একের পর এক বিতর্কিত,চর্চিত রায় দিয়ে বারংবার সংবাদ শিরোনামে উঠে এসেছিলেন সুপ্রিম কোর্টের সদ্য প্রাক্তন প্রধান বিচারপতি রঞ্জন গগৈ।শেষ দিনে তাঁর অবসর গ্রহণ হল কিছুটা নিস্তরঙ্গ ভাবেই। শুক্রবার, অবসর গ্রহণের আগে উত্তরসূরি বিচারপতি এসএ বোবদেকে সঙ্গে নিয়ে সুপ্রিম কোর্টের এক নম্বরে কর্মজীবনে শেষ দিন শুরু করেন রঞ্জন গগৈ।
চার মিনিটে ১০টি মামলা শুনে তা বিচারপতি এসএ বোবদের সামনে হাজির করার নির্দেশ দেন। এর মাঝেই একটি নোটের মাধ্যমে তিনি বলেন, ‘নিয়মমাফিক স্বাধীনতা পেলেও বিচারব্যবস্থায় কিছু সময় চুপ করে থাকার প্রয়োজন হয়।’
রঞ্জন গগৈ-এর অবসর গ্রহণের সময় আগামি ১৭ই নভেম্বর হলেও আগামীকাল এবং পরশু শনি ও রবিবার ফলে কোর্ট বন্ধ থাকবে। তাই কার্যত শুক্রবারই শেষ দিন ছিল গগৈয়ের। অবসর গ্রহণের আগে বেশ কিছু অমীমাংসিত বিতর্কিত মামলার রায় ঘোষণা করবেন বলেই আগেই জানিয়েছিলেন রঞ্জন গগৈ। গত এক সপ্তাহ ধরে একের পর এক হাই প্রোফাইল মামলার রায় ঘোষণা করেছেন সুপ্রিম কোর্টের এই সদ্য প্রাক্তন বিচারপতি। গত ১০ নভেম্বর অযোধ্যার রায় প্রকাশ করে সুপ্রিম কোর্টের প্রধান বিচারপতি রঞ্জন গগৈয়ের নেতৃত্বাধীন বেঞ্চ।
বিতর্কিত অযোধ্যা মামলায় রামলালা বিরাজমানকেই বিতর্কিত জমি দেয় দেশের সর্বোচ্চ আদালত। ঐতিহাসিক এই রায়ে সুপ্রিম কোর্ট কেন্দ্রীয় সরকারকে আগামী দু’মাসে মধ্যে রাম মন্দির নির্মাণের জন্য ট্রাস্ট বানিয়ে পরিকল্পনা তৈরি করার নির্দেশ দেয়। এর পাশাপাশি সরকারের দেওয়া পাঁচ একর জমিতে ‘সুন্নি ওয়াকফ’ বোর্ডকে মসজিদ নির্মাণ করার আদেশ দেয় সুপ্রিম কোর্ট। এই রায়ের জেরে নিরাপত্তার চাদরে মুড়ে দেওয়া হয় গোটা উত্তরপ্রদেশ তবে কোনও অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটেনি।
১৪ নভেম্বর এক সঙ্গে তিনটি মামলার রায় ঘোষণার কথা জানিয়েছিলেন সদ্য প্রাক্তন প্রধান বিচারপতি রঞ্জন গগৈ। বৃহস্পতিবার শবরীমালা মন্দিরে সব বয়সী মহিলাদের প্রবেশের অধিকার সংক্রান্ত মামলা সাত সদস্যের সাংবিধানিক বেঞ্চে পাঠায় প্রধান বিচারপতি রঞ্জন গগৈয়ের নেতৃত্বাধীন পাঁচ সদস্যের ডিভিশন বেঞ্চ।
এই রায় প্রসঙ্গে মুখ্য বিচারপতি রঞ্জন গগৈ জানান, ‘এই ধরনের ধর্মীয় বিষয়ে নিয়ে চটজলদি রায় দেওয়া যায় না। শুধু শবরীমালাই নয় বৃহত্তর ধর্মীয় বিষয়গুলি বিবেচনার জন্যই এই রায়ে সাংবিধানিক বেঞ্চে পাঠানো হল।’ শবরীমালা মন্দিরে মহিলাদের প্রবেশাধিকার ছাড়াও সুপ্রিম কোর্ট এই সাত সদস্যের বেঞ্চকে নির্দেশ দেয় শুধু হিন্দু ধর্মই নয়, অন্যান্য ধর্মীয় ক্ষেত্রে মহিলাদের বিভিন্ন বিষয় গুলিকেও। এই প্রসঙ্গে সুপ্রিম কোর্ট উল্লেখ করে মসজিদে মহিলাদের প্রবেশাধিকার, পারসি মহিলার সঙ্গে অ-পারসি পুরুষের বিবাহ এবং দাউডি বোহরা সম্প্রদায়ে নারীদের যৌনাঙ্গহানি বা (genital mutilation)-এর বিষয়টিও।
একই দিনে রাফায়েল মামলার পুনর্বিবেচনার আর্জি খারিজ করে দেয় সুপ্রিম কোর্ট। ২০১৮ সালের ডিসেম্বরে সুপ্রিম কোর্ট জানিয়েছিল রাফালে তদন্তের প্রয়োজন নেই সেই রায়কেই পুনর্বিবেচনার আর্জি জানানো হয়। দাখিল হয় রিট পিটিশনও। বৃহস্পতিবার রায়ে সেই আর্জি খারিজ করে দেয় সুপ্রিম কোর্ট।
একই সঙ্গে রাহুল গান্ধীর মানহানির মামলার ক্ষেত্রেও রায় দেয় রঞ্জন গগৈ। গত লোকসভা ভোটে নির্বাচনী প্রচারে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীকে ‘চৌকিদার চোর হ্যায়’ বলে স্লোগান দিয়েছিলেন কংগ্রেস নেতা রাহুল গান্ধী। জনসভাতে এই স্লোগানের পরিপ্রেক্ষিতেই রাহুলের বিরুদ্ধে মানহানির মামলা দায়ের করেন বিজেপি নেত্রী মীনাক্ষী লেখি। এই মামলা পর্যবেক্ষণে সুপ্রিম কোর্ট রায় দিতে গিয়ে জানায়, রাহুল গান্ধীর এই ধরনের মন্তব্য দুর্ভাগ্যজনক। এমন মন্তব্যের ক্ষেত্রে পরবর্তীকালে তাঁকে সতর্ক হতেও নির্দেশ দেয় আদালত। এক একটি হেভিওয়েট মামলার রায় দিয়ে খবরের শিরোনামে থাকা প্রধান বিচারপতি অবসর গ্রহণ করলেন কার্যত নিঃশব্দেই।