পিতার পদাঙ্ক অনুসরণ করে অনেক কাজ তিনি করে গিয়েছেন, যা অবিস্মরণীয় এবং স্বর্ণাক্ষরে লেখা থাকবে

কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ে মাত্র চার বছর তিনি উপাচার্য ছিলেন (১৯৩৪ – ১৯৩৮)। এই ক্ষুদ্র সময়ের মধ্যেই পিতার পদাঙ্ক অনুসরণ করে অনেক কাজ তিনি করে গিয়েছেন, যা অবিস্মরণীয় এবং স্বর্ণাক্ষরে লেখা থাকবে।

তিনি যে কাজগুলো করেছিলেন, সেগুলো হল:-
১. মাতৃভাষার মাধ্যমে শিক্ষাদান এবং পরীক্ষা গ্রহণ।
২. বাঙ্গালা বানান সঙ্গবদ্ধকরণ প্রক্রিয়া।
৩. নতুন নতুন বিভাগ ও পাঠ্যক্রম চালু করা, বিজ্ঞানের বিভাগগুলি বিশেষভাবে তাৎপর্যপূর্ণ।
৪. বৈজ্ঞানিক শব্দের বাঙ্গালা পরিভাষা রচনা সংকলন।
৫. পাঠক্রমে সামরিক শিক্ষার সূত্রপাত।
৬. প্রাচীন সভ্যতা-সংস্কৃতির নিদর্শন সংরক্ষণ, চর্চা এবং গবেষণার জন্য আশুতোষ মিউজিয়াম প্রতিষ্ঠা।
৭. ইসলামিক ইতিহাস ও কৃষ্টির অধ্যায়নের জন্য নতুন “ইসলামিক স্টাডিজ” বিভাগের সৃষ্টি।
৮. চিনা ও তিব্বতীয় শিক্ষা বিভাগের প্রতিষ্ঠা।
৯. ম্যাট্রিকুলেশন পরীক্ষায় বয়সের বাধা প্রত্যাহার।
১০. বাঙ্গালা ভাষায় প্রথম পিএইচডি গবেষণা করার অনুমতি প্রদান।
১১. ছাত্রদের খেলাধুলা ও ব্যায়াম চর্চার জন্য ঢাকুরিয়া লেকে ইউনিভার্সিটি রোয়িং ক্লাব স্থাপন।
১২. বিশ্ববিদ্যালয়ের আলাদা খেলার মাঠের ব্যবস্থা।
১৩. স্টুডেন্ট ওয়েলফেয়ার বোর্ড গঠন।
১৪. কৃষি বিদ্যার পড়াশুনা চালু করা।
১৫. শিক্ষক প্রশিক্ষণ বিভাগ চালু করা।

এই সবকটি কাজই এই চার বছর অর্থাৎ ১৯৩৪ থেকে ১৯৩৮-এর মধ্যবর্তীকালীন সময়ে কমিউনিস্টদের দ্বারা আখ্যায়িত “বাঙ্গালার সর্বকালের সেরা সাম্প্রদায়িক নেতা” করে গিয়েছিলেন।

তিনি তাঁর রাজনৈতিক জীবন থেকে শুরু করে শিক্ষা ও সামাজিক জীবনে কতটা দূরদর্শী ছিলেন, সেটার প্রমাণ ছত্রে-ছত্রে পাওয়া যায়। সেটারই সাক্ষ্য বহনকারী আরও একটি চিঠির প্রতিলিপি দেওয়া হলো, পড়ে দেখুন।


THE UNIVERSITY COLLEGE AND SCIENCE
Department of Chemistry,
92, Upper Circular Road,
Calcutta, 6.2.1935
My dear Shymaprasad

আমি College of Science-এ প্রধানত Inorganic Chemistry-র অনুশীলন করি। এই বিভাগে প্রিয়দারঞ্জন ও পুলিনবিহারী Lecturer। আমাদের বিভাগেও এবং Organic Chemistry বিভাগেও measurment of crystals অনেক সময় অত্যাবশ্যক। কিন্তু দুঃখের বিষয় একটি Goniometer-এর অভাবে কোন কাজ সম্ভব নহে। Presidency College-তে ওই Apparatues নাই। আমি এখন Geological Dept. হইতে মাঝে মাঝে crystals measurment করাইয়া লইতেছি। কিন্তু তাহাদের এই প্রকারে পুনঃপুনঃ বিরক্তিতে লজ্জা বোধ হয়। বিশেষত Geological Dept.-এর Mr.Wadia বৎসরের ছয় মাসের অধিক Tour-এ থাকেন। যাহা হউক এত বড় College of Science-এ যাহা half a crore represent করে তাহাতে একটি Goniometer-এর অভাবে আমি শেষ জীবনের কার্যের অসুবিধা ও অসম্পূর্ণতা ভোগ করিব ইহা উচিত হয় না। University-র সাধারণ কাজে তুমি দেখিতেছি “বাপকা বেটা” হইয়াছ। কেননা এত অক্লান্ত পরিশ্রম ও স্বার্থ ত্যাগ করিতে কেউই রাজি নয়। কী প্রকারে কোন্ fund হইতে টাকা আসিবে আমি বুঝিটুঝি না। যেমন করিয়া হউক আশা করি টাকা জোগাড় করিয়া দিবে। আমি তারযোগে Apparatus order দিতে চাই। অধিক আর কী লিখিব।

Yours sincerely
P C Ray

(তথ্যসূত্র:- শ্যামাপ্রসাদ মুখোপাধ্যায়
লেখক:- অচিন্ত্য কুমার মুখোপাধ্যায়
চিঠির অংশ:- পৃষ্ঠা সংখ্যাঃ ৪৭- ৪৮)


সত্যি কি সাম্প্রদায়িক ছিলেন সেই ব্যক্তিটি, তাই!!!

আজ সেই “সাম্প্রদায়িক ব্যক্তি”, যিনি না থাকলে এই বাঙ্গালাতেও আজ পাকিস্তানের পতাকা উড়তো, সেই ডঃ শ্যামাপ্রসাদ মুখার্জীর ১১৯ তম জন্মদিন।

সমস্ত বঙ্গবাসীর পক্ষ থেকে রইলো তাঁর প্রতি গভীর শ্রদ্ধাঞ্জলি।

পরিমল দাশগুপ্ত

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.