বিজেপিকে পরাস্ত করে মহারাষ্ট্রের মসনদে দখল নিয়েছে কংগ্রেস-এনসিপি-শিবসেনা জোট। এই জোট সরকারের মুখ্যমন্ত্রী হয়েছেন শিবসেনা প্রধান উদ্ধব ঠাকরে। কিন্তু, এর মাঝেই শিবসেনার অস্বস্তি বাড়িয়ে প্রায় ৪০০ জন শিবসেনা কর্মী যোগ দিয়েছেন বিজেপিতে। বুধবার, বিকেলে মুম্বইয়ের ধারাভি অঞ্চলে বিজেপির এক কর্মিসভায় উপস্থিত হয়ে তাঁরা বিজেপিতে যোগ দেন।
মহারাষ্ট্রে সরকার গড়ার ব্যাপারে তিন দলের সমঝোতা যখন প্রায় চূড়ান্ত, তখন ২২ নভেম্বর মাঝ রাতে ‘সার্জিকাল স্ট্রাইক’ করে বিজেপি। এনসিপি ভেঙে ফডণবীসের হাত ধরেন শরদ পওয়ারের ভাইপো অজিত। দাবি করেন এনসিপির অধিকাংশ বিধায়কই তাঁর সঙ্গে রয়েছেন। এর পর অবিশ্বাস্য দ্রুততায় রাষ্ট্রপতি শাসন প্রত্যাহারের সুপারিশ দিল্লি পাঠান রাজ্যপাল। নিজের বিশেষ ক্ষমতা প্রয়োগ করে মন্ত্রিসভার বৈঠক ছাড়াই সেই সুপারিশে সায় দেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। ভোর পৌনে ছ’টায় রাষ্ট্রপতি রামনাথ কোবিন্দের সইয়ের পরে উঠে যায় রাষ্ট্রপতি শাসন। শনিবার সকাল আটটায় শপথ নেন দেবেন্দ্র ও অজিত।
বিজেপি সূত্র দাবি করে, নিঃশব্দে নেপথ্যে থেকে ‘বাজিমাত’ করেছেন দলীয় সভাপতি অমিত শাহ। কিন্তু হাল ছাড়েননি শরদ পওয়ার। একদা ইন্দিরা, রাজীব, সনিয়া গাঁধীর সঙ্গে টক্কর নেওয়া শরদ ৭৯ বছর বয়সে এসেও দেখিয়ে দিলেন, মরাঠা রাজনীতিতে এখনও তিনিই স্ট্রংম্যান। তাঁর কাছে পর্যুদস্ত হতে হল গোয়া, মণিপুর, হরিয়ানায় কৌশলে সরকার গড়ে বিজেপির ‘চাণক্য’ হয়ে ওঠা শাহকে।
হতাশ ফডণবীস আজ দাবি করেন, অজিতের উপর ভরসা করেই সরকার গড়তে ঝুঁকি নিয়েছিল দল। কিন্তু কার্যক্ষেত্রে সেই সমর্থন আসেনি। এনসিপি ভাঙেনি। উল্টে যারা অজিতের সঙ্গে গিয়েছিলেন, এক এক করে শরদ শিবিরে ফিরে যান তাঁরা। বিজেপির এ-ও আশা ছিল যে, শিবসেনা ও কংগ্রেসের বিধায়কদের ভাঙিয়ে আনা সম্ভব হবে। ব্যর্থ হয় তা-ও। গত ২৬ নভেম্বর মুম্বইয়ের হোটেলে ১৬২ জন বিধায়ককে হাজির করে বিজেপির আশায় জল ঢেলে দিয়েছিলেন শরদ-উদ্ধবেরা।
এরপরেই মহারাষ্ট্রে রণে ভঙ্গ দেয় বিজেপি। গত ২৮ নভেম্বর বিধানসভায় সংখ্যাগরিষ্ঠতার প্রমাণ দিতে হত দেবেন্দ্র ফডণবীসকে। ২৭ নভেম্বর সকালে সকালে সুপ্রিম কোর্টের এই রায়ের পরে প্রথমে ইস্তফা দেন উপমুখ্যমন্ত্রী অজিত পওয়ার। তার কিছু পরেই ৮০ ঘণ্টার মুখ্যমন্ত্রিত্বে ইতি টেনে পদত্যাগ করেন ফডণবীস।
দীর্ঘ টানাপড়েনের পর মহারাষ্ট্রের মুখ্যমন্ত্রী হিসাবে শপথ নেন শিবসেনা প্রধান উদ্ধব ঠাকরে। মুম্বইয়ের শিবাজি পার্কে মহাসমারোহে তাঁর শপথ অনুষ্ঠান আয়োজন হয়েছিল। সন্ধ্যা ৬ টা বেজে ৪০ মিনিটে সেখানে শপথ নেন উদ্ধব ঠাকরে। শিবসেনা-এনসিপি-কংগ্রেস জোট থেকে আরও ছ’জন এ দিন সেখানে মন্ত্রী হিসাবে শপথ নেন। শপথ অনুষ্ঠান শেষ হওয়ার পর এ দিন রাতেই উদ্ধবের নেতৃত্বে মন্ত্রিসভার বৈঠক হওয়ার কথা।
উদ্ধবের শপথ অনুষ্ঠানে যোগ দিতে শিবাজি পার্ক যান এনসিপি সুপ্রিমো শরদ পওয়ার। কংগ্রেস নেতা কপিল সিব্বল, আহমেদ পটেলও পৌঁছন সেখানে। খুড়তুতো দাদার শপথ গ্রহণে যোগ দিতে এসে পৌঁছন মহারাষ্ট্র নবনির্মাণ সেনা প্রধান রাজ ঠাকরেও। দু’দিন আগে মহারাষ্ট্রের মুখ্যমন্ত্রী পদ থেকে ইস্তফা দেওয়া দেবেন্দ্র ফডণবীসকেও শপথ অনুষ্ঠানের মঞ্চে দেখা যায়।
পদত্যাগ করার সময়েই দেবেন্দ্র ফডণবীস ইঙ্গিত দিয়েছিলেন এই জোট সরকার বেশিদিন চলবে না। বুধবার শিবসেনার চার’শ জন কর্মী বিজেপিতে যোগ দেওয়াকে ‘তাৎপর্যপূর্ণ’ বলে মনে করছে রাজনৈতিক মহল।