স্বাধীনতার 75 বছর পরেও আমাদের দেশের পুষ্টির নিরিখে বহু এশিয়ান দেশের চেয়েও পিছিয়ে l বিপুল জনসংখ্যা, খাদ্যবন্টনে রাজনৈতিক ও আমলাতান্ত্রিক দুর্নীতি, সামাজিক বৈষম্য, লিঙ্গ বৈষম্য এবং সম্পদের অসমবন্টন নিঃসন্দেহে এর কারণ l রেশনে চাল পেলেও দুধ, ডিম, পনিরের মত সুষম খাদ্য 135 কোটি মানুষকে কিভাবে পৌঁছানো যায়? সম্ভবতঃ সরকারের সেই ক্ষমতা এখনো হয় নি l উচ্চমধ্যবিত্ত কিম্বা উচ্চবিত্তরা দুধ, ডিম পাওয়ার পরেও, ফুড সাপ্লিমেন্ট ট্যাবলেট খেয়ে ভিটামিন বা মিনারেলের ঘাটতি পূরণ করে l কিন্তু যে দেশের এখনো প্রায় ত্রিশ কোটি মানুষের নুন আনতে পান্তা ফুরোয়, তাদের কাছে ফুড সাপ্লিমেন আর হীরের আংটি সমান l সরকার যদি রেসনে এই ট্যাবলেট দেয়া শুরু করে, তবে দারিদ্র মানুষ সেটা বেচে অন্য কোন নিত্যপ্রয়জনীয় সামগ্রী কিনে নেবে l অথবা ধর্মের দোহাই দিয়ে কোভিড ভ্যাকসিনের মত এই ট্যাবলেটকে ‘হারাম’ বলে ব্রাত্য করে রাখা হল l এমনও হতে পারে, বাড়ির পুরুষরা ওই ট্যাবলেট খেয়ে নিল এবং মহিলাদের দিল না l পুত্র সন্তানকে দেয়া হল, কন্যা সন্তানকে বঞ্চিত করে l তাহলে উপায়?
ই- রুপি যেমন সামাজিক সুরক্ষার বরাদ্দকে সঠিক পথে খরচের গ্যারান্টি দেয়, তেমনই দেশের দারিদ্রতম ও প্রান্তিক সঠিক পুষ্টি নিশ্চিত করতে দেশের স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তীর বর্ষের সূচনায় লালকেল্লায় প্রধানমন্ত্রী ঘোষণা করলেন ‘ফর্টিফায়েড’ চাল বন্টন l ফর্টিফায়েড চাল কি? এর প্রয়োজন কি? দেখা গেছে, দেশের একটা বড় অংশের মানুষ এখনো চাল পেলেও, অভাব থেকে যায় মিনারেল, ভিটামিনসহ ভিন্ন মাইক্রোনিউট্রিয়েন্ট এর l আর সেই অভাব পূরণ করতে রেশনের চাল এবং স্কুলের দুপুরের খাবারের চালে কৃত্তিমভাবে যোগ করে দেয়া হবে এই পুষ্টিকর খাবার, যাকে দেখতে চালের মতই হবে l প্রতি এক কিলো চালে দশ গ্রাম মিশিয়ে দেয়া হবে এই চালের মত দেখতে খাদ্য l এই চালে মূলতঃ থাকবে আইরন, ভিটামিন B 12 এবং ফলিক অ্যাসিড l দ্বিতীয় ধাপে, ভিটামিন A, এবং বিভিন্ন ভিটামিন B যোগ করার কথা ভাবা হচ্ছে l আপাতত, এক কিলো চালে দশ গ্রাম ফর্টিফায়েড চাল মেশালে কাজ হবে? FSSAI এর মতে, প্রতি কিলো এই মিশ্র চালে মানুষের দেহের চাহিদা অনুযায়ী প্রতিটি মাইক্রোনিউটিয়ান্ট থাকবে l
চালকে বেছে নেবার কারণ, অধিকাংশ মানুষ এখনো মোট খাবারের 70% চাল খায় l এমনকি পৃথিবীর উন্নততম দেশেও সুষম খাদ্যের অভাব পুরণে এই ফর্টিফায়েড রাইস মিশিয়ে দেয়া হয় কার্বোহাইড্রোটে l মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, পানামা, কোস্টারিকা, নিকারাগুয়া, ফিলিপিন্স সহ বহু সাত আটটি দেশ এই রাস্তা নিয়েছে l এর একটা সুদূরপ্রসারী ইতিবাচক প্রভাব পড়বে জনস্বাস্থ্যে l কমবে স্বাস্থ্যখাতে খরচের পরিমান l চালের দাম বাড়বে মাত্র 60 পয়সা প্রতি কিলো l সংশ্লিষ্ট রাজ্য এবং কেন্দ্র শেয়ার করবে এই টাকা l 2024 এর মধ্যে দেশের প্রত্যেক রেশন দোকান ও স্কুল এই চাল পেতে চলেছে l চটের ব্যাগে এই চাল বিতরণ হবে, যেখানে +F চিহ্ন থাকবে l
শেষে বলি, যখন আন্তর্জাতিক রেটিং সংস্থা পুষ্টির নিরিখে আমাদের তুলনা করে বাংলাদেশ বা শ্রীলঙ্কার সঙ্গে, তখন বাংলা মিডিয়া সরকারের কঠোর সমালোচনা করলেও, আজ সরকারের এই যুগান্তকারী উদ্যোগের ব্যাপারে সম্পূর্ণ নীরব l মনে রাখতে হবে ইউরোপ, উত্তর আমেরিকার বহু উন্নতদেশ এবং চীন এখনো এই উদ্যোগ নেয় নি l
সুদীপ্ত গুহ