১৯৩০ সালের ডিসেম্বর মাসে যুব বিদ্রোহের সঙ্গে জড়িত থাকার অভিযোগে পূর্ণেন্দু দস্তিদারকে পুলিশ গ্রেফতার করে। শুরু হয় জেল জীবন। যখন তাঁকে বন্দী করা হয় তখন তাঁর ইঞ্জিনিয়ারিং শেষ বর্ষের পরীক্ষা প্রায় ঘনিয়ে এসেছিল। তখন কারাগারে থেকে রাজবন্দীদের পরীক্ষায় অংশ নেয়ার সুযোগ-সুবিধা ছিল খুবই সীমিত। ফলে তাঁর পক্ষে ইঞ্জিনিয়ারিং পরীক্ষা দেয়া সম্ভব ছিল না। কারণ বিজ্ঞান ও কৃতকৌশলগত বিষয়ে পাঠ্যসূচিতে গবেষণাগারে হাতে-কলমে বাস্তব কাজ করা ও বাস্তব কাজের পরীক্ষা দেয়া একান্ত আবশ্যক ছিল। যেটি তাঁর পক্ষে সম্ভব ছিল না। বন্দী জীবন দীর্ঘায়িত হওয়ায় পূর্ণেন্দু দস্তিদার ইঞ্জিনিয়ারিং পরীক্ষা দেয়ার আশা ত্যাগ করলেন। কারাগারে বন্দীদের সাধারণ কয়েকটি বিষয় নিয়ে পড়াশুনার সুযোগ ছিল। তাই তিনি কারাগার থেকে বি.এ. পরীক্ষা দেয়ার প্রস্তুতি গ্রহণ করেন। ১৯৩৪ সালে তিনি দেউলি কারাগার থেকে ডিস্টিংশনসহ বি.এ.পাস করেন। এরপর তিনি এক পর্যায়ে কারাগার থেকে বি.এল. ডিগ্রি অর্জন করেন। দীর্ঘ ৮ বছর কারাবাসের পর ১৯৩৮ সালে তিনি মুক্তি পান। কিন্তু মুক্তি পাওয়ার পরও ১৯৩৮-১৯৪০ সাল পর্যন্ত তিনি অন্তরীণ ছিলেন।
জীবনের দীর্ঘ সময় তাঁকে কাটাতে হয় জেলে। আর জেলে বসে তিনি রচনা করেন তাঁর বেশির ভাগ গ্রন্থ। এসব গ্রন্থে তিনি তুলে আনেন ব্রিটিশবিরোধী বিপ্লবীদের জীবনের নানা অভিজ্ঞতা ও ত্যাগের কথা। তিনি বঙ্গসাহিত্যের মধ্যে যুক্ত করেন সাহিত্যের এক নতুন ধারা, বিপ্লবী রাজনৈতিক সাহিত্য।
পূর্ণেন্দু দস্তিদারই প্রথম চট্টগ্রাম বিপ্লবী দলে নারীদের অন্তর্ভূক্ত করেন। তখনকার দিনে সশস্ত্র বিপ্লবী দলে নারীদেরকে নানা কারণে নেয়া হতো না। তার মধ্যে একটা অন্যতম কারণ ছিল; বিপ্লবীরা নারী সংস্পর্শে এলে বিপ্লবী পথে-মতে জীবন উৎসর্গ করতে দ্বিধা-দ্বন্দ্বে ভুগবেন। তিনি এধারণা পাল্টে দেন। বিপ্লবী দলে তিনি কল্পনা দত্ত ও প্রীতিলতাসহ আরো অনেক নারীকে সংগঠিত করেন। সূর্যসেন প্রথম দিকে বিপ্লবী দলে নারীদের অন্তর্ভূক্ত করার ব্যাপারে বাধা দিলেও শেষ পর্যন্ত তিনি তাঁর সিদ্ধান্ত পরিবর্তন করে পূর্ণেন্দু দস্তিদারের কথা মেনে নেন।
পূর্ণেন্দু দস্তিদারের জন্ম ১৯০৯ সালের ২০ জুন। চট্টগ্রাম জেলার পটিয়ার ধলঘাট গ্রামে। তাঁর বাবা চন্দ্রকুমার দস্তিদার। দস্তিদার সুলতানী আমলের পদবী, বিচার কাজের সাথে যুক্ত দলিল-দস্তাবেজের যারা রক্ষক তাদেরকে সাধারণত ‘দস্তিদার’ বলা হত। বংশসূত্রে তাঁরা ছিলেন দাশগুপ্ত। কিন্তু কালক্রমে পদবীই হয়ে উঠলো তাঁদের বংশ পরিচয়।
