শুক্রবার বাজেট পেশ, নির্মলার সামনে পাঁচটি বড় চ্যালেঞ্জ

শুক্রবার ইতিহাস গড়তে চলেছেন অর্থমন্ত্রী নির্মলা সীতারমন। স্বাধীন ভারতের ইতিহাসে এই প্রথম কোনও মহিলা অর্থমন্ত্রী পূর্ণাঙ্গ বাজেট পেশ করবেন। অর্থনীতিতে স্নাতকোত্তর ডিগ্রি পাওয়া নির্মলা এম ফিল করেছিলেন জেএনইউ থেকে। দ্বিতীয়বার জিতে আসার পরে সবাইকে চমকে দিয়েই তাঁকে অর্থমন্ত্রী করেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। আগে শোনা যাচ্ছিল পীযূষ গয়াল অথবা অমিত শাহকে অর্থমন্ত্রকের দায়িত্ব দেওয়া হবে। অর্থমন্ত্রকের দায়িত্ব নিয়েই প্রথমে বিরাট কয়েকটি চ্যালেঞ্জের মুখে পড়েছেন। বাজেটে তিনি কীভাবে সেই চ্যালেঞ্জের মোকাবিলা করেন, সেদিকে নজর রেখেছেন পর্যবেক্ষকরা।

অর্থনীতিবিদের মতে, মোট পাঁচটি চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করতে হবে নির্মলাকে।

প্রথমত, অর্থনীতি যাতে দ্রুত বিকশিত হয়, সেজন্য উদ্যোগ নিতে হবে।

কিছুদিন আগেও ভারতের অর্থনীতি ছিল বিশ্বে সবচেয়ে দ্রুত বিকাশশীল। এখন ভারতের চেয়েও দ্রুত বিকশিত হচ্ছে চিনের অর্থনীতি। জানুয়ারি থেকে মার্চ পর্যন্ত ত্রৈমাসিকে চিনের অর্থনীতি বিকশিত হয়েছে ৬.৪ শতাংশ হারে। একই সময় ভারতের অর্থনীতির বিকাশ হয়েছিল ৬ থেকে ৬.৩ শতাংশ হারে।

আর্থিক বছরের চতুর্থ ত্রৈমাসিকে অর্থনীতির বিকাশ ধীর হওয়ার কারণ মূলত তিনটি। প্রথমত দেশে বিভিন্ন পণ্যের চাহিদা হ্রাস পেয়েছে। সরকার নানা খাতে ব্যয় করেছে কম। বেসরকারি বিনিয়োগও কমেছে।

এর ফলে গাড়ির বিক্রি কমেছে। রেলের মাশুল কমেছে। পেট্রোলজাত পণ্যের ব্যবহার, দেশের অভ্যন্তরে বিমানে যাত্রী পরিবহণ এবং কম দামি পাথরের আমদানি কমেছে। যাত্রীবাহী গাড়ির বিক্রি এখন পাঁচ বছরের মধ্যে সবচেয়ে কম হারে বাড়ছে।

অর্থমন্ত্রী দেশের অর্থনীতির বিকাশের গতি বৃদ্ধি করার জন্য দু’টি পদক্ষেপ করতে পারেন। প্রথমত, সরকারের ব্যয় বাড়ানোর চেষ্টা করবেন। দ্বিতীয়ত আয়করে ছাড় দেবেন। তাহলে নানা পণ্যের চাহিদা বৃদ্ধি পাবে। তবে আন্তর্জাতিক অর্থনীতিতে এখন মন্দা চলছে। ফলে দেশের অর্থনীতিতে তেজি ভাব ফিরিয়ে আনা সহজ হবে না নির্মলার পক্ষে।

অর্থমন্ত্রী যদি সরকারি ব্যয় বাড়াতে চান, তাহলে তাঁর সামনে বাধা হয়ে দাঁড়াবে রাজকোষ ঘাটতি।

রাজকোষ ঘাটতি কমানো সরকারের সামনে দ্বিতীয় চ্যালেঞ্জ।

২০১৮-১৯ সালের আর্থিক বছরে রাজকোষ ঘাটতি হয়েছে মোট বাজেটের ৩.৪ শতাংশ। রাজস্ব সংগ্রহেও লক্ষ্যমাত্রা পূরণ করা যায়নি। এর ওপরে যদি নির্মলা সরকারের ব্যয় বাড়াতে চান, তাহলে রাজকোষ ঘাটতি আরও বাড়বে। তার ফলে মুদ্রাস্ফীতি হওয়াও অসম্ভব নয়।

পর্যবেক্ষকদের মতে, রাজকোষ ঘাটতি কমাতে সরকার ব্যাপকভাবে বিলগ্নিকরণের পথে হাঁটতে পারে। ২০১৮-১৯ সালে ৮০ হাজার কোটি টাকার বিলগ্নিকরণের লক্ষ্যমাত্রা ছিল। প্রাক্তন অর্থমন্ত্রী অরুণ জেটলি টুইট করে জানিয়েছেন, লক্ষ্যমাত্রা ছাড়িয়ে গিয়েছে। মোট ৮৫ হাজার কোটি টাকার বিলগ্নিকরণ করা হয়েছে।

নির্মলার সামনে তিন নম্বর চ্যালেঞ্জ জিএসটি-র সরলীকরণ করা।

এর আগে মোদী সরকারের বিরুদ্ধে সমালোচনা করে অনেকে বলেন, তাড়াহুড়ো করে গুডস অ্যান্ড সার্ভিসেস ট্যাক্স চালু করা হয়েছে। তাতে করের অনেকগুলি ধাপ রয়েছে। পুরো ব্যাপারটা হয়ে উঠেছে জটিল। তাতে সমস্যায় পড়েছেন ছোট ব্যবসায়ীরা। নতুন অর্থমন্ত্রী সম্ভবত জিএসটি ফিলিং-এর পদ্ধতি সরল করবেন। বিজেপির নির্বাচনী ইস্তেহারেও সেই প্রতিশ্রুতি দেওয়া হয়েছে।

চতুর্থ চ্যালেঞ্জ হল কর্মসংস্থান।

ভোটের ফলপ্রকাশের পরেই সরকার জানায়, গত ৪৫ বছরের তুলনায় এখন বেকারত্ব সবচেয়ে বেশি। যথেষ্ট সংখ্যায় কর্মসংস্থান করতে না পারার জন্য মোদী সরকারকে বহুবার সমালোচনার মুখে পড়তে হয়েছে। নির্মলা এবারের বাজেটে কর্মসংস্থানের ওপরে জোর দেবেন বলে আশা করা হচ্ছে। যদিও গত শুক্রবার সেন্ট্রাল স্ট্যাটিসটিকস অফিস জানিয়েছে, ২০১৮-১৯-এর আর্থিক বছরে সংগঠিত ক্ষেত্রে ১ কোটি ৩৭ হাজার চাকরি সৃষ্টি হয়েছে।

দুর্বল রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাঙ্কগুলিকে চাঙা করে তোলা পঞ্চম চ্যালেঞ্জ।

দেশের সবগুলি ব্যাঙ্কে যত সম্পদ আছে, তার তিন চতুর্থাংশ আছে রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাঙ্কগুলিতে। তাদের অনাদায়ী ঋণের পরিমাণ বিপুল। এর ফলে তারা আগের মতো ঋণ দিতে পারছে না। পুঁজিতেও টান পড়েছে। তাদের চাঙা করে তোলার জন্য সম্ভবত বাজেটে কয়েকটি প্রস্তাব করবেন অর্থমন্ত্রী।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.