গুসকরা। সেখানকার ঐতিহ্যবাহী চোংদার বাড়ির দুর্গাপুজো এবার কিছুটা হলেও ফিকে। কারণটা অবশ্যই করোনা পরিস্থিতি। তবে তাদের প্রস্তুতি কিন্তু তুঙ্গে। গুসকরা, যার পাশ দিয়ে বয়ে চলেছে কুনুর নদী। কথিত আছে সম্রাট শের শাহের আমলে এই বাড়িতে দুর্গাপুজো শুরু হয়। প্রায় ৪৫০ বছর ধরে মহাসমারোহে বেশ রাজকীয়ভাবেই সম্পন্ন হয় এই বাড়ির পুজো। বর্তমানে জৌলুস কিছুটা কমলেও পরিবারের বর্তমান সদস্যরা ঐতিহ্য ও পরম্পরাকে বাঁচিয়ে রাখার চেষ্টা করছেন।
চোংদার বাড়ির দুর্গাপুজোর কথা উঠলেই মনে পড়ে যাবে এখানকার রীতি ও প্রথার ছবি। যেমন, এখানে ঘট বিসর্জন হয় না, ঘট আহ্বান করা হয়৷ নিঃসন্দেহে এই প্রথা অন্যরকম একটি দিক।
গুসকরার জমিদার চতুর্ভুজ চোংদারের হাত ধরেই এই পুজো শুরু হয়েছিল বলে জানা যায়। জমিদার বাড়ির কেন্দ্রস্থলেই তৈরি হয় বিরাট দুর্গা মন্দির। শোনা যায়, একসময় কলকাতার নামী কোম্পানির নট্টবাবুরা গুসকরার এই বাড়িতে গিয়ে যাত্রাপালার আসর জমাতেন। বারান্দার পলেস্তারা এখন প্রায় খসে পড়েছে। তবুও ধুমধাম করেই পুজোর চারটে দিন মেতে ওঠেন বাড়ির বড়ো থেকে ছোটো সদস্যরা৷ যে সমস্ত সদস্যরা বাইরে থাকেন, পুজোর সময় মোটামুটি সবাই একজোট হন। প্রথা মেনে দশমীতে ঘট বিসর্জন না করে, ঘট প্রতিষ্ঠা করা হয়।
কথিত আছে, একসময় কামান দাগা হত। এখন তা বন্ধ হয়ে গেছে। তবে এখন বন্দুকে ফায়ার করে সন্ধি পুজো শুরু হয় বলে শোনা যায়। শাক্ত মতে পুজো হয় এই বাড়িতে। ১৯৭৮ সালের ভয়াবহ বন্যায় মারা যায় প্রচুর গবাদিপশু। সেই থেকে এখানে মোষ ও ছাগ বলি বন্ধ হয়ে যায়। তারপর থেকে চালকুমড়ো বলির প্রথা চালু রয়েছে। ভোগ রান্না হয় প্রায় ৫১ থালার। বাড়ির মহিলারাই সাধারণত ভোগ রান্না করেন। এছাড়াও থাকে এলাকাবাসীদের পাত পেড়ে খাওয়ানো।
প্রায় ৪৫০ বছরের প্রাচীন এই পুজো নিঃশব্দে বলে দেয় ইতিহাসের কত কত কথা। পুজোর চারটে দিন তাই সমস্ত শব্দের বুনট ঘুরে বেড়ায় ঢাকের আওয়াজে আর উলু-শঙ্খধ্বনিতে।