মধ্য এশিয়া থেকে আর্যদের ভারতে আগমনের তত্ত্ব যে সম্পূর্ণ ভিত্তিহীন এবং বৈদিক সংস্কৃতি যে আদ্যোপান্ত ভারতীয় তার জোরালো প্রমাণ মিলেছে। হরিয়ানার হিসার জেলায় প্রত্নতাত্ত্বিক উৎখননে আবিষ্কৃত রাখিগড়ি সভ্যতায় প্রাপ্ত নরকঙ্কালের বহু প্রতীক্ষিত ডি এন এ পরীক্ষায় এটা প্রতিষ্ঠিত হয়েছে বলে গত ১২জুন সাংবাদিকদের জানিয়েছেন এবিষয়ে দুই গবেষক বসন্ত শিণ্ডে এবং নীরজ রাই। এদিন সাংবাদিকদের সামনে তাঁরা তাঁদের গবেষণাপত্র প্রকাশ করেন।

দুজনেই দাবি করেন যে, রাখিগড়িতে হরপ্পীয় সভ্যতায় প্রাপ্ত কঙ্কালের ডি এন এ পরীক্ষার পর তারা এই সিদ্ধান্তে এসেছেন যে, ওইসব নরকঙ্কালের সঙ্গে মধ্য এশিয়ার বা মধ্য প্রাচ্যের কোনও সম্পর্ক নেই। প্রাচীন ভারতে যে বৈদিক সভ্যতার উন্মেষ এবং বিবর্তন ঘটেছিল তার সঙ্গে বহিরাগতদের, এমনকি পার্শ্ববর্তী ইরানেরও কোনও সম্পর্ক ছিল না।

বৈদিক সভ্যতা ছিল পুরোপুরিই ভারতের নিজস্ব সভ্যতা। এই সূত্রে আনুমানিক ১৫০০ খ্রিস্টপূর্বাব্দে ভারতে বহিরাগত আর্য আক্রমণ তত্ত্বকে এককথায় খারিজ করে দিয়েছেন এই দুই গবেষক।

প্রাণীদের কোষ বিভাজন প্রক্রিয়ায় (mitocondrial) ডি এন এ পরীক্ষা তাঁদের এই সিদ্ধান্তের স্বপক্ষে জোরালো প্রমাণ বলে দাবি করেন তাঁরা। সেই সঙ্গে জানান, রাখিগড়িতে আবিষ্কৃত সভ্যতার শেষের দিকে বা নবীনতর স্তরে বাইরের মানুষের সঙ্গে খুব সামান্য পরিমাণে সম্পর্ক থেকে থাকলেও সামগ্রিকভাবে দেখা গেছে যে ওই হরপ্পীয় সভ্যতার সময়কার মানুষরা ছিলেন সম্পূর্ণরূপেই স্থানীয়। অর্থাৎ পুরোপুরি ভারতীয়।

প্রসঙ্গত, শিণ্ডে হলেন পুনের দোকান কলেজের (এখন বিশ্ববিদ্যালয়) উপাচার্য এবং রাই হলেন লখনৌ-এর বীরবল সাহনি ইনস্টিটিউট অব পালিওসায়েন্সেস-এর ডি এন এ গবেষণাগারের প্রধান। মুখ্যত তিনিই রাখিগড়ির প্রাচীন নরকঙ্কালের ডি এন এ পরীক্ষা করেন। বহিরাগত আর্যরা আক্রমণকারী হিসাবে ঢুকে এখানকার অনার্যদের মেরে কেটে দক্ষিণ ভারতে বিতাড়িত করেছিল এ তত্ত্ব এক কথায় নস্যাৎ করে দিয়েছেন তিনি।

জানিয়েছেন রাখিগড়ির ধ্বংসাবশেষে প্রাপ্ত নরকঙ্কালের দাঁত, করোটি, দেহের অন্যান্য হাড়গোড় সবই অক্ষত ও অবিকৃত দেখতে পেয়েছেন তাঁরা। কোনও দেহে কোনও আঘাত কিংবা কাটাকাটির চিহ্ন পাননি। অর্থাৎ লড়াই কিংবা সেরকম কোনও পরিস্থিতির লক্ষণ তাঁদের পরীক্ষা নিরীক্ষায় মেলেনি। রাই-এর বক্তব্য, তাঁরা ১৪৮টি কঙ্কালের ওপর দীর্ঘদিন যাবৎ পরীক্ষা নিরীক্ষা চালিয়ে এই সিদ্ধান্তে এসেছেন।

নমুনার মলিকিউলস-এর ডি এন এ পরীক্ষা করা হয়েছে হায়দরাবাদে সেন্টার ফর সেলুলার অ্যান্ড মলিকিউলার বায়োলজিতে। এছাড়া দক্ষিণ কোরিয়ার রাজধানী সিওল এবং আমেরিকার হার্ভার্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষণাগারেও নমুনা পাঠানো হয়েছিল। সেখান থেকেও যে রিপোর্ট এসেছে তাতেও এই গবেষণার সিদ্ধান্ত নির্ভুল প্রমাণিত হয়েছে বলে দাবি করেছেন তাঁরা।

জানিয়েছেন যে, কোনও পরীক্ষাতেই রাখিগড়িতে পাওয়া নরকঙ্কালের জিনে মধ্য এশিয়ার কোনও সম্পর্ক দেখা যায়নি। পাশাপাশি শিণ্ডের কথামতো রাখিগড়িতে মৃতদেহ সমাধি দেওয়ার যে প্রক্রিয়া ছিল তার সঙ্গে বেদের প্রাথমিক কাল অর্থাৎ ঋকবেদের সময়কালের হুবহু মিল রয়েছে। তিনি আরও জানিয়েছেন যে, রাখিগড়ির সেই সময়কার মানুষরা মৃতদেহ সৎকারের সময় যে ধরনের মন্ত্র বা প্রার্থনা জানাতেন, বিগত প্রায় ৬০০০ বছর পরেও এখনও মানুষের মধ্যে সেই ধারা প্রচলিত রয়েছে।

দুর্গাপদ ঘোষ

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.