পূর্ণেন্দু দস্তিদারের বাবা চন্দ্রকুমার দস্তিদার প্রেসিডেন্সি কলেজ থেকে প্রথম শ্রেণীতে স্নাতক ডিগ্রী অর্জন করার পর চট্টগ্রাম আদালতের আইনজীবী হিসেবে কর্ম জীবন শুরু করেন। তাঁর মা কুমুদিনী দস্তিদার। তিনি ছিলেন একজন দেশপ্রমী নারী। তাঁর উদারতা ও দেশপ্রেম প্রতিটি সন্তানের মাঝে প্রভাব বিস্তার করে।
পূর্ণেন্দু দস্তিদার ছিলেন সাত ভাইয়ের মধ্যে বড়। দ্বিতীয় অর্ধেন্দু দস্তিদার, তিনি জালালাবাদ পাহাড়ে সশস্ত্র সংগ্রামের সময় শহীদ হন। তৃতীয় সূখেন্দু দস্তিদার, যাঁর ছদ্মনাম বশীর ভাই। তিনি আজীবন বাম রাজনীতির সাথে সম্পৃক্ত ছিলেন। চতুর্থ অমলেন্দু (হেমেন্দু দস্তিদার) জালালাবাদ যুদ্ধের অগ্রসেনানী, দেশভাগের সময় চট্টগ্রাম ছেড়ে চলে যান। তিনি ডিব্রুগড়ে রেলে কাজ করতেন। পঞ্চম বিমলেন্দু দস্তিদার, তিনি ছিলেন শিক্ষক। ষষ্ঠ শুভেন্দু দস্তিদার ও সপ্তম কৃষ্ণেন্দু দস্তিদার উভয়ে আসামে রেলে কাজ করতেন। তাঁদের কোনো বোন ছিলনা।
পূর্ণেন্দু দস্তিদারের পড়াশুনার হাতেখড়ি পরিবারে, বাবা ও মামার কাছে। শৈশবে তাঁর শিক্ষা জীবন চট্টগ্রামেই শুরু হয়। প্রথমে তিনি সরকারী এম.ই. স্কুল এবং পরে চট্টগ্রাম কলেজিয়েট স্কুলে পড়াশুনা করেন। অল্প বয়সে তিনি রাজনীতির সাথে যুক্ত হন।
১৯২১ সালের অসহযোগ আন্দোলনের সময় পূর্ণেন্দু দস্তিদার এম.ই. স্কুলে সপ্তম শ্রেণীর ছাত্র ছিলেন। ঠিক ওই সময় মাস্টারদা সূর্যসেন পড়াশুনা জীবনের ইতি ঘটিয়ে চট্টগ্রাম মিউনিসিপ্যাল স্কুলে শিক্ষকতা শুরু করেন। ওই বছর দেশবন্ধু চিত্তরঞ্জন দাশ অসহযোগ আন্দোলনের কাজে চট্টগ্রাম আসেন। এ উপলক্ষে এক বিরাট জনসভা হয়। এই জনসভায় চট্টগ্রামের স্কুল-কলেজের ছাত্ররা যোগ দেন। এতে পূর্ণেন্দু দস্তিদার ছিলেন।
এই জনসভায় বসে চট্টগ্রামের প্রায় সকল দেশপ্রমিক শিক্ষক, রাজনীতিক, সংগঠক, যাঁরা ব্রিটিশ সরকারের অধীনে চাকুরীরত ছিলেন, তাঁরা চাকুরী ছেড়ে দিয়ে অসহযোগ আন্দোলনে যুক্ত হন। এই সময় মাস্টারদা সরকারী স্কুলের চাকরী ছেড়ে দেন।
ওই বছর অসহযোগ আন্দোলনের সময় চট্টগ্রামে স্থানীয় জনগণের সহযোগিতায় একটি জাতীয় বিদ্যালয় গড়ে ওঠে। তখন সূর্যসেন এই বিদ্যালয়ে শিক্ষকতা শুরু করেন। এটি উমাতারা স্কুল নামে পরিচিত হয়। এই সময় তিনি মাস্টারদা নামে পরিচিত হতে থাকেন। তিনি ছাত্রদেরকে স্নেহ-ভালোবাসা দিয় জয় করতেন। আর ছাত্ররাও তাঁকে অত্যন্ত ভক্তি-শ্রদ্ধা করত। এক সময় এই স্কুলই মাষ্টারদার বিপ্লবী কর্মকাণ্ডের গুরুত্বপূর্ণ কেন্দ্র হয়ে ওঠে। ছাত্রদের সামনে তিনি তুলে ধরতেন স্বাধীনতার আহ্বান।
১৯২১-২৪ সাল পর্যন্ত অসযোগ আন্দোলনের মাধ্যমে মাস্টারদা চট্টগ্রামের প্রায় সকল ছাত্রদের কাছে প্রিয় শিক্ষক হয়ে উঠেন। এই অসংখ্য ছাত্রদের মধ্যে আবার হাতে গোনা কয়েকজন তাঁর বিপ্লবী দলের সাথে পরিচিত ছিলেন। এদের মধ্যে পূর্ণেন্দু দস্তিদার ছিলেন অন্যতম। ১৯২৩ সালে তিনি মাস্টারদার সংস্পর্শে এসে বিপ্লববাদী দলে যুক্ত হন। দেশের স্বাধীনতার জন্য দৃঢ়চিত্তে শুরু করেন বিপ্লবী দলের কর্মকান্ড। অল্পবয়সে তিনি হয়ে উঠেন বিপ্লবী দলের অত্যন্ত নির্ভরযোগ্য এক সদস্য।
১৯২৪ সাল। ভারত উপমহাদেশব্যাপী ছড়িয়ে পড়ছে ব্রিটিশবিরোধী আন্দোলন। সর্বত্র সংগঠিত হচ্ছে সশস্ত্র বিপ্লববাদী সংগঠন। চট্টগ্রামে রেলওয়ে ডাকাতি, বঙ্গের বিভিন্ন জায়গায় রাজনৈতিক ডাকাতি ও বিপ্লববাদীদের সশস্ত্র কার্যকলাপের কারণে বঙ্গীয় প্রাদেশিক পরিষদে ব্রিটিশ সরকার ‘বেঙ্গল অর্ডিনান্স’ নামে এক জরুরি আইন পাশ করে। এই আইনের উদ্দেশ্য ছিল- ‘রাজনৈতিক কার্যকলাপের জন্য সন্দেহভাজনদের বিনা বিচারে আটক রাখা’। এই আইন পাশ হওয়ার পর ব্রিটিশ সরকার সশস্ত্র বিপ্লববাদীদের গ্রেফতার করা শুরু করে।
১৯২৫ সালে পুলিশ সূর্যসেনকে ধরার জন্য দেওয়ান বাজারে তাঁর শ্বশুর বাড়ি ঘেরাও করে। সূর্যসেন পুলিশকে ফাঁকি দিয়ে পূর্ণেন্দু দস্তিদারের বাসায় ওঠেন। পূর্ণেন্দু দস্তিদার তখন চট্টগ্রাম কলেজের ছাত্র ছিলেন। এখানে পড়ার সময়ই তিনি শহরের ছাত্র-যুব বিপ্লবীচক্রের ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক ছিলেন। তিনি বিপ্লবী নেতা সূর্যসেনের পলাতক জীবনের প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা করেন। বিপ্লবী দলের ক্ষুদিরাম, বাঘা যতীন, কানাইলাল, দেশের কথা, ও সরকারী রাউলাট কমিশন ইত্যাদি যেসব গোপন বই-পত্র ছিল তা রক্ষা করার দায়িত্ব ছিল তাঁর উপর। তিনি এসব গোপন বই তাঁর খুড়তুতো বোন প্রীতিলতার কাছে রেখে দেন।
১৯২৫ সালে সশস্ত্র বিপ্লববাদী দলের সাথে যুক্ত অবস্থায় চট্টগ্রাম কলেজিয়েট স্কুল থেকে প্রবেশিকা পরীক্ষায় ১ম বিভাগে উত্তীর্ণ হয়ে চট্টগ্রাম কলেজে ভর্তি হন। ১৯২৬ সালে সূর্যসেনকে কলকাতা থেকে গ্রেফতার করে ব্রিটিশ পুলিশ। সূর্যসেন গ্রেফতার হওয়ার পর বিপ্লবী কাজের দায়িত্ব পড়ে তরুণ নেতৃত্বের উপর। তরুণদের মধ্যে পূর্ণেন্দু দস্তিদার বিপ্লবী দলে নতুন সদস্য অন্তর্ভূক্ত করার ক্ষেত্রে ছিলেন অত্যন্ত দক্ষ।
১৯২৭ সালে চট্টগ্রাম কলেজ থেকে প্রথম বিভাগে উচ্চ-মাধ্যমিক পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হন। তারপর যাদবপুর ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজে ইলেক্ট্রিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিং-এ ভর্তি হন। ১৯২৮ সালে চট্টগ্রামের বিপ্লবীরা মুক্তি পান। এসময় পূর্ণেন্দু দস্তিদার কলকাতায় চলে আসেন। এখানে তিনি বিপ্লবী দলের সাথে রিভলভার, পিস্তল কেনা, বিস্ফোরকের জন্য পিকরিক এসিড সংগ্রহ, গান কটন তৈরী করা, বোমার খোল বিভিন্ন জেলে পৌছে দেয়ার কাজ করতেন। কিছুদিনের মধ্যে তিনি কলকাতাস্থ চট্টগ্রাম বিপ্লবী দলের একজন প্রধান সদস্যে পরিণত হন।
১৯৩০ সালের ১৮ এপ্রিল সূর্য সেন সশস্ত্র অভ্যুত্থানের মাধ্যমে চট্টগ্রাম অস্ত্রাগার দখল করেন। ঐতিহাসিক রমেশচন্দ্র মজুমদার ১৮ এপ্রিল যুববিদ্রোহ বা চট্টগ্রাম অস্ত্রাগার লুণ্ঠনের ঘটনাকে ‘ভারতের বিপ্লবী কর্মকাণ্ডের সবচেয়ে সাহসিকতাপূর্ণ কাজ’ হিসাবে চিহ্নিত করেছেন। এটি ছিল দেড়শত বছরের ইতিহাসের মধ্যে ইংরেজদের জন্য খুবই অপমানজনক ঘটনা। এদেশের মানুষের কাছে ইংরেজ বাহিনীর প্রথম পরাজয় ছিল এটি।
চট্টগ্রাম অস্ত্রাগার দখল করার পূর্ব প্রস্তুতি পর্বের সকল কাজের সাথে পূর্ণেন্দু দস্তিদার যুক্ত ছিলেন। সূর্যসেন তাঁকে কলকাতা থেকে কাজ করার জন্য নির্দেশ দিতেন। তাই পূর্ণেন্দু দস্তিদারের প্রবল ইচ্ছা থাকা সত্বেও সরাসরি অস্ত্রাগার দখলের সশস্ত্র অভ্যুত্থানে থাকতে পারেননি। সূর্যসেনের পূর্ব নির্দেশ অনুযায়ী তিনি কলকাতার খ্যাতিমান সাহিত্যিক নীরদচন্দ্র চৌধুরীর বাসায় আত্মগোপন করেন। ১০ দিন পরে সেই বাসা থেকে অন্য এক বাসায় আত্মগোপন করেন।
চট্টগ্রাম অস্ত্রাগার দখল করার পর ব্রিটিশ পুলিশ বিপ্লবীদের গ্রেফতার করার জন্য মরিয়া হয়ে উঠে। চট্টগ্রামের অনন্ত সিং, গনেশ ঘোষ, আনন্দগুহ, মাখম ঘোষালসহ কয়েক জন বিপ্লবী কলকাতায় এসে আত্মগোপনে যান। সেখানে পূর্ণেন্দু দস্তিদারও ছিলেন। কিন্তু ১৯৩০ সালেই তাঁকে গ্রেফতার করা হয়, যার বর্ণনা শুরুতেই দেয়া হয়েছে।
১৯৪০ সালে তিনি বিপ্লবী রাজনীতির পাশাপাশি চট্টগ্রাম আদালতে আইনজীবী হিসেবে কর্মজীবন শুরু করেন। এ সময় তিনি কমিউনিস্ট পার্টির রাজনীতির সঙ্গে যুক্ত হন। ওই বছর তিনি শান্তিদেবীকে বিবাহ করেন। বিবাহের পর শান্তি দস্তিদার সংসারের হাল ধরতে স্কুলে চাকুরী নেন। শান্তি দস্তিদারও কমিউনিস্ট পার্টির রাজনীতির সঙ্গে যুক্ত হন। পূর্ণেন্দু দস্তিদার দুই পুত্র ও এক কন্যার পিতা হয়েছিলেন।
১৯৪৩ সালে সারা বাংলায় দুর্ভিক্ষ ও মহামারী দেখা দেয়। এ সময় কমিউনিষ্ট পার্টি সারা দেশব্যাপী লঙ্গরখানা খুলে বুভুক্ষু মানুষকে বাঁচানোর সর্বাত্মক চেষ্টা করে। এই দুর্ভিক্ষ থেকে মানুষকে বাঁচাতে পূর্ণেন্দু দস্তিদার অমানুষিক পরিশ্রম করেন। ১৯৪২ থেকে ১৯৪৭ সাল পর্যন্ত তিনি প্রকাশ্যে কমিউনিস্ট পার্টির রাজনীতির সঙ্গে যুক্ত থেকে চট্টগ্রামে পার্টির শক্তিশালী ভিত গড়ে তোলেন।
১৯৪৬ সালের ভয়াবহ সাম্প্রদায়িক দাঙ্গার সমায় তিনি জীবনবাজী রেখে অসীম সাহসিকতার সাথে দাঙ্গা মোকাবেলা করেন। পাকিস্তান আমলের পুরোটা সময় কেটেছে তাঁর জেল আর আত্মগোপনে। আত্মগোপনে থাকাবস্থায় তিনি বিভিন্ন স্থানে কমিউনিস্ট পার্টি গড়ে তোলেন।
১৯৪৮ সালের ৬ মার্চ নবগঠিত পাকিস্তান কমিউনিস্ট পার্টির পূর্ব পাকিস্তান শাখার সদস্য নির্বাচিত হন তিনি। একই বছর বিপ্লবী রাজনীতিতে জড়িত থাকার কারণে পাকিস্তান পুলিশ পুনরায় তাঁকে গ্রেফতার করে। ১৯৫৪ সালের যুক্তফ্রন্ট নির্বাচনে জেলে আটক থাকা অবস্থাতেই তিনি চট্টগ্রাম জেলার হিন্দু আসন থেকে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেন। এই নির্বাচনে তিনি জয়ী হয়ে পূর্ববঙ্গ পরিষদের সদস্য নির্বাচিত হন।
১৯৫৫ সালের ৯ জুন জেল থেকে মুক্তি পান। তিনি পূর্ববঙ্গ পরিষদে চট্টগ্রাম যুব বিদ্রোহের (১৮ এপ্রিল ১৯৩০) স্মারকস্তম্ভ নির্মাণের প্রস্তাব উত্থাপন করেন। ১৯৫৬ সালে প্রস্তাবটি ব্যবস্থাপক সভায় গৃহীত হয় । ১৯৫৭ সালের ২৬ জুলাই মওলানা আবদুল হামিদ খান ভাসানীর নেতৃত্বে ন্যাশনাল আওয়ামী পার্টি (ন্যাপ) গঠিত হলে তিনি ন্যাপের রাজনীতিতে যুক্ত হন।
১৯৫৮ সালের ৭ অক্টোবর দেশে সামরিক আইন জারি করা হয়। এ সময় তাঁকে আবারো গ্রেফতার করে পাকিস্তান পুলিশ। ১৯৬২ সালে তিনি মুক্তি পান। ওই বছর ন্যাশনাল আওয়ামী পার্টির চট্টগ্রাম শহর কমিটির সভাপতি নির্বাচিত হন।
১৯৬৩ সালে ‘কবিয়াল রমেশ শীল’ নামে তাঁর রচিত একটি গ্রন্থ প্রকাশিত হয়। এছাড়া তাঁর রচিত গ্রন্থ ‘স্বাধীনতা সংগ্রামে চট্টগ্রাম’, ‘বীরকন্যা প্রীতিলতা’ এবং অনূদিত গ্রন্থ ‘শেকভের গল্প’, ‘মোপাশাঁর গল্প’ প্রকাশিত হয়।
১৯৬৫ সালের সেপ্টেম্বর মাসে ভারত-পাকিস্তান যুদ্ধের সময় আরেকবার তাঁকে গ্রেফতার করা হয়। ১৯৬৯ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে গণ- আন্দোলনের চাপে অন্যান্য তরুণ রাজনৈতিক নেতৃত্বের সাথে তিনিও মুক্তি পান। মুক্তি পাওয়ার পর তিনি মস্কোপন্থী ন্যাপের রাজনৈতিক প্রক্রিয়ায় অংশগ্রহণ করেন।
১৯৭০ সালের ১৬ ডিসেম্বর পূর্ব পাকিস্তান প্রাদেশিক পরিষদের নির্বাচনে চট্টগ্রাম-১১ আসন থেকে ন্যাপের মনোনয়নে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেন। কিন্তু তিনি পরাজিত হন।
১৯৭১ সালের ৯ মে পূর্ণেন্দু দস্তিদার বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহণের উদ্দেশ্যে ভারত গমন করেন। দেমাগিরি বর্ডার দিয়ে সীমান্ত পার হবার পর তিনি অজ্ঞাত কারণে মৃত্যুবরণ করেন।
তথ্য সংগৃহীত – প্রতাপ সাহা (https://www.facebook.com/pratapcsaha)। ধন্যবাদ।