জি-২০ সম্মেলন উপলক্ষে রাষ্ট্রপতি দ্রৌপদী মুর্মুর তরফে যে নিমন্ত্রণপত্র গিয়েছে রাজ্য এবং কেন্দ্রশাসিত অঞ্চলগুলিতে, তাতে ইংরেজিতে ‘প্রেসিডেন্ট অফ ইন্ডিয়া’র (President of India) পরিবর্তে ‘প্রেসিডেন্ট অফ ভারত’ (President of Bharat) লেখা হয়েছে। সংবিধান লঙ্ঘন করে দেশের নামও পাল্টে দেওয়া হচ্ছে বলে অভিযোগ তুলতে শুরু করেছেন বিরোধীরা। (G20 Summit 2023)

অন্য রাষ্ট্রের প্রধানদের নিয়ে জি-২০ সম্মেলনের আয়োজন হচ্ছে। এত গুরুত্বপূর্ণ অনুষ্ঠানের সরকারি নিমন্ত্রণপত্রে ‘India’র পরিবর্তে ‘ভারত’ লেখার সিদ্ধান্ত যথেষ্ট গুরুত্বপূর্ণ বলে মনে করছেন সংবিধান বিশেষজ্ঞরাও।  শুধু নিমন্ত্রণপত্রেই নয়, বিদেশি অতিথিতের যে পুস্তিকা পাঠানো হয়েছে, তাতেও ‘India’র পরিবর্তে ‘ভারত’ লেখা রয়েছে বলে জানা গিয়েছে, যার শীর্ষক হিসেবে লেখা হয়েছে, ‘Bharat, The Mother of Democracy’, অর্থাৎ ‘ভারত, গণতন্ত্রের জননী’।
অসমের মুখ্যমন্ত্রী হিমন্ত বিশ্ব শর্মা সোশ্যাল মিডিয়ায় লেখেন, ‘ভারতীয় প্রজাতন্ত্র-আমাদের সভ্যতা দৃঢ় পদক্ষেপে অমৃতকালের দিকে এগোচ্ছে দেখে আনন্দ হচ্ছে,, গর্ববোধ করছি’।

দেশের সংবিধানে ‘India’ এবং ‘ভারত’ দুইের উল্লেখই রয়েছে। সাধারণ ইংরেজিতে ‘India’ লেখা হয়। কিন্তু পাকাপাকি ভাবে এবার দেশের নাম ‘ভারত’ লেখার বন্দোবস্ত করার তোড়জোড় চলছে বলে খবর। আগামী ১৮ থেকে ২২ সেপ্টেম্বর সংসদে পাঁচ দিন ব্যাপী বিশেষ অধিবেশনের ঘোষণা করা হয়েছে। সেখানে এই প্রস্তাব তোবলা হতে পারে বলে খবর। তাতে সংবিধানের পরিবর্তন ঘটিয়ে দেশের নাম শুধুমাত্র ভারত করার সুপারিশ থাকবে। কিন্তু সেই বিল সংসদে ওঠার আগেই, রাষ্ট্রপতি দ্রৌপদী মুর্মুর পাঠানো চিঠিতে ‘প্রেসিডেন্ট অফ ভারত’ লেখা হল। 

দেশের নাম হিসেবে শুধু ‘ভারত’ ব্যবহারের সপক্ষে বিজেপি যদিও যুক্তি দিতে দেরি করেনি। তাদের দাবি, ‘INDIA’ শব্দটি ঔপনিবেশিক শক্তির আমদানি করা। ঔপনিবেশিক শাসনের প্রতীক হয়ে রয়ে গিয়েছে ওই নাম। সেই ইতিহাস পিছনে ফেলে এগোতে হলে, নামের মধ্যেও নিজস্বতা, নিজের সংস্কৃতি, ঐতিহ্যের ছোঁয়া রাখতে হবে। বিজেপি সাংসদ হরনাথ সিংহ যাদব সরাসরিই দেশের নাম পাকাপাকি ভাবে ‘ভারত’ করার প্রস্তাব দেন। 

বিজেপি-র অভিভাবক সংস্থা রাষ্ট্রীয় স্বয়ম সেবক সঙ্ঘও ইতিমধ্যে দেশের নাম পাকাপাকি ভাবে ‘ভারত’ করার পক্ষে সুর চড়িয়েছে। সঙ্ঘ প্রধান মোহন ভাগবত খোলাখুলিই তার পক্ষে সমর্থন জানিয়েছেন। তাঁর বক্তব্য, “INDIA শব্দটির ব্যবহার বন্ধ করা উচিত আমাদের। তার পরিবর্তে ভারত ব্যবহার করা উচিত। ইংরেজিভাষীদের সুবিধার জন্য INDIA বলি বটে, তাই ওটাই অভ্যাস হয়ে গিয়েছে। কিন্তু এবার অন্তত বন্ধ হওয়া উচিত। পৃথিবীর সব প্রান্তে ভারত হিসেবেই দেশকে উল্লেখ করা উচিত, সে কথায় হোক বা লেখায়।”
কাউন্টডাউন শুরু জি-২০ শীর্ষ সম্মেলনের। এবারের এই আন্তর্জাতিক সামিটের আয়োজক দেশ ভারত। আগামী ৯ ও ১০ সেপ্টেম্বর নয়াদিল্লিতে বিভিন্ন দেশের রাষ্ট্রপ্রধানদের নিয়ে বসতে চলেছে চাঁদের হাট। কড়া নিরাপত্তার চাদরে মুড়ে ফেলা হয়েছে রাজধানী। এই মহাসম্মেলনে যোগ দিতে আসা অতিথিদের তালিকা যেমন দীর্ঘ তেমনই এই মঞ্চে প্রধানমন্ত্রী মোদির পাশে দেখা যাবে না কয়েকজন রাষ্ট্রনেতাকেও। দেখা নেওয়া যাক কোন কোন রাষ্ট্রপ্রধান আসবেন, কারা আসবেন না।  
শীর্ষ সম্মেলনে যোগ দিতে আগামী ৭ সেপ্টেম্বর ভারতে আসার কথা মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনের। তাৎপর্যপূর্ণ ভাবে, জি-২০ সামিটের আগেই আলোচনায় বসার কথা বাইডেন ও মোদির। ঐতিহাসিক এই দ্বিপাক্ষিক বৈঠকে নজর রয়েছে সকলের। তবে মঙ্গলবার সকালেই হোয়াইট হাউস সূত্রে খবর মিলেছে করোনায় আক্রান্ত হয়েছেন মার্কিন ফার্স্ট লেডি জিল বাইডেন। তবে মার্কিন প্রেসিডেন্টের কোভিড রিপোর্ট নেগেটিভ এসেছে। কিন্তু এই সপ্তাহে তাঁকে পর্যবেক্ষণে রাখা হবে। ফলে বাইডেনের সফর ঘিরে দেখা দিয়েছে সংশয়। 
চলতি সপ্তাহে ভারতে আসছেন ব্রিটেনের প্রধানমন্ত্রী ঋষি সুনাক। প্রধানমন্ত্রী পদে বসার পর এটি প্রথম ভারত সফর সুনাকের। থাকছেন অস্ট্রেলিয়ার প্রধানমন্ত্রী অ্যান্টনি আলবানিজ, কানাডার প্রধানমন্ত্রী জাস্টিন ট্রুডো, জার্মানির চ্যান্সেলর ওলাফ শোলৎজ। উপস্থিত থাকবেন জাপানের প্রধানমন্ত্রী ফুমিও কিশিদা, দক্ষিণ কোরিয়ার প্রেসিডেন্ট ইউন সুক-ইও, ফ্রান্সের প্রেসিডেন্ট ইমানুয়েল ম্যাক্রোঁ। সম্ভাবনা রয়েছে ম্যাক্রোঁ-মোদি দ্বিপাক্ষিক বৈঠকের। আসছেন বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। সামিটের ফাঁকেই বৈঠকে বসার কথা রয়েছে মোদি-হাসিনার। আসছেন জামাল খাশোগ্গি হত্য়ায় অভিযুক্ত সৌদি আরবের যুবরাজ মহম্মদ বিন সলমন। আসবেন তুরস্কের প্রেসিডেন্ট রেসেপ তায়েপ এরদোগান, আর্জেন্টিনার প্রেসিডেন্ট আলবের্তো ফার্নান্দেজ, নাইজেরিয়ার প্রেসিডেন্ট বলা টিনুবু। 

অন্যদিকে, বহু চর্চিত এই মহাসম্মেলনে থাকছেন না চিনের প্রেসিডেন্ট শি জিনপিং। তাঁর বদলে ভারতে আসছেন চিনের প্রিমিয়ার লি কিয়াং। মোদি-শি-বাইডেনকে একই মঞ্চে দেখতে মুখিয়ে ছিল গোটা বিশ্ব। জি-২০ সম্মেলনে যোগ দিতে ভারতে আসছেন না রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন। রুশ প্রেসিডেন্ট নিজেই ফোন করে প্রধানমন্ত্রী মোদিকে নিজের না আসার কথা জানিয়েছেন। তাঁর বদলে এই সামিটে থাকবেন রাশিয়ার বিদেশমন্ত্রী সের্গেই লাভরভ। তবে সশরীরে হাজির না থাকলেও বন্ধু ভারতের পাশে থাকার বার্তা দিয়েছেন পুতিন। থাকবেন না মেক্সিকোর প্রেসিডেন্ট আন্দ্রেস ম্যানুয়েল লোপেজ ওব্রাডোর। থাকছেন না ইউরোপীয় ইউনিয়নের প্রতিনিধিরাও। একই সঙ্গে জি-২০ সম্মেলনে আসা বা না আসা নিয়ে কোনও তথ্য দেননি ইটালির প্রধানমন্ত্রী জর্জিয়া মেলোনি ও ইন্দোনেশিয়ার প্রেসিডেন্ট জোকো উইডোডো।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.