কিছুদিন ধরে একটা প্রশ্ন মনে ঘুর পাক খাচ্ছিল । ত্রিপুরা অভিযানে তৃণমূলের টাকাটা আসছে কোথা থেকে ?
আনুমানিক কত খরচ করছে তৃণমূল ? এনি আইডিয়া ? কারুর ?
একটা আন্দাজ পেলাম এক অভিজ্ঞের কাছে । সেটাই লিখছি । প্রায় প্রতিদিন আগরতলার ফ্লাইটে তৃণমূল নেতারা যাচ্ছেন, আসছেন, আবার পরের সকালে যাচ্ছেন । প্রথম দফায় একদম শুরুতে আই প্যাকের ২৩ জন ছেলে মেয়েকে আগরতলার থ্রি স্টার হোটেলে ১৬ দিন ধরে রেখে সমীক্ষা শুরু করেছিল তৃণমূল । আই প্যাকের এক প্রাক্তনী বলছিলেন এই পর্বেই তৃণমূল খরচ করেছে প্রায় ২৮ লক্ষ ৭০ হাজার টাকা । ঘোরা ফেরা, রিমোট অঞ্চলে যাওয়া এবং অন্যান্য খরচ বাবদ ।
এরপর শুরু হল বাকিদের সফর পাঁচ যুব তৃণমূল কর্মীদের পাঠানো । ঠিক তারপর অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়, ব্রাত্য বসু, কুণাল ঘোষ, দোলা সেনদের সফর । অভিষেক দিনের দিন ফিরে আসেন । বাকিরা পড়ে থাকেন । মধ্যিখানে ডেরেক ওব্রায়েন, কাকলী ঘোষদস্তিদারের রাজসিক ভ্রমণ। ব্রাত্য ইতিমধ্যে বার দুয়েক, কুণাল বার তিনেক, সায়নী ঘোষ দিন চারেক, পাঁচ দিনের জন্য আবু তাহের, অর্পিতা ঘোষ, সান্তনু সেন, প্রসূন ব্যানার্জি সহ ৯ জন সাংসদের ফাইভ স্টার হোটেলে থাকা, খাওয়া, ঘোরা । মলয় ঘটক গেছেন বার দুয়েক । তিন দিন করে ফাইভ স্টারে উঠেছেন । গ্ল্যাকসো বেবী ঋতব্রত ব্যানার্জি গেছেন বার দুয়েক । থেকেছেন অনেকদিন । আজ আবার গেলেন সুজাতা খাঁন, সঙ্গে নিয়ে গেলেন জয়া দত্তকে । এছাড়া ত্রিপুরায় ভাইপো বাহিনীর ৫ জনকে স্থায়ী ভাবে কলকাতা থেকে রেখে দেওয়া হয়েছে । যতবার যতজন মন্ত্রী, সাংসদ, নেতা গেছেন তাঁদের সঙ্গে রাজ্য পুলিশের সিকিওরিটি সঙ্গে গেছেন । ডায়মন্ডহারবার থেকে মাঝে মাঝেই লোক পাঠানো হচ্ছে মিছিলের বহর বাড়ানোর জন্য । সবটাই ফ্লাইটে ।
গত দু মাসে এই বিশাল বাহিনীর প্লেনে যাওয়া, আসা, ঘোরা, খাওয়া থাকা এবং প্রায় সবটাই ফাইভ স্টার ব্যবস্থায় খরচ কত হতে পারে ? ত্রিপুরার এক দীর্ঘদিনের সাংবাদিক ( এখন অবসরপ্রাপ্ত ) হিসেব কষে বলছিলেন নট লেস দ্যান ৩৫ থেকে ৪০ কোটি । বেশীও হতে পারে ।
প্রশ্ন এখানেই, টাকাটা আসছে কোথা থেকে ? কে দিচ্ছে ? উত্তর খুঁজতে খুঁজতেই চোখে পড়ল আজকের গণশক্তির একটা রিপোর্ট । পড়ে দেখুন –
” কয়লা পাচার কাণ্ডে অভিষেক ব্যানার্জির ঘনিষ্ঠ তৃণমূল যুব নেতা বিনয় মিশ্রর আত্মীয় বাঁকুড়া থানার আই সি অজয় মিশ্রকে পাকড়াও করতেই সামনে আসে এক চাঞ্চল্যকর তথ্য । ১০৯ দিনে ১৬৮ কোটি টাকা । ইডির সূত্র বলছে তার সিংহ ভাগ টাকাই যুব তৃণমূলের রাজ্য সম্পাদক বিনয় মিশ্রর নির্দেশে হাওলার মাধ্যমে যায় ভাইপো সাংসদ অভিষেক ব্যানার্জির স্ত্রী ও শ্যালিকার একাউন্টে । এই বিপুল আর্থিক লেনদেন হয়েছে ২০২০ র মে থেকে সেপ্টেম্বর মাসের মধ্যে । এই লক ডাউন পর্বেই পাচার হয় ১০৯ দিনে ১৬৮ কোটি টাকা । অর্থাৎ প্রায় দৈনিক ১ কোটি ৫৪ লক্ষ টাকা । লালার হিসাব রক্ষক হিন্দ মোটরের বাসিন্দা পলাতক নীরজ সিংয়ের অফিস ও বাড়িতে তল্লাশি চালিয়ে হাতে এসেছে এই নথি । এই টাকার সিংহ ভাগই হাওয়ালার মাধ্যমে চলে যায় ব্যানার্জি পরিবারের সদস্যদের বিদেশের একাউন্টে । ভাইপোর স্ত্রীর থাইল্যান্ডের একাউন্টে এভাবেই টাকা ঢুকেছে দেদার ।”
নির্বাচনের আগে বারুইপুরের এক সভায় শুভেন্দু অধিকারী প্রকাশ্য সভায় দেখিয়েছিলেন এবং শুনিয়েছিলেন কাশিকর্ন ব্যাংকের কাহিনী । ব্যাংক ট্রান্সএকশনের রশিদের প্রতিলিপিও দেখিয়েছিলেন ক্যামেরার সামনে ।
এই প্রেক্ষিতে ত্রিপুরায় তাই টাকা লাগলে দেবে কে প্রশ্ন করাটা বোধহয় নিরর্থক । তাই আর প্রশ্ন করবওনা । করা উচিতও নয় । লাগলে টাকা দিচ্ছে “লালা সেন” এইটুকু মেনে নিয়েই এই আলোচনায় ইতি টানছি ।
যারা পাঠক, বাকিটা তাঁরা এবার conclusion ড্র করুন । খামোখা টাকার উৎস খুঁজে কেউ চাপ বাড়াবেন না । প্রশ্ন করে অহেতুক দুয়ারে যন্ত্রণাও কেউ টেনে আনবেন না ।
সন্ময় বন্দ্যোপাধ্যায় ( ৯৮৩০৪২৬০৭৮)