পদ্মার ভাঙন তো ছিলই। সঙ্গে কয়েকদিনের টানা বৃষ্টিতে বাঁধ ভেঙে গঙ্গার জল ঢুকে প্লাবিত জেলার বিভিন্ন এলাকা। শয়ে শয়ে বাড়ি জলমগ্ন। দুপুরের পর থেকে পরিস্থিতি জটিল হয়েছে ফারাক্কার হোসেনপুর, সামসেরগঞ্জের কামালপুর, চাঁদপুর, এবং ভগবানগোলা ও লালগোলার বিস্তীর্ণ এলাকায়। বিপদ সীমার উপরে জল উঠে যাওয়ায় জেলার সঙ্গে যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন ঝাড়খণ্ডের।
সংযোগ রক্ষাকারী পাকুড়-ধুলিয়ান রোডের ৭০-৮০ মিটার ভেঙে গিয়ে গভীর খাতের সৃষ্টি হয়েছে। খবর পেয়ে জেলাশাসক জগদীশ প্রসাদ মিনার নির্দেশে পদস্থ কর্তারা ঘটনাস্থলে যান। ওই রাস্তায় ভারী যান চলাচল বন্ধ রাখা হয়েছে। পুলিশ কর্তারা জানান, বড় ধরনের কোনও বিপদ যাতে না ঘটে তারজন্য নজরদারি চলছে।
অন্যদিকে ভগবানগোলার হনুমন্তনগর গ্রাম পঞ্চায়েত, আখেরিগঞ্জ গ্রাম পঞ্চায়েতের বেশ কয়েকটি গ্রাম জলমগ্ন। জলবন্দি সেলিম শেখ, বাপন শেখ ও সাইরা বিবিরা বলেন, ‘‘পদ্মা যে ভাবে ফুঁসছে তাতে যে কোনও মুহূর্তে গিলে খাবে এই এলাকা।’’ সেচ দফতরের মহকুমা বাস্তুকার প্রসেনজিৎ কুন্ডু বলেন, “ইতিমধ্যে আমরা সাড়ে তিনশো মিটার এলাকার জন্য একটি পরিকল্পনা নিয়েছি। আমরা নিয়মিত ওই এলাকায় যাচ্ছি এবং মানুষকে অযথা আতঙ্কিত না হওয়ার পরামর্শ দিচ্ছি। ভাঙন ভয়াবহ আকার নেওয়ার আগে কী করা যায় তা নিয়েও চিন্তাভাবনা করা হচ্ছে।’’
পদ্মানদী রানিতলার সীমান্তবর্তী এলাকা দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। খামখেয়ালি পদ্মা নিয়ম করে কখনও ভগবানগোলা ১ ব্লক, কখনও ২ ব্লক কে গ্রাস করছে। ফলে কয়েক বছরে দুই ব্লকের মানচিত্রে বড় ধরনের পরিবর্তন এসেছে। পদ্মার ভাঙনের কবলে পড়ে বহু পরিবার ভিটেমাটি হারিয়েছেন। কেউ আবার ফসলি জমি হারিয়ে সব খুইয়েছেন। তাই ভাঙন দেখা দিতেই ফের আতঙ্ক দেখা দিয়েছে হনুমন্তনগর গ্রাম পঞ্চায়েতের একাধিক গ্রামে। স্থানীয় বাসিন্দাদের দাবি, বাঁধ তৈরিকে ঘিরে দুর্নীতি চলছে। তারই মাসুল গুনতে হচ্ছে তাঁদের।
চরবিনপাড়ার লহরামারিতে যে ভাবে ভাঙন চলছে, তাতে যে কোনও সময় স্থানীয় সীমান্ত রক্ষী বাহিনীর চৌকিও তলিয়ে যেতে পারে বলে আশঙ্কা দেখা দিয়েছে। বিকেলের পর থেকে আখেরিগঞ্জ গ্রাম পঞ্চায়েতের মহিষমারি, পাইকমারি, ঘোষপাড়ার বেশ কয়েকটি গ্রাম জলমগ্ন হয়ে পড়েছে। পঞ্চায়েত সমিতির সভাপতি বুলুয়ারা বিবি বলেন, “দেরি হলেও আমরা ত্রাণ নিয়ে এলাকার মানুষের কাছে পৌঁছে গিয়েছি। জলবন্দি মানুষকে নিরাপদ আশ্রয়ে নিয়ে আসার কাজ শুরু করেছি।”