দেশে অর্থনৈতিক মন্দার পরিবেশ যে গাঢ় হচ্ছে তা আর অস্বীকার করার উপায়ও নেই মোদী সরকারের। কারণ ইতিমধ্যেই অর্থনীতিবিদরা থেকে শিল্প-বাণিজ্য মহল, এমনকি নীতি আয়োগের পক্ষ থেকেও মন্দা পরিস্থিতির কথা বলা হচ্ছে। পরিস্থিতি বিচার করে অর্থমন্ত্রী নির্মলা সীতারামন একগুচ্ছ ঘোষণা করেছেন। গত জুলাইতে বাজেটে থাকা প্রস্তাব থেকে একগুচ্ছ কর প্রত্যাহার করে নেওয়া হয়েছে৷ পাশাপাশি রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংকগুলির জন্য ৭০ হাজার কোটি টাকার মূলধন দেওয়ার কথাও বলা হয়েছে৷
প্রস্তাবিত বাজেটে অর্থমন্ত্রী বিপুল মুনাফার ক্ষেত্রে আয়করে বাড়তি সারচার্জ ঘোষণা করেছিলেন। সেক্ষেত্রে ২-৫কোটি আয়ের জন্য ২৫শতাংশ, তার উপরে হলে ৩৭শতাংশ সারচার্জ বলা হয়েছিল। কিন্তু এই বর্ধিত সারচার্জ প্রত্যাহার করা হয়েছে। বিদেশি পোর্টফোলিও বিনিয়োগকারীদের (এফপিআই) ক্ষেত্রেও এই হার কার্যকর হচ্ছিল। তাদের তরফে অসন্তোষ প্রকাশ করা হচ্ছিল। সাংবাদিক বৈঠকে অর্থমন্ত্রী জানান, এফপিআই’র বর্ধিত সারচার্জ প্রত্যাহার করা হলো, বা অন্য ভাবে বললে প্রাক-বাজেট পরিস্থিতি ফিরে এল। শুধু বিদেশিদের জন্যই নয়, দেশি-বিদেশি উভয়েরই জন্য এই সারচার্জ তুলে নেওয়া হয়েছে। ইকুইটি শেয়ারের হস্তান্তর থেকে স্বল্পমেয়াদী এবং দীর্ঘমেয়াদী মূলধনী লভ্যাংশের ওপরে বর্ধিত সারচার্জও প্রত্যাহৃত হলো। আর এই সব ঘোষণার ফলে ফের বিনিয়োগ উৎসাহিত হবে বলে আশা প্রকাশ করেন তিনি।
এছাড়া অর্থমন্ত্রী স্টার্ট আপ সংস্থাগুলির জন্য করফাঁকি নিরোধক ধারাও তুলে নেন ফলে আর ‘অ্যাঞ্জেল ট্যাক্স’ নামে অর্থনীতি মহলে পরিচিত ধারাটি বাণিজ্য মন্ত্রকে নথিভুক্ত স্টার্ট আপ সংস্থার ক্ষেত্রে এখন আর প্রযোজ্য হবে না। পাশাপাশি পুঁজি ও বৃহৎ বাণিজ্যকে আরও কিছু সুবিধা দিয়েছেন নির্মলা। কর্পোরেট সোশ্যাল রেসপন্সিবিলিটির ধারায় সামাজিক দায়বদ্ধতায় লগ্নির ধারাকে ফৌজদারির বদলে দেওয়ানি ধারায় নিয়ে আসা হচ্ছে। আয়করে ‘হয়রানি’ কমাতে হবে বলে প্রতিশ্রুতিও দেন৷
বর্তমান পরিস্থিতিতে ঋণের যোগান ঠিক করতে নির্মলা রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংক ৭০ হাজার কোটি টাকা মূলধন জোগানের কথা ঘোষণা করেছেন। সরকারের আশা, এর ফলে ঋণ পাওয়া এবং নগদের জোগান বাড়বে। নন ব্যাংকিং আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলিকে আধার-সংযুক্ত কেওয়াইসি’র মাধ্যমে ঋণ দেওয়ার কথা ঘোষণা করা হয়েছে।
বর্তমানে বিশেষত আবাসন ক্ষেত্রে সঙ্কট দেখা দিয়েছে৷ অর্থমন্ত্রী এবার আবাসনের ক্ষেত্রে ন্যাশনাল হাউসিং ব্যাংক থেকে অতিরিক্ত ২০ হাজার কোটি টাকা দেওয়ার কথা ঘোষণা করেছেন। এখান থেকে ঋণ পাবে গৃহঋণের সংস্থাগুলি। পাশপাশি ক্ষুদ্র ও মাঝারি উদ্যোগে নগদের টান থাকায় ৩০ দিনের মধ্যে সকলের পণ্য পরিষেবা করে প্রাপ্য ফেরত দেওয়া হবে বলে অর্থমন্ত্রী জানিয়েছেন। এতদিন আবেদন করার ৬০ দিনের মধ্যে এই টাকা ফেরত পাওয়া যাবে।
অন্যদিকে সরকারের পক্ষ থেকে নতুন গাড়ি কেনায় যে নিষেধাজ্ঞা ছিল, তা তুলে নেওয়া হচ্ছে। ফলে সরকার কিছু গাড়ি কিনবে। তাছাড়া নতুন গাড়ি কেনা বাড়াতে ২০২০’র ৩১ মার্চ পর্যন্ত গাড়ির অবচয় অতিরিক্ত ১৫ শতাংশ বাড়িয়ে দেওয়া হয়েছে। যাতে তা এবার হল ৩০ শতাংশ। সমস্ত চালু গাড়ির ক্ষেত্রেই তা কার্যকর হওয়ায় গাড়ি শিল্পে কৃত্রিম চাহিদা তৈরির জন্যই হবে বলে সরকারের আশা৷