চল প্রাণ। তিনি বুঝেছিলেন, ‘‘একটা সমগ্র জাতি শুধুমাত্র কেরানী বা মসীজীবী’’ হয়ে টিকে থাকতে পারে না। বাঙালি জাতিকে স্বাবলম্বী হওয়ার পথ দেখালেন তিনি। ১৯০১ সালে প্রতিষ্ঠা করলেন বেঙ্গল কেমিক্যাল অ্যান্ড ফার্মাসিউটিকল ওয়ার্কস। মূলধন বলতে ছিল, মাত্র আটশো টাকা আর পূর্ণ আত্মবিশ্বাস।
এ ছাড়াও ক্যালকাটা পটারি ওয়ার্কস, বেঙ্গল এনামেল ওয়ার্কস, ন্যাশনাল ট্যানারি ওয়ার্কস প্রতিষ্ঠায় তিনিই ছিলেন প্রধান উদ্যোক্তা।
প্রাচীন রসায়নে শুধু ইজিপ্ট, সিরিয়া, চিন বা আরব নয় প্রাচীন ভারতবর্ষও যে কতটা এগিয়ে ছিল,তা তুলে ধরতেই তিনি লিখলেন #the_history_of_hindu_chemistry ।
দেশ যখন ব্রিটিশ বিরোধী আন্দোলনে তপ্ত সে সময় তিনিই বুঝেছিলেন জাতি কে শক্ত হতে গেলে ব্যাবসা ও শিল্পে উদ্যোগী হতে হবে।
নেতাজি সুভাষচন্দ্র যখন প্রেসিডেন্সী তে ওটেন সাহেব কে পিটিয়ে কলেজ থেকে বরখাস্ত সে সময় সেই কলেজেরই প্রফেসর প্রফুল্ল রায় তাঁকে কাছে ডেকে বলেছিলেন, “একদম ঠিক কাজ করিছো, সে ব্যাটারে পিটোনোই উচিৎ, ব্যাটা কিনা আমার দেশ রে উল্টোপাল্টা কয়… কিন্তু তুমি এ চেহারা নিয়ে ওটেন রে পিটোলে কীভাবে বলো দিনি…আমি তো ভেবিছিলাম🤔 কোনো পালোয়ান টালোয়ান হবে”
আজ বিশ্ব মহামারী #COVID19 এ hydroxychloroquine নামক বস্তু টি যখন প্রাসঙ্গিক হয়ে উঠেছে তখন মনে রাখতে হবে এই আচার্য্য প্রফুল্ল রায়ের বেঙ্গল কেমিক্যাল ই সর্বপ্রথম hydroxychloroquine এর formulation তৈরী করে।
আজ বাংলার স্কুলগুলো তে আচার্য্য প্রফুল্ল রায় কে মহান বিজ্ঞানী হিসেবে পড়ানো হলেও কোথাও কেন জানি না দেখানো হয় না একজন ব্যাবসায়ী শিল্পপতি হিসেবে 😪এটাই বড় বিড়ম্বনা 🙏।
অরূপ কান্তি পাল