জলের তলায় কাজিরাঙা! সাঁতার কাটতে কাটতে ক্লান্ত গন্ডাররা, মৃত পশুর সংখ্যা ছাড়াল ৫০

ক্রমেই খারাপ হচ্ছে অসমের বন্যা পরিস্থিতি। শুধু মানুষ নয়, সমস্যায় পড়েছে বন্যপ্রাণও। অসমের অন্যতম বিখ্যাত অভয়ারণ্য কাজিরাঙা জাতীয় উদ্যান ভেসে গিয়েছে বন্যায়। আশ্রয়ের খোঁজে জলে ভেসে ভেসে রাজ্যের নানা প্রান্তে গিয়ে ঠেকছে বাঘ, হরিণ, গন্ডার।

ইতিমধ্যেই আশ্রয়ের খোঁজে মরিয়া হরিণের একটি দলের ভিডিও ভাইরাল হয়েছে। গত কালই প্রকাশ্যে এসেছে, স্থানীয় বাসিন্দার বাড়িতে ঢুকে খাটের উপরে আশ্রয় নিয়েছে একটি বাঘ। ৫০টিরও বেশি পশু বন্যায় প্রাণ হারিয়েছে বলে খবর এসেছে। উদ্ধার করা হয়েছে কয়েকটি দেহ। এর মধ্যেই দেখা গেল জলে সাঁতার কাটতে কাটতে ক্লান্ত হয়ে এক টুকরো জমি পেয়ে ক্লান্ত হয়ে বিশ্রাম নিচ্ছে এক দল গন্ডার। রাস্তায় এসে উঠেছে হাতি, বাঘ।

জানা গিয়েছে, কাজিরাঙার প্রায় ৯০ শতাংশ বনই জলের তলায় চলে গেছে। ৪৩০ বর্গ কিলোমিটার জমিতে অনেকটা উপর দিয়ে বইছে বন্যার জল। কোথাও কোথাও এই বন্যার জল ৩ ফুট পর্যন্ত উঠে গিয়েছে। ১৯৯টি অ্যান্টি-পোচিং ক্যাম্পের মধ্যে ১৬৯টি ক্যাম্পই এখন জলের তলায়।

ইতিমধ্যেই কাজিরাঙা অভয়ারণ্যের ভিতরে দু’টি গন্ডার জলে ডুবে মারা গিয়েছে। একটি গন্ডারের দেহ উদ্ধার হয়েছে পার্কের বাইরে থেকে। একটি হাতি, একটি হরিণ ও দু’টি বুনো শুয়োরের দেহও উদ্ধার হয়েছে। তাদেরও জলে ডুবে মৃত্যু হয়েছে বলে জানা গিয়েছে।

প্রায় দু’সপ্তাহ ধরে প্রবল বৃষ্টিতে ভয়াবহ আকার ধারণ করেছে অসমের বন্যা পরিস্থিতি। ৩৩টি জেলার মধ্যে ৩০টি জেলাই বন্যাকবলিত হয়ে পড়েছে। ফলে প্রায় ৩০ লক্ষের বেশি মানুষ ঘরছাড়া। জাতীয় বিপর্যয় মোকাবিলা সংস্থা ও রাজ্য প্রশাসনের পাশাপাশি ত্রাণকার্যে হাত লাগিয়েছেন ১ হাজার সেনা জওয়ানও।

তবে উদ্ধারকাজ যতই দ্রুত চলুক, ব্রহ্মপুত্র নদের পাশে অবস্থিত কাজিরাঙা জাতীয় উদ্যানের পরিস্থিতি খুবই বিপজ্জনক হয়ে পড়েছে। মারাত্মক সমস্যায় পড়েছে পশুরা।

সম্প্রতি পরভিন কাসওয়ান নামে বন দফতরের এক আধিকারিক একটি ভিডিও সোশ্যাল মিডিয়া পোস্ট করেছেন। তাতে দেখা যাচ্ছে, একগলা জল পেরিয়ে যাওয়ার সময় করুণ মুখে এদিক-ওদিক তাকাচ্ছে পাঁচটি হরিণ। কাজিরাঙার নিরাপদ আশ্রয়ে জল ঢুকে পড়ায় গৃহহীন হয়ে পড়েছে তারা। তাই প্রাণ বাঁচাতে বেরিয়ে পড়েছে এক টুকরো উঁচু জমির সন্ধানে।

ইউনেস্কোর স্বীকৃতি পাওয়া কাজিরাঙা অরণ্য একশৃঙ্গ গন্ডারের জন্য বিখ্যাত। সারা পৃথিবীতে অবশিষ্ট এই প্রাণীটির দুই তৃতীয়াংশই এই অরণ্যে অবস্থিত। এই বন্যার পরে সেই সংখ্যাটা অনেকটা ধাক্কা খাবে বলেই আশঙ্কা সকলের।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